‘হয় তারা আমাকে গুলি করে মারবে, না হয় আসামিকে ধরবে। আসামি না ধরা পর্যন্ত আমি সরবো না।’ সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে আমরণ অনশনে বসে রায়হানের মা সালমা বেগম এ কথা জানান। এ সময় তিনি প্রশ্ন রাখেন- ‘এসআই আকবর কোথায়? আমার ছেলে কবরে আর আকবর বাইরে এটা হতে পারে না। আকবর পুলিশের কাছে রয়েছে বলে সন্দেহ করেন সালমা বেগম।’ সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নেহারীপাড়ার যুবক রায়হানকে পিটিয়ে হত্যার দুই সপ্তাহ সময় চলে গেছে । এই সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়নি প্রধান সন্দেহভাজন আসামি এসআই আকবর হোসেন ভুইয়া। সে গ্রেপ্তার না হওয়ার কারণে সিলেটে ক্ষোভ কমছে না। আকবর গ্রেপ্তার না হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে রায়হানের পরিবার। তাদের সন্দেহ- পলাতক থেকে আকবর আবার তাদের ক্ষতি করতে পারে।
ফের রিমান্ডে টিটু: সিলেটে রায়হান হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া বরখাস্ত হওয়া কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে আবারো ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পিবিআই। ৫ দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল বিকালে তাকে সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমানের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর মুহিদুল ইসলাম আদালতে টিটুর আরো ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত টিটুর ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর টিটুকে ফের পিবিআইয়ের হেফাজতে নেয়া হয়। এ মামলায় আরেক পুলিশ সদস্য হারুনুর রশীদ ৫ দিনের রিমান্ডে পিবিআইয়ের কাছে রয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান- আদালতে ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে ৩ দিনের দেয়া হয়। এখন তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
মুখ খোলেনি টিটু : পিবিআই হেফাজতে ৫ দিনের রিমান্ডে ছিল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্ত হওয়া কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস। কিন্তু রিমান্ডে সে রায়হান খুনের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেনি। বরং সে পুরো ঘটনার জন্য এসআই আকবরকে দায়ী করে। নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার না করায় গতকাল সিলেটের আদালতে হাজির করে তাকে আবারো রিমান্ডে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর মুহিদুল ইসলাম। তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন- প্রথম পর্যায়ের রিমান্ডে টিটুর কাছ থেকে কিছু তথ্য মিলেছে। এগুলো যাচাই-বাচাই করা হচ্ছে। তবে- তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি সে এড়াতে চাইছে। এ কারণেই তাকে আবার রিমান্ডে আনা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে- রায়হান খুনের ঘটনার দিন বন্দরবাজার ফাঁড়িতে দায়িত্বে থাকা কনস্টেবল শামীম সহ তিন পুলিশ সদস্য আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে। এসব সাক্ষ্যতে তারা ঘটনার নির্মমতা তুলে ধরেছে। তারা জানিয়েছে- ফাঁড়িতে রায়হানকে মূল নির্যাতনকারী ছিল এসআই আকবর হোসেন ভুইয়া। সে দফায় দফায় রায়হানকে নির্যাতন চালিয়েছে। তার দুই সহযোগী হিসাবে ছিল কনস্টেবল টিটু ও হারুনুর রশীদ। টিটু ও হারুন নিহত রায়হানের পা উচিয়ে ধরেছে। আর পায়ে নির্যাতন করেছে আকবর। এমনকি পায়ের নখ উপড়ে ফেলার ঘটনায়ও টিটু ও হারুন সম্পৃক্ত। কিন্তু রিমান্ডে টিটু এসব ঘটনা স্বীকার করেনি। সে নিজেকে রক্ষা করতে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছে পিবিআইকে।
এসআই আকবরকে গ্রেপ্তার করতে হবে- মেয়র আরিফ: পুণ্যভূমি সিলেটে আকবরকে গ্রেপ্তার করতে হবে। প্রশাসন থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে আকবরকে গ্রেপ্তার করা হবে। সিলেটের মানুষ রায়হানের মায়ের এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্ম। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ, রায়হানের হত্যাকারীদের বিচার করতে হবে। আমি যা বলেছি তার সঙ্গে সবাই একমত। সমগ্র সিলেটবাসী রায়হানের মায়ের সঙ্গে রয়েছে। আমরা আর কোনো রায়হানের মায়ের কোল খালি হতে দেবো না। কাজেই দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী রায়হানের খুনিদের আইনের আওতায় আনতেই হবে। আমি বলে দিয়েছি- আপনারা যত দ্রুত সম্ভব আকবর সহ সবাইকে গ্রেপ্তার করুন। নতুবা সিলেটের মানুষ রাস্তায় নামলে এ দায় প্রশাসনকে নিতে হবে। এ সময় মেয়রের সঙ্গে কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন। সিলেটে রায়হানের মায়ের অনশনস্থলে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
মেয়রের আশ্বাসে অনশন স্থগিত: বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে দিনভর অনশন করার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন রায়হানের মা সালমা বেগম। বিকাল ৫টার দিকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গিয়ে তাকে শান্তনা জানান। প্রয়োজনে মেয়র নিজেই এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন বলে ঘোষণা দিয়ে রায়হানের মাকে চিকিৎসা গ্রহণের অনুরোধ জানান। এ সময় মেয়রের কথায় কান্নায় ভেঙে পড়েন রায়হানের মা। জানান- ‘আমার ছেলে কবরে, আমি কীভাবে বাসায় থাকবো। খুনিরা গ্রেপ্তার না হলে শান্তি পাবো না।’ আরিফুল হক চৌধুরী এ সময় অভয় দিয়ে রায়হানের মাকে জুস পান করান। রায়হানের মা জুস খেয়ে অনশন ভাঙেন। তাকে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দেন। রায়হানের স্বজনরা জানান- মেয়রের অনুরোধে আপাতত আমরা অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেছি। খুনিরা গ্রেপ্তার না হলে আবারো অনশন কর্মসূচি শুরু করা হবে বলে জানান তারা।
Leave a Reply