করোনা ভাইরাসে পোশাক খাতের সংকটময় সময়ে সরকার সবচেয়ে বেশি সুবিধা দিয়েছে। এ খাতের উদ্যোক্তারা নামমাত্র সুদে ঋণ পেয়েছেন। পোশাক খাতের মালিকরা অবশ্য আরও ঋণ চেয়েছিলেন। সরকার তাতে সায় দেয়নি। ঋণের শর্ত ছিল দুই বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। পোশাক মালিকরা বর্তমানে দুই বছরের জায়গায় ৫ বছর সময় চান। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা গেছে, প্রণোদনা ঋণের সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা পরিশোধে সময় চান পোশাক মালিকরা। শুধু তাই নয়, ৫ বছরে ৬০ কিস্তিতে এই অর্থ পরিশোধের জন্য তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এ আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধও করা হয়।
বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আমাদের সময়কে বলেন, যৌক্তিক কারণেই প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে নেওয়া ঋণ দুই বছরের বদলে পাঁচ বছরে শোধ দিতে চাই। এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড ও চার বছরে শোধ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া না হলে অধিকাংশ ব্যবসায়ী খেলাপি হয়ে পড়বেন। তিনি বলেন, যেসব কারখানা রুগ্ন বা বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের পক্ষে টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, প্রণোদনা গ্রহণের ৬ মাস পর ১৮ কিস্তিতে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু এখনো করোনা শেষ হয়ে যায়নি। এখন দ্বিতীয় ওয়েভ শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় মালিকরা অর্থ ফেরত দেওয়ার অবস্থানে নেই। ছোট-মাঝারি কারখানা মালিকদের পক্ষে টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। সরকার আমাদের সহযোগিতা করেছে। আমরা যৌক্তিক পর্যায়ে টাকা ফেরতের সুযোগ চাই। তা না হলে ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে। এ জন্যই আবেদন করেছি। ইতোমধ্যে তৈরি পোশাকের মূল্য ১০-১৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন খরচ কমেনি।
করোনা পরিস্থিতিতে দেশের প্রধান রপ্তানিমুখী খাত তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন ও রপ্তানি অব্যাহত রাখতে সচল কারখানাগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ তহবিল ঘোষণা করে সরকার। এ ঘোষণার আলোকে ২ এপ্রিল একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সার্কুলার অনুযায়ী, এ খাতে প্রদত্ত প্রণোদনা ঋণের গ্রেস পিরিয়ড হচ্ছে ছয় মাস এবং দুই বছরে ১৮টি কিস্তিতে এ ঋণ পরিশোধ করার কথা। এই অর্থ দিয়ে এপ্রিল-মে-জুন মাসের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হয়। এরপর বিজিএমইএর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই মাসের বেতনও ঋণ হিসেবে প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে দেওয়া হয়। এ অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে ক্রেতাদের তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল, স্থগিত ও নির্দিষ্ট সময়ে পেমেন্ট না-পাওয়া ইত্যাদি কারণে প্রণোদনা ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ করা সম্ভব হবে না বলে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। একই সাথে প্রণোদনা ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ছয় মাসের পরিবর্তে এক বছর নির্ধারণ এবং দুই বছরে ১৮টি কিস্তির পরিবর্তে পাঁচ বছরে ৬০টি কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের সুযোগ প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছে বিজিএমইএ।
বিজিএমইএর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে তৈরি পোশাক মালিকদের এ প্রস্তাব মেনে নেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে করোনার কারণে সংকটে পড়া এ খাতকে বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকে এপ্রিল, মে ও জুন মাসের শ্রমিকদের বেতন বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এ ঋণের সার্ভিস চার্জ ছিল মাত্র ২ শতাংশ। কিন্তু গার্মেন্ট খাতের শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন দেওয়ার জন্য এ অর্থ পর্যাপ্ত না থাকায় আরও আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রদান করা হয়। এরপর বিজিএমএইর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই মাসেরও বেতন প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে দেওয়া হয়। তবে এ ঋণের সার্ভিস চার্জ ছিল ৪ শতাংশ।
Leave a Reply