দিনের বেলায় অতিতপ্ত, রাতে পুরো উল্টো, হিমশীতল। এমন গ্রহ শুক্র। ফলে ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধানের আলোচনায় এ গ্রহের নাম সেভাবে আসে না। কিন্তু আজ পৃথিবীব্যাপী সংবাদের শিরোনামে, বিশেষত জ্যোতির্বিজ্ঞান মহলে, শুক্রধ্বনিই শোনা যাচ্ছে। কারণ, ও গ্রহের মেঘে এমন এক গ্যাসের সন্ধান মিলেছে, যার সঙ্গে জীবনের একটা সম্পর্ক আছে।
প্রমাণ এখনও দুরবাপ, তবে এক আকাশ আশার সঞ্চার হয়েছে যে, সূর্যের এই দ্বিতীয় গ্রহে ভেসে বেড়াচ্ছে প্রাণ।শুক্রের পৃষ্ঠ থেকে ৫০ কিলোমিটার ওপর একটা গ্যাস শনাক্ত করেছেন একদল বিজ্ঞানী। গ্যাসটার নাম ফসফাইন। একটা ফসফরাম পরমাণু ও তিনটে হাইড্রোজেন পরমাণু মিলে এটা তৈরি। পৃথিবীতে এই গ্যাসের সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক রয়েছে। পেঙ্গুইনের দেহে অণুজীবের মধ্যে থাকে এই গ্যাস।
নাসার টেস অভিযান নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই লেখকের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘[নাসার] জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ২০২১ সালে উৎক্ষেপণ করা হবে। তখন [দূর মহাশূন্যের] বামন এম-নক্ষত্ররা টেলিস্কোপের চোখের আওতায় চলে আসবে। ফলে, আশা করছি, ২০২২ সালের পর ভিনগ্রহে জীবনচিহ্নের সন্ধান মেলা শুরু হবে।’কিন্তু এত্ত কাছে, এত্ত আগে মোটামুটি অনুনুকূল পরিবেশের একটা গ্রহে জীবনের স্বাক্ষর ধরা পড়বে, সিগারও কি তা ভাবতে পারেননি? হয়তো শিগগিরই তার কাছ থেকে শুনব সে কথা।কসমিক কালচারের সংগঠক ও বিজ্ঞানকর্মী যোয়েল কর্মকার গতরাতে টেলিফোনে এ লেখককে বলেন, ‘আমরা সব সময় দূরবর্তী অঞ্চলে, সৌরজগতে বাইরে পৃথিবীসদৃশ গ্রহে ও অনুকূল পরিবেশে বহির্জাগতিক প্রাণের অনুসন্ধান করে আসছি।
বেতার যোগাযোগে সক্ষমÑ এমন সভ্যতার কথা মাথায় নিয়ে বিজ্ঞানীরা বহির্জাগতিক প্রাণের অনুসন্ধান করেছেন। শুক্রে যে গ্যাস পাওয়া গেছে, এ থেকে একটা আশা জেগে উঠছে যে, আমাদের ধারণার বাইরে, হয়তো খুব সহজভাবেই, সহজ পরিবেশে, পৃথিবীসদৃশ নয় বা অনুকূল নয় এমন পরিবেশেও প্রাণের বিকাশ ঘটতে পারে। অন্তত এই অনুসন্ধানের কারণে, সৌরজগতের ভেতরেও প্রাণ বিকাশের সম্ভাবনাটা বেড়ে গেল, অনেকগুণে।’
তানভীন নাহার, পেশায় যিনি ব্যাংক কর্মকর্তা কিন্তু আগ্রহ জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক পাঠে, তিনি গতরাতে সামাজিক মাধ্যমে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘পৃথিবীর বাইরে অন্য গ্রহে প্রাণে ছিল বা আছে এটা নিয়ে কিছু শুনলেই বরাবরই অনেক আগ্রহের সৃষ্টি হয়। জীবনচিহ্নের যে বিষয়টা নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন গবেষণা করছেন সেটার ধাপ হিসেবে শুক্রে যে ফসফাইন গ্যাসের অস্তিত্ত্ব পাওয়া গেছে, সেটা অবশ্যই যুগান্তকারী ঘটনা।’সিগার ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন।
প্রবন্ধটির নির্বাচিত অংশ এ লেখকের ‘বিজ্ঞানের বিস্ময়কর গল্প’ গ্রন্থে অনুদিত হয়েছে। ওই প্রবন্ধে সিগার বলেন, ‘মানব ইতিহাসে মহাশূন্য অভিযাত্রার এক মহাসীমারেখায়, বলা চলে মহা-উšে§াচনের দারগোড়ায় এসে পৌঁছেছি আমরা।’
Leave a Reply