দেশে করোনায় মারা যাওয়ার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায় ঢাকার পরের অবস্থান চট্টগ্রামের। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে চট্টগ্রামও। চট্টগ্রাম বিভাগে এ পর্যন্ত মারা গেছেন এক হাজার ৩৭৯ জন, যা শতকরা হিসাবে ১৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। করোনায় মৃত্যুর দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও মানুষের মধ্যে নেই কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানার গরজ। ফলে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে চট্টগ্রাম। চিকিৎসকরা বলছেন, শীতের প্রকোপের সঙ্গে চট্টগ্রামে বাড়ছে করোনা রোগীও। প্রতিদিনই জ্বর, সর্দি-কাশিসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে মানুষ পরীক্ষা করাতে ভিড় করছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত রবিবারের পরিসংখ্যানে দেখা যায় বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যার হিসাবে ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ৪ হাজার ৪৪ জন। এরপরের অবস্থানেই রয়েছে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম বিভাগে এ পর্যন্ত মারা গেছেন এক হাজার ৩৭৯ জন, যা শতকরা হিসাবে ১৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
চট্টগ্রামের পরের অবস্থানে রয়েছে খুলনা বিভাগ। সেখানে মারা গেছেন ৫২২ জন। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৪৩১, রংপুরে ৩৩৩, সিলেটে ২৯০, বরিশালে ২৩৬ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১৬৩ জন মারা গেছেন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে বর্তমানে সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ১২৫, বেসরকারি হাসপাতালে ১৫৮ ও আইসিইউতে ৪৩ করোনা রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চট্টগ্রামে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ৩১-৪০ বছর বয়সীরা, প্রায় ২৫ শতাংশ। আর ২১-৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে সংক্রমণ ২১ শতাংশ।
দেশে সংক্রমণের শুরুর দিকে ধীরগতি থাকলেও মে মাসের মাঝামাঝিতে দ্রুত ছড়াতে থাকে ও জুনে তীব্র আকার ধারণ করে। আগস্টের মাঝামাঝি সংক্রমণ কমতে শুরু করলেও নভেম্বরের শুরু থেকে আবার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা দেয়। সংক্রমণ ঠেকাতে বিনোদনকেন্দ্র, সভা-সমাবেশ ও কমিউনিটি সেন্টার সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপে। কারণ সামাজিক দূরত্ব কার্যকর করা না গেলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আবদুর রব বলেন, হাসপাতালে জ্বর ও অন্যান্য ফ্লোতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আর এসব হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে। তরুণরা উপসর্গ না থাকায় আক্রান্ত হলেও তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ফলে অজান্তেই অন্যকে সংক্রমিত করছেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত সংখ্যা নগরীতে। কারণ নগরীর মানুষ স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করে না। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বিনোদনকেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার ও বিপণিবিতানে ভিড় করছেন। ফলে সংক্রমণের হার আরও ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। প্রাণহানিও বাড়ছে।
চট্টগ্রামের জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আমাদের সময়কে বলেন, অভিযান, জরিমানার পরও মানুষের মাঝে করোনার ভয়বহতা দেখা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই বাড়ছে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। আমরা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে বৈঠক করে নগরীর বিনোদনকেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার ও বিভিন্ন সভা-সমাবেশ বন্ধ ঘোষণার পরামর্শ দিয়েছি। এসব ছাড়া সংক্রমণ কমানো সম্ভব হবে না।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তার বলেন, করোনা সংক্রমণ থেকে মানুষকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে প্রশাসন। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে যতটা কঠোর হওয়া যায়, আমরা ততটাই কঠোর হচ্ছি। আগামীতে আরও কঠোর হবে প্রশাসন। এরপরও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীন। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- ও জরিমানা করা হয়েছে ৩ হাজার ৭৭৬ জনকে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিম্নবিত্তদের মাঝে ফ্রিতে বিতরণ করা হয়েছে মাস্ক।
Leave a Reply