চীনের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯০ জনে। আতঙ্কে দেশটিতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে পুরো বিশ্ব। এতে করে চীন অনেকটা একঘরে হয়ে গেছে।
যে ভাইরাসের কারণে মহামারির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটির এখনো কোনো যথাযথ নাম নেই।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, এটিকে করোনাভাইরাস বলে উল্লেখ করা হলেও এটি আসলে ওই ভাইরাসের নাম নয়। ভাইরাসের যে গ্রুপ বা দলে এটির অবস্থান, সেটির নাম করোনাভাইরাস।
এটির সাময়িক একটা নামও দেওয়া হয়েছিল ২০১৯-এনকভ হিসেবে। কিন্তু বলার ক্ষেত্রে এটা খুব একটা সহজ নয়।
একদল বিজ্ঞানী এই ভাইরাসটির একটি উপযুক্ত নাম ঠিক করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। এখন তারা জানিয়েছেন, তারা খুব শিগগিরই নাম ঘোষণা করতে যাচ্ছে।
এত সময় লাগল কেন?
জনস হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির সহকারী অধ্যাপক এবং জ্যেষ্ঠ স্কলার ক্রিস্টাল ওয়াটসন বলেন, ‘নতুন কোনো ভাইরাসের নামকরণ সাধারণত কিছুটা দেরিতে হয় এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর এটি কী ধরনের প্রভাব ফেলে, তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, যা যুক্তিসম্মত।
নতুন এই ভাইরাসকে চিহ্নিত করতে বিজ্ঞানীরা একে নোভেল বা নতুন করোনাভাইরাস নামে ডাকছেন। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে দেখলে মুকুটের মতো স্পাইক বা কাটা থাকে বলে এদের করোনাভাইরাস নামকরণ করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) একে প্রাথমিকভাবে ‘২০১৯-এনকভ’ নামে ডাকার সুপারিশ করেছে। ‘২০১৯-এনকভ’ মানে বুঝানো হয়েছে, এটি কোন সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল অর্থাৎ ২০১৯ এবং ‘এন’ দিয়ে নোভেল বা নিউ বা নতুন বোঝায়। আর ‘কভ’ দিয়ে করোনাভাইরাস বোঝায়। তবে এটাই চূড়ান্ত নয়।
‘বর্তমানে এটির যে নাম আছে, তা ব্যবহার সহজ নয়। জনগণ এবং মিডিয়া এর অন্য নাম ব্যবহার করছে’, বলেন ডা. ওয়াটসন।
এই চিকিৎসক বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক নাম না থাকার সমস্যা হচ্ছে মানুষ এটাকে চায়না ভাইরাস বলে ডাকতে শুরু করে। আর এটা নির্দিষ্ট জনগণের জন্য নেতিবাচক হতে পারে।’
জরুরি ভিত্তিতে ভাইরাসটির আনুষ্ঠানিক নামকরণ করার দায়িত্ব ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন ট্যাক্সোনমি অব ভাইরাসেস (আইসিটিভি) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের।
এর আগের প্রাদুর্ভাবটি এই দলটির জন্য সতর্কতামূলক উদাহরণ ছিল। ২০০৯ সালে এইচওয়ানএনওয়ান ভাইরাসের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সোয়াইন ফ্লু’। এর কারণে মিশর তাদের সব শুকর মেরে ফেলেছিল, যদিও ভাইরাসটি শুকরের মাধ্যমে নয় বরং মানুষের মাধ্যমে ছড়ায়।
আনুষ্ঠানিক নাম অনেক সময় সমস্যাও তৈরি করে। ২০১৫ সালে মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামেরও সমালোচনা করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘আমরা দেখেছি যে, কিছু কিছু রোগের নামে নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের বা নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের জন্য নেতিবাচকতা উসকে দেয়, যার কারণে ভ্রমণ, ব্যবসা-বাণিজ্যে অন্যায় আচরণের মুখে পড়ে তারা। আর অনেক সময় পশু-পাখিদের হত্যাও করা হয়।’
এসব বিষয় মাথায় রেখে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এই নীতিমালা অনুযায়ী, নতুন করোনাভাইরাসের নামকরণের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় থাকা উচিত নয়, সেগুলো হচ্ছে :
এতে বলা হয় যে, নামটি হবে ছোট কিন্তু বর্ণনামূলক-যেমন সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম)
কিন্তু নামটি নির্ধারণের জন্য একটি সম্পর্ক বা হুকও দরকার বলে মনে করেন বেঞ্জামিন নিউম্যান, যিনি ভাইরোলজির একজন অধ্যাপক। আইসিটিভির ১০ সদস্যের গবেষক দলের মধ্যেও তিনি একজন, যারা নাম ঠিক করার দায়িত্বে রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এএন্ডএম ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নিউম্যান বলেন, দুই সপ্তাহ আগে এই দলটি নাম নির্ধারণের জন্য আলোচনা শুরু করে এবং দুই দিনের আলোচনার পর তারা একটি নামের বিষয়ে নিয়ে একমতে পৌঁছান।
তারা এখন নামটি প্রকাশের জন্য একটি বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নালে জমা দিচ্ছেন। আশা করা হচ্ছে যে, কয়েক দিনের মধ্যেই এটি ঘোষণা করা হবে।
জনগণের বোঝাপড়া ছাড়াও আইসিটিভি আশা করছে যে, এটির প্রতিষেধক আবিষ্কারের গবেষণায় এটি গবেষকদের সময় বাঁচাবে এবং ঝামেলা কমাবে।
অধ্যাপক নিউম্যান বলেন, ‘আমার মতো কারও ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাইরাসের নামকরণে সহায়তা করতে পারাটা দীর্ঘস্থায়ী এবং পুরো কর্মজীবনের কাজের চেয়ে অনেক বেশি সহায়ক। এটা খুব বড় একটা দায়িত্ব।’
Leave a Reply