মেজর (অব) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে আইনি সহায়তা দিতে গত ২৭ আগস্ট কক্সবাজার যান পাঁচ আইনজীবীসহ ৭ জন। ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা কলতলী এলাকার ওয়েস্টার্ন হোটেলে অবস্থান করেন। ১৫ দিনের রিমান্ড শেষে আদালত ওই দিন প্রদীপকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে চট্টগ্রাম ফিরে আসেন তারা।
ঢাকার একজন ব্যারিস্টারসহ ৭ জনের থাকা-খাওয়া, আইনি লড়াই এবং বিভিন্ন বিষয়ে অন্তত ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারণের অবস্থান কোথায়, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। পরিবারের কোনো সদস্য প্রকাশ্যে তার পাশে আসছে না। এ ছাড়া গত ১৭ আগস্ট প্রদীপ ও তার স্ত্রীসহ ৮ জনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইউ)। তা হলে প্রদীপের মামলা পরিচালনায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের ভার কার হাতে, টাকার উৎস কী, কিংবা আইনজীবী নিয়োগসহ নানা বিষয় দেখভালের দায়িত্বে কে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তদন্ত করছে দুর্র্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে তাহের নামে প্রদীপের এক বন্ধুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, কক্সবাজারে আইনজীবীদের থাকা-খাওয়ার জন্য ওয়েস্টার্ন হোটেল বুকিং দিয়েছেন চট্টগ্রামের মধুবন প্যাকেজিং প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ তাহের। নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকায় থাকেন তিনি। প্রদীপের বাল্যবন্ধু তাহের নগরীর বাগমনিরাম স্কুলে একই সঙ্গে পড়ালেখা করেছেন।
পরিচিত হিসাবে নাম ব্যবহার করে হোটেল বুকিং দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছেন তাহের। তবে হোটেলে তাহেরের অফিসের ভিজিটিং কার্ড দেওয়া হয়েছে। তাহের আমাদের সময়কে বলেন, আমার নাম ব্যবহার করে হয়তো ই-মেইলে হোটেল বুকিং দেওয়া হয়েছে। আমি তো বুকিং দেইনি। প্রদীপের সম্বন্ধী এসব দেখাশোনা করছে বলে শুনেছি।
চাঞ্চল্যকর একটি মামলার আসামির আইনজীবীর জন্য আপনার নামে হোটেল বুকিং দিয়েছে সেটা কি জানতেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি পরে শুনেছি। প্রদীপের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, বাল্যকালের বন্ধু হিসেবে জানি। বাগমনিরাম স্কুলে আমার এক বছরের সিনিয়র ছিল প্রদীপ। গত সপ্তাহে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার লোকজন তার বাসায় এসে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছে বলেও জানান তাহের।
সূত্র জানায়, বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ পদে চাকরি করেন তাহের। বন্ধু প্রদীপের আইনি সহায়তাসহ বিভিন্ন কাজে তিনি কেন জড়ালেন, প্রদীপের অবৈধ আয়ের টাকা কি সেই বন্ধুর কাছেও রয়েছে? সেসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা চলছে। কারণ প্রদীপ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার ও স্ত্রী চুমকি কারণের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তদন্ত শুরু করে দুদক। অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়ায় গত ২৩ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম ২-এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দীন। এ মামলায় ২৭ আগস্ট মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে প্রদীপ কুমার দাশকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন জমা দেওয়া হয়। শুনানি শেষে গতকাল সোমবার দুদকের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে প্রদীপকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনার নেতৃত্বে কক্সবাজারে ছয় দিন অবস্থান করেছেন অ্যাডভোকেট সাঈদ মাইনুল আহসান, অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট আলমগীর, অ্যাডভোকেট দীপংকর ধর, অ্যাডভোকেট আলমগীর ফারুক ও সৌমেন। অবশ্য চট্টগ্রাম আদালতে তারা কেউ যাননি। গতকাল প্রদীপের জামিন আবেদন করেন অ্যাডভোকেট সঁভুমিত্র। তার সঙ্গে একাধিক সহকারী আইনজীবী ছিলেন বলে জানিয়েছেন দুদকের পক্ষে সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক।
এদিকে ২৩ আগস্ট দুদক মামলা দায়েরের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারণ। তার (চুমকি) দেশ ত্যাগ ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে ৩১ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক।
Leave a Reply