রাত তখন প্রায় সাড়ে ১১টা। হঠাৎ নবজাতক শিশুর চিৎকার। কিছুক্ষণ থেমে থেমে খাল পাড় থেকে ভেসে আসতে থাকে নবজাতকের কান্নার শব্দ। খালের পাশেই ওসমান নামে এক ব্যক্তির বাড়ি। বাড়িতে তখন চলছিল শীতকালীন পিঠা তৈরীর কাজ। নবজাতকের কান্নার শব্দ পেয়েই থমকে যান পিঠা তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকা ওসমানের মা-স্ত্রীসহ অন্যরা। ওই বাড়িতে রাত ১টা পর্যন্ত পিঠা তৈরির কাজে ব্যস্ত ছিলেন তারা। খালপাড় থেকে ভেসে আসা শিশু কান্নার শব্দকে ‘অন্য কিছু’ ভেবে কিছুটা ভীতি তৈরি হয় তাদের মনে।
পিঠা তৈরির কাজ শেষে করে ঘুমাতে যাওয়ার সময়ও একইভাবে শুনতে পান কান্নার আওয়াজ। রাত ২টার পর শিশুটির কান্না থামে। ঘুমিয়ে পড়েন যে যার মতো। কিন্তু কৌতুহল কাটেনি ওসমানের মা মনোয়ারা বেগমের (৬০)।
কোনো রকম রাত কাটিয়ে ভোরে ফজরের নামাজের পরপর মনোয়ারা বেগম ছুটে যান খাল পাড়ে। কিছুটা হাঁটার পরই দেখেন শুকনো খালের এক পাশে কাঁদামাখা অবস্থায় পড়ে আছে ফুটফুটে এক ছেলে নবজাতক শিশু। পরে খাল থেকে ওই নবজাতকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন বাড়িতে। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার নবজাতককে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা শেষে নিয়ে যান নিজ ঘরে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বাড়েরা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। উপজেলার বাড়েরা গ্রামের বাড়েরা দক্ষিণ বাজার ব্রীজ সংলগ্ন খাল থেকে ওই নবজাতককে উদ্ধার করা হয়।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বাড়েরা গ্রামের বাসিন্দা ওসমানের মা মনোয়ারা বেগম জানান, মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টা থেকে আমরা হঠাৎ খাল পাড় থেকে শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই। এতো রাতে খালপাড় থেকে শিশুর কান্নার আওয়াজ পেয়ে ‘অন্য কিছু’ ভেবে সারারাত প্রচন্ড ভয়ও পেয়েছি। পরে বুধবার ভোরে আমি শিশুটিকে উদ্ধার করি।
উপজেলার বাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য শাহিন আলম জানান, বুধবার সকালে ঘটনাটি শোনার পর ওসমানদের বাড়িতে যাই। পরে সেখান থেকে উদ্ধারকৃত নবজাতককে দ্রুত চান্দিনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে শিশুর চিকিৎসা শেষে পরে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবগত করে শিশুটিকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাই। বর্তমানে আমার স্ত্রী ফাতেমা বেগম ওই নবজাতককে মাতৃস্নেহ দিয়ে আগলে রেখেছেন।
উপজেলার বাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: খোরশেদ আলম জানান, কোনো এক পাষন্ড নারী ওই নবজাতক ভূমিষ্ট হওয়ার পর রাতের অন্ধকারে খালে ফেলে দেয়। প্রচন্ড শীতে সারারাত শিশুটি খালে পড়ে থাকায় একপর্যায়ে তার কান্না থেমে যায়। শিশুটিকে উদ্ধার করে মেম্বারের বাড়িতে রাখা হয়েছে। এলাকায় কোন পরিবারে এমন ঘটনা ঘটেছে তা আমরা খুঁজে দেখার চেষ্টা করছি।
চান্দিনা থানার ওসি মো: আবুল ফয়সল জানান, বিষয়টি আমরা জেনেছি। ধারণা করা হচ্ছে কোনো নারী তার অপকর্ম ধামাচাপা দিতেই এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) স্নেহাশীষ দাশ জানান, বিষয়টি আমি জানতাম না। এখন যেহেতু জেনেছি; খোঁজ-খবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
Leave a Reply