খামখেয়ালিপনা, বেপরোয়া, বিতর্কিত, উদ্ভট আচরণ, নারী কেলেঙ্কারি- এতগুলো নেতিবাচকতা নিয়ে বিশ্বনেতাদের একটি তালিকা হলে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থাকবেন প্রথম দিকে। ক্ষমতার শুরুর দিকেই ট্রাম্প বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি আর দশ-পাঁচটা প্রেসিডেন্টের মতো নয়। মিত্রদের চাওয়া-পাওয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি বেছে নিয়েছিলেন ‘একলা চলো নীতি’; যার মূলমন্ত্র ছিল ‘আমেরিকা শ্রেষ্ঠ’। ক্ষমতার মেয়াদের শেষ পর্যন্ত তিনি এসব নীতিতে অনড় ছিলেন। আজ তার বিদায় হচ্ছে। একই সঙ্গে বিদায় হচ্ছে মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে ‘নিন্দিত’ প্রেসিডেন্টের।
বিদায় নেওয়ার আগে নাগরিকদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা যা করতে চেয়েছি, তা করেছি। কিন্তু আরও কিছু করার ছিল।’
হোয়াইট হাউস থেকে স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে; ট্রাম্প বলছেন, ‘কঠিন লড়াই, এটা শক্ত একটা লড়াই ছিল, কারণ এতে করেই আপনারা আমাকে নির্বাচিত করেছিলেন।’
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত বছর নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে হারের ফলাফল ট্রাম্প পুরোপুরি গ্রহণ করেননি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুই সপ্তাহ আগে ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিল ভবনে যে দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে বিক্ষোভকারীরা নির্বাচনের ফলাফলকে উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। ঘটনাটিকে ‘রাজনৈতিক সহিংসতা’ বলে মন্তবও করেছে ট্রাম্প। ইউটিউবের ওই ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘একজন আমেরিকান হিসেবে ওই রাজনৈতিক সহিংসতাকে আমরা কখনও মেনে নিতে পারি না। এটি কখনই সহ্য করা যায় না।’
নিজের ভাষণে তার প্রশাসন ‘বিশ্বের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্থনীতি গড়ে তুলেছে বলেও দাবি করেন ট্রাম্প। তবে, বাকী অর্থনীতি বেশ লড়াইয়ের মুখোমুখি হচ্ছে। বেকারত্ব বাড়ছে। এর মধ্যে করোনাভাইরা মহামারি থেকে দেশটির স্টক মার্কেটগুলো প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের এজেন্ডা ডান বা বাম সম্পর্কে ছিল না, এটি রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাটকে নিয়ে ছিল না। তবে, এটা পুরো দেশের মঙ্গলের জন্য ছিল। অর্থাৎ এটা পুরো জাতির জন্য ছিল।’
বিবিসির আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিদায়ের আগে অনাড়ম্বরপূর্ণ একটি অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তা হচ্ছে না। অবশ্য, তাকে বিদায় জানাতে আজ বুধবার সকালে মেরিল্যান্ডের একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার অনুষ্ঠানে সামরিক কুচকাওয়াজ, সশস্ত্র বাহিনীর নানা আয়োজন, সমর্থকদের বিশাল জমায়েত, প্রশাসনের বর্তমান ও সাবেক কর্মীদের উপস্থিতির পাশাপাশি লালগালিচা সংবর্ধনা চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনিই মার্কিন ইতিহাসে একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যিনি দুবার অভিশংসিত হওয়া ট্রাম্পের জন্য তেমন আয়োজন থাকছে না।
মেরিল্যান্ডের সামরিক বিমানঘাঁটিতে যে অনুষ্ঠান করা হবে, তা সকাল ৮টায় আয়োজন করেছে হোয়াইট হাউস। ট্রাম্পকে শেষবারের মতো এয়ারফোর্স ওয়ানের উড়োজাহাজ হোয়াইট হাউস থেকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে সেই ঘাঁটিতে। ইতিমধ্যে সেই বিদায়ী অনুষ্ঠানের জন্য অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণপত্রে অতিথিদের আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক, লেজার পয়েন্টার বা খেলনা পিস্তলের মতো কোনো জিনিস সঙ্গে নিতে নিষেধ করা হয়েছে। তাকে ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে সম্মান জানানো হতে পারে।
বিদায় অনুষ্ঠান শেষে ট্রাম্প ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের পাম বিচে যাবেন। সেখানে তার মার-এ-লাগো রিসোর্টে থাকবেন তিনি।
Leave a Reply