মেয়র নির্বাচিত হলে নিজেকে জনগণের খেদমতে উৎসর্গ করবেন বলে জানিয়েছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করেই ঢাকাবাসীর সেবা করতে চাই। সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন ইশরাক। তিনি বলেন, আমি ঢাকার সন্তান, এই শহরে আমার বেড়ে ওঠা, এই শহরের সমস্যাগুলো আমার জানা রয়েছে। যদি মহান আল্লাহর রহমতে মেয়র নির্বাচিত হই, তাহলে আমি এই নগরীকে বাসযোগ্য করে তোলার জন্য যা করণীয় সবই করব। নিজের জীবনকে জনগণের খেদমতে এবং নগরবাসীর উন্নয়নে উৎসর্গ করবো ইনশাআল্লাহ। আপনারা সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন। বয়সে নবীন, বয়স কম। কিন্তু দেশের জন্য, নগরের জন্য আমার কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। আগামী দিনগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যা আমি বুকে ধারণ করি, সেই কাজটা আমি করে যাবো। নির্বাচনের উনিশতম দিনে
সোমবার সকাল ১১টায় দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে আসেন ইশরাক হোসেন। পরে সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। এসময় ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, সহসভাপতি ওমর ফারুক, কোষাধ্যক্ষ শ্যামল দত্ত, যুগ্ম সম্পাদক শাহেদ চৌধুরী, মঈনুল আলম, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহনাজ বেগম উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুস শহীদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এসময় প্রেসক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি সৈয়দ আবদাল আহমেদ, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, সাবেক সেক্রেটারি মুহাম্মদ বাকের হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, নূরুউদ্দিন নুরু, কেএম মহসিন, লুৎফুর রহমান বেনু, কাজী রওনক হোসেন, বিএনপি নেতাদের মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, তৈমুর আলম খন্দকার, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, হারুনুর রশীদ, ওয়ারেশ আলী মামুন, রফিক সিকদার, খোরশেদ আলম, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই অভিযোগ তুলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই। গতকাল (রোববার) একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন যে, এই যে অভিযোগগুলো যাচ্ছে সেগুলো বিবেচনা দূরের কথা, আলোচনায় আসছে না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ঢাকাবাসীকে বলতে চাই- বিএনপি একটি মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক দল। আমরা ভোটের মাধ্যমে এ দেশের পরিবর্তন চাই, জনগণের মতামতকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। সেজন্য জনগণের মতামত যাতে প্রতিফলিত হয় সেজন্য নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরপেক্ষভাবে ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনটি অনুষ্ঠান করবে।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, প্রেসক্লাব একটি দল নিরপেক্ষ জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং এখানে সকল রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও নেতৃবৃন্দকে আমরা স্বাগত জানাই। সিটি নির্বাচনে প্রার্থীরা যেমনভাবে কষ্ট করছেন, তেমনি আমাদের রিপোর্টার, ফটোগ্রাফার পেছনে পেছনে ছুটে তাদের নির্বাচনী প্রচারনার সংবাদগুলো আমাদের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে প্রতিনিয়ত দিচ্ছে। আমাদের বক্তব্য হলো- একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মিডিয়া তার ভুমিকা পালন করবে। আশা করি, নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হবে এবং এর মধ্য দিয়ে নগরবাসী তাদের যোগ্য প্রার্থীদের বেছে নেবে।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে স্বাগত জানিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, আমরা মনে করি যে, এই মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব যে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পীঠস্থান, জাতীয় প্রেসক্লাব যে সবার সাথে চলার একটি আদর্শিক জায়গা সেটি ফের প্রমাণিত হলো। আমরা মনে করি সিটি নির্বাচনটি গুরুত্বপূর্ণ। আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো-এই যে স্লোগান, সেটি আমার মনে হয় গণতন্ত্রের সঙ্গে যায়। সাংবাদিক সমাজ সবসময় গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা ও প্রগতির সঙ্গে আছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষই বাংলাদেশের পতাকায় বিশ্বাস করে এবং আমরা ১৬ কোটি একসঙ্গে মিলে আগামী দিনে বিনির্মাণ করতে চাই। আমরা যে বাসযোগ্য নিরাপদ ঢাকার স্বপ্ন দেখছি, সেই স্বপ্ন পুরণের কান্ডারী যারা হবেন তাদেরকে ১ ফেব্রুয়ারি ভোটাররা বাছাই করে নেবেন।
নির্বাচনী প্রচারণা প্রসঙ্গে ইশরাক বলেন, আমরা গত ১৮দিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণা চালিয়ে আসছি। মেয়র প্রার্থী হিসেবে আমার প্রচারণা ভালোই চলছিল। বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা আমাকে বরণ করে নিয়েছেন ফুলের মালা দিয়ে এবং প্রচারণাকালে নৌকা প্রার্থীদের বিভিন্ন ক্যাম্প আমার সামনে পড়েছে আমি তাদের ক্যাম্পে ঢুকেছি, তাদের একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীর সাথে দেখা হয়েছে, আমি সালাম বিনিময় করেছি, কুশল বিনিময় করে দোয়া চেয়ে বেরিয়ে এসেছি। গত রোববার একটি অনাকাংখিত ঘটনা ঘটে। আমার প্রচারণা শেষে বাসায় ফেরার পথে আমাদের ৪১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর ক্যাম্পের সামনে দিয়ে আসার সময়ে অতর্কিতভাবে নির্মাণাধীন ভবনের দোতলা থেকে ইটপাটকেল এবং অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী রড নিক্ষেপ করা হয়। সেখানে তিনজন সাংবাদিকসহ আমাদের ১২জন আহত হয়। এর মধ্যে নয়া দিগন্তের একজন রিপোর্টার আছেন, সময় টিভির একজন ক্যামেরাম্যান যার ৮টা স্ট্রিচ লেগেছে মাথায় এবং বাংলা ভিশনের ক্যামেরাম্যান আহত হয়েছেন। আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনটা অনুষ্ঠিত হোক-সেটি চাই।
তিনি বলেন, যে আশঙ্কাটি আমরা করছিলাম রোববার রাতে হামলা ঘটনায় ওয়ারী থানায় আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে একটা মামলা করা হয় ৫০ জনসহ অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে। সকাল পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই- আমাদের প্রচারণা এবং নির্বাচনটা করার সমান সুযোগ দেয়া হোক। আমরা এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে এবং মামলার মধ্যে যাতে আমাদের মাঠ খালি করে দেয়ার যে একটা করা হয়েছিল জাতীয় নির্বাচনের আগে, সেই কাজটি যাতে না করা হয়-সেই আহবান জানাচ্ছি। ইভিএমে ভোট কারচুপির শঙ্কার কথাও বলেন ইশরাক হোসেন।
পরে জাতীয় প্রেসক্লাবের নিচতলায় ইশরাক দুই প্রধান দল সমর্থিত সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে যান এবং কুশল বিনিময় করেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইউনিয়ন কার্যালয়ে বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদ ও বিএনপি