1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন

মাঠে ঠকছেন কৃষক বাজারে ভোক্তা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২০

করোনাকালে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় মাছ-মাংস কেনার সামর্থ্য নেই অনেকেরই। তাই সবজিতে ভরসা ছিল বেশিরভাগ পরিবারের। এখন সে সবজির দামই ভোগাচ্ছে তাদের। একে একে ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে গেছে সব তরিতরকারির দাম। বাজারে ৫০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি। ৭০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। গত দুই মাস ধরে রাজধানীর বাজারে দামের উত্তাপ বইছে। তবে বেশ কিছুদিন ধরে তা অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। গরিবের খাবার আলুর দাম সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙেছে। সবজির অস্বাভাবিক দাম ভোগাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তসহ সব শ্রেণির ভোক্তাকে। সবজির এমন দামে ভোক্তা যেমন ঠকছেন, তেমনি ঠকছেন কৃষকও। তবে পোয়া বারো মধ্যস্বত্বভোগীদের।

রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি বাজার এবং বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কৃষকের কাছ থেকে হাতবদলে ভোক্তার কাছে সবজি পৌঁছতে দাম কয়েকগুণ বাড়ে। হাতবদলের এই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি ঠকছেন কৃষক। মাঠ থেকে কম দামে সবজি কিনে খুচরা বাজারে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করা হচ্ছে। সেই দামেই সবজি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ভোক্তাও।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান আমাদের সময়কে বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা থাকার কারণে মধ্যস্বত্বভোগীরা অতিমুনাফা লুটছে। মাঠে কৃষক থেকে বাজারে ভোক্তা উভয় ঠকছেন। হাতবদলের সংখ্যা কমাতে হবে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল খুচরা বাজার অথবা ভোক্তার কাছে সরাসরি বিক্রি করতে পারলে মধ্যস্বত্বভোগীরা অতিমুনাফা করতে পারত না। এ ছাড়া কৃষকপর্যায় থেকে পাইকারি ও খুচরা বাজারে সরকারের মনিটরিং বাড়ানোর পাশাপাশি পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা আরও সহজতর ও সহজলভ্য করার তাগিদ দেন তিনি।

মালিবাগ বাজারে সবজি ক্রেতা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আবু বকর বলেন, ‘বাজারভরা সবজি, শীতের আগাম সবজিও বেড়েছে। অথচ দোকানিরা বলছে সবজির সরবরাহ নাকি কম, তাই দামও বেশি। আসলে বেশি লাভের আশায় বন্যা-বৃষ্টির অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন তারা। আর পকেট কাটছেন আমাদের। ’

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরেও দেখা গেছে, সব সবজির দামই চড়া। শতকের ঘর ছুঁয়েছে শিম, বেগুন, পাকা টমেটো, গাজর ও কাঁচামরিচের দাম। এদিকে চলতি সপ্তাহে দাম বেড়েছে শসা, পটোল, করলা, ঢেঁড়স, ঝিঙা, কাঁকরোলেরও। এ ছাড়া আগের মতো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে অন্য সবজি। বাজারে ৫০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে কেবল মুলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং পেঁপে ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি।

বিভিন্ন জেলার সবজি ব্যাপারীরা জানান, যে সময় ফলন ওঠার কথা সেই সময় এসব অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে সবজির ক্ষেতের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। যার প্রভাব দামেও পড়েছে। কিন্তু কৃষকরা বলছেন, মাঠে সবজির দাম কমলেও বাজারে বাড়ছে অনেক বেশি। বৃষ্টিতে ফলন কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে রয়েছেন কৃষকরা।

উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সবজির মোকাম বগুড়ার মহাস্থান হাট। গত বৃহস্পতিবার শিবগঞ্জ উপজেলা রায়নগর ইউনিয়নের অনন্তবালা গ্রামের সবজিচাষি মান্নান মিয়া এ হাটে আড়াই মণ (১০০ কেজি) বেগুন বিক্রি করেছেন। প্রতিমণের দাম ছিল ২২শ টাকা। প্রতিকেজি বেগুনের দাম পড়েছে ৫৫ টাকা। সেই বেগুন হাতবদল হয়ে বগুড়ার শহরের ফতেহ আলী বাজারেই বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৭০ টাকা দরে। আবার একই বেগুন রাজধানীর খুচরা বাজারে এসে বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ শিবগঞ্জ থেকে রাজধানীর খুচরা বাজারে পৌঁছাতে মানভেদে ২৫ থেকে ৪৫ টাকা বেড়ে যাচ্ছে।

সবজিচাষি মান্নান মিয়া বলেন, ‘বৃষ্টিতে এবার সবজি নষ্ট হওয়ায় কৃষকপর্যায়ে দাম সামান্য বেড়েছে। কিন্তু খুচরাপর্যায়ে যে দাম বেড়েছে তা অস্বাভাবিক। আমাদের উৎপাদিত সবজির দাম যদি ৫ টাকা বাড়ে তা খুচরা বাজারে গিয়ে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। এ লাভের টাকা পুরোটা চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে।’

বগুড়া সদরের পীরগাছা গ্রামের কৃষক জাকিরুল ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার হাটে ৩ মণ করলা বিক্রি করেছি ২ হাজার ৬শ টাকা মণ দরে। যার প্রতি কেজির দাম পড়েছে প্রায় ৬৫ টাকা। অথচ ফড়িয়া ও ব্যাপারীরা এ করলা ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করছেন বেশি দামে। দাম হয়ে যাচ্ছে ৮০-৯০ টাকা কেজি।

কৃষকদের কাছ থেকে কিনে মহাস্থান হাটের আড়তে নিয়মিত সবজি বিক্রি করেন শিবগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কৃষ্ণপুর গ্রামের ফড়িয়া ব্যবসায়ী নূর আলম। কৃষকের অভিযোগ মানতে নারাজ তিনি। নূর বলেন, আড়তে বিক্রি করে খুব সামান্যই লাভ হয় তাদের। গত বৃহস্পতিবারও তারা ৫ জন মিলে গড়ে ৪০ মণ সবজি কিনেছেন। আড়তে তা বিক্রি করে ৫ হাজার টাকাও মুনাফা করতে পারিনি।

পাবনা শহর ও বিভিন্ন হাটের চিত্রও একই। গত বৃহস্পতিবার কৃষকরা পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন প্রতিকেজি পেঁপে ১৫ থেকে ২০ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৫০, বেগুন ৫৫, মুলা ২০ থেকে ২২, বরবটি ৫৫ থেকে ৬০, শিম ৫০ থেকে ৬০, করলা ৪০ থেকে ৫০, ঝিঙা ২৫ এবং কাঁকরোল ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। অথচ রাজধানীর পাইকারি বাজারে গতকাল শুক্রবার প্রতিকেজি শিম ১০০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৯০ , পেঁপে ৩০ থেকে ৩২, পটোল ৫৫ থেকে ৫৬, বরবটি ৬০ থেকে ৬৫, করলা ৬৫ থেকে ৭০, ঝিঙা ৬০ থেকে ৬২ এবং কাঁকরোল ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়।

গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি শিম বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০, পটোল ৬০ থেকে ৭০, মুলা প্রতিকেজি ৪০ থেকে ৫০, বরবটি ৮০ থেকে ৯০, ঝিঙা ৭০ এবং কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।

যশোরের দেশের সবজির অন্যতম বৃহৎ বাজার সাতমাইল হাট। গত বৃহস্পতিবার এই হাটে পাইকারিতে বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হয়েছে ঢাকার পাইকারির প্রায় অর্ধেক দামে। এদিন পাইকারি দরে প্রতিকেজি শিম ৪৫ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ৪৫ থেকে ৫০, পেঁপে ২০, পটোল ৪০ থেকে ৪৫, বরবটি ৪০ থেকে ৪৫, করলা ৫০ থেকে ৫৫, টমেটো ৫০, মুলা ২৫, কাঁচামরিচ ১৫০ এবং লাউ মানভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়।

