লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনায় ট্রেন মিস করা সেই কিশোরীকে (১৫) গণধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি নুরু মিয়াকে (৪০) নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাতে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরজু মো. সাজ্জাত এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে দুপুরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে নুরু মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকতৃ নুরু মিয়া কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের তালুক বানিনগর এলাকার মজিবর রহমান মজির ছেলে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা এলাকার এক কিশোরী গত ৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় লালমনিরহাটগামী আন্তঃনগর করতোয়া এক্সপ্রেস ট্রেনে কাউনিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। ট্রেন কালীগঞ্জের কাকিনা স্টেশনে দাঁড়ালে ওই কিশোরী নাস্তা করতে নামে।
সে সময় রকি (২২) নামে পরিচয় দিয়ে অটোরিকশার চালক কিশোরীর কাছে জানতে চান সে কোথায় যাচ্ছে। তখন মেয়েটি তাকে কাউনিয়া যাচ্ছে বলে জানায়। রকিও নিজেকে কাউনিয়ার বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন। এরই মধ্যে ট্রেন স্টেশন ছেড়ে গেলে রকি অটোরিকশায় করে কাউনিয়া যাবেন এবং সেই অটোরিকশায় মেয়েটিকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক রকি ওই কিশোরীকে নিয়ে কাউনিয়া যাওয়ার কথা বলে নিজের অটোরিকশায় বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মধ্য রাতে একটি সেচ পাম্পের নির্জন ঘরে নিয়ে যান। সেখানে রকি ও তার তিন বন্ধু মিলে কিশোরীকে গণধর্ষণ করেন। বিষয়টি দেখে ফেলে অপর একটি গ্রুপের তিন যুবকও কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরদিন ৭ অক্টোবর সকালে মুখ না খোলার শর্তে কিশোরীকে মুক্তি দেন বখাটেরা।
পরে অসুস্থ অবস্থায় কিশোরী পথ ভুলে চলার পথে স্থানীয়রা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মেয়েটি তাদের কাছে বিষয়টি খুলে বলে। তারপর স্থানীয়দের সহায়তায় এক গ্রাম পুলিশ সদস্যের বাড়িতে আশ্রয় নেয় মেয়েটি। ৮ অক্টোবর রাতে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মাতব্বররা বৈঠকে বসে ধর্ষণকারী যুবকদের শনাক্ত করে মোটা অংকের টাকা জরিমানা আদায় করেন। তবে কিশোরীর অভিযোগ, টাকাগুলো তাকে না দিয়ে নিজেদের পকেটেই রাখেন মাতব্বররা।
জরিমানার টাকা কিশোরীকে না দিয়ে উল্টো তাকে হুমকি দিয়ে পথ খরচ দুই হাজার টাকা দিয়ে মাতব্বররা তাকে পাঠিয়ে দেন বলেও অভিযোগ করে মেয়েটি। পরে ০৯ অক্টোবর দুপুরে স্থানীয়দের মাধ্যমে কিশোরী কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবে আশ্রয় নেয়। প্রেসক্লাবে লোমহর্ষক ঘটনার এ বর্ণনা শুনে সাংবাদিকরা থানায় জানায়। এর পরপরই কিশোরীকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নেয় কালীগঞ্জ থানা পুলিশ এবং পরে মেয়েটির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত করে ওইদিন রাতে মূলহোতা অটোচালক রকিকে আটক করে।
রকির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই কিশোরী বাদী হয়ে সাতজন ধর্ষক, ইউপি সদস্যসহ ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এর পরেই বাকি আসামিরা গা ঢাকা দেয়।
গোপন খবরের ভিত্তিতে কালীগঞ্জ থানার একটি দল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সহায়তায় এ মামলার প্রধান আসামি নুরু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তারকারী টিম কালীগঞ্জ থানায় পৌঁছায়। এ নিয়ে আলোচিত এ মামলায় এজাহার নামীয় ১০ আসামির মধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরজু মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মূলহোতা রকির পরে গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি নুরুকে ফতুল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।’
Leave a Reply