তিন মাসে বিদ্যুতের ভর্তুকি ব্যয় ২৩ শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। মে, জুন ও জুলাই- এই তিন মাসে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিউবি) ভর্তুকিবাবদ দুই হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থমন্ত্রণালয়। বেসরকারি বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে তা গ্রাহক পর্যায়ে কম দামে বিক্রি করার কারণে প্রতি বছর বিউবি হাজার হাজার কোটি গচ্চা দিচ্ছে।
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতি তিন মাস অন্তর বিউবি’র পক্ষ থেকে ভর্তুকি অর্থ চেয়ে আমাদের কাছে আবেদন করা হয়। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল এ দুই মাসে ভর্তুকিবাবদ আরো এক হাজার ১৪৩ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।
এর আগে বিউবি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে বিউবি’র লোকসান হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির কারণে লোকসান গুনতে হয়েছে ১১১ কোটি টাকা। চলতি বছরের তিন মাসে (মার্চ, এপ্রিল, মে) পিডিবির আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক হাজার ৯০০ কোটি টাকা। মূলত তিন খাত থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনার কারণে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবি) এই লোকসান হয়েছে।
এই তিন খাত হচ্ছে- আইপিপি (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট), ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির কারণে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আইপিপি খাত থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনায়। এ জন্য তিন মাসে পিডিবি’র লোকসান গুনতে হয়েছে এক হাজার ৩৭৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। একই সময়ে কুইক রেন্টাল থেকে বিদ্যুৎ কিনে লোকসান হয়েছে ৪১৪ কোটি টাকা। অন্য দিকে, তিন মাসে ভারত থেকে বিদ্যুৎ কেনায় লোকসান হয়েছে আরো ১১১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ফলে তিন মাসে লোকসান হয়েছে এক হাজার ৮৬০ কোটি চার লাখ টাকা।
বিউবি সূত্রে জানা গেছে, তিন মাসে বিদ্যুতের যে লোকসান হয়েছে তাতে মাসওয়ারি লোকসানের একটি খতিয়ান দেয়া হয়েছে। এতে দেখা যায়, মার্চ মাসে আইপিপি থেকে বিদ্যুৎ কেনায় লোকসান হয়েছে ৪৫৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা, ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনায় লোকসান ১৫২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে ক্ষতি হয়েছে ৪৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
একইভাবে এপ্রিল মাসে লোকসানের পরিমাণ এই তিন খাত থেকে যথাক্রমে ৪২৩ কোটি ৮৮ লাখ, ১৩৫ কোটি ৬৮ লাখ এবং ৩১ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং মে মাসে লোকসান হয়েছে যথাক্রমে ৫০১ কোটি ৪৩ লাখ, ১২৫ কোটি ৩২ লাখ এবং ৩১ কোটি টাকা।
বিদ্যুতের ব্যয় কারণ হিসেবে বিউবি’র ব্যাখ্যা হচ্ছে, বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় মূলত নির্ভর করে ব্যবহৃত জ্বালানি ব্যবহার, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন, স্থাপিত ক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি না পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে লোকসানও বাড়ছে।
বিউবি’র পক্ষ থেকে এই বিষয়ে বলা হয়, ‘আইপিপি এবং ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসহ ভারত হতে ক্রয়কৃত বিদ্যুতের দাবিকৃত বিল নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা থাকায় সরকারের আর্থিক সহায়তা পাবে বলে প্রতিষ্ঠানসমূহের দাবিকৃত বিল যথাসময়ে পরিশোধ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে।’
Leave a Reply