যশোর সদরের চূড়ামনকাঠি গ্রামের সবজিচাষি আজিজুল জানান, প্রতিদিন শহরের ব্যাপারীরা এখানকার ক্ষেত থেকে ১ হাজার ৫শ থেকে শুরু করে ১ হাজার ৮শ টাকা মণ দরে শিম কিনে নিয়ে যায় শহরে। এতে প্রতিকেজির দাম পড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আমরা চাইলেও এর চেয়ে বেশি দাম পাই না। অথচ যশোর শহরের সবজির বাজারেই প্রতিকেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে।

দাম বাড়ার পেছনে কারও কারসাজি নেই বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাপারী, আড়তদার ও পাইকাররা। তাদের মতে, সবজি কাঁচা পণ্য হওয়ায় মজুদ করা সম্ভব নয়। তবে কৃষকের কাছ থেকে খুচরা বাজারে পৌঁছাতে কয়েক হাত বদল হওয়ায় দাম বেড়ে যায়। মূলত বৃষ্টি-বন্যায় এবার সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে বলে দাবি তাদের।

রাজধানীর কারওয়ানবাজারের সবজি সরবরাহকারী পাইকারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিয়াদ এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার বলরামচন্দ্র দাস বলেন, বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় সবজি আনতে আগে ট্রাক ভাড়া লাগত ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা, কিন্তু এখন ভাড়া নিচ্ছে প্রায় ২০ হাজার এ ছাড়া শ্রমিক খরচসহ বিভিন্ন খরচ রয়েছে। তার ওপর সবজি আনার পথে বিপুল পরিমাণ সবজি নষ্ট হয়। সব মিলিয়ে সবজির দাম বাড়লেও খুব বেশি লাভ করতে পারছি না আমরা।

বগুড়ার মহাস্থান হাটের ইজারাদার শফিকুল ইসলাম শফি জানান, স্বাভাবিক সময়ে যেখানে প্রতিদিন মহাস্থান বাজার থেকে অর্ধশতাধিক ট্রাকভর্তি সবজি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হতো। কয়েক দফা বন্যার পর এখন সেখানে সর্বোচ্চ ১০ ট্রাক সবজি সরবরাহ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত হাটের সবজির আড়তদার করিম হোসেন জানান, ‘বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সবজি আমদানি না হওয়ায় বাড়তি দামে সবজি ক্রয় করতে হচ্ছে। ফলে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

অথচ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, এবার খরিফ মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৯শ হেক্টর জমি। সেখানে এবার ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অন্তত ১০২ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি গড় ফলন আশা করা হচ্ছে ১৬ মে. টন। সুতরাং বৃষ্টিপাত হলেও সরবরাহ ঘাটতি তীব্র হওয়ার কথা নয়।

অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক ড. আলহাজ উদ্দিন আহাম্মেদ আমাদের সময়কে জানান, খরিফ মৌসুমে যদিও সবজি উৎপাদন কম হয়, তার ওপর বৃষ্টিপাত হলে উৎপাদন আরও কমে যায়। তারপরও বর্তমানে সবজির যে উৎপাদন রয়েছে তাতে বাজারের চাহিদার বিপরীতে সবজির ঘাটতি হওয়ার কথা নয়।

রাজধানীর বাজারদর

রাজধানীর বাজারে এখন প্রতিকেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়, বেগুন ৮০ থেকে ১০০, করলা ৮০ থেকে ৯০, বরবটি ৮০ থেকে ৯০, পাকা টমেটো ১০০ থেকে ১২০, গাজর ৮০ থেকে ১০০ এবং শসা ৭০ থেকে ৯০ টাকায়। এ সপ্তাহে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ঝিঙা ও কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ এবং পটোল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। লাউয়ের পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকা, শীতের আগাম সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। কাঁচাকলার হালি ৪০ থেকে ৫০ টাকা ছাড়াও মুলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কাঁচামরিচের কেজি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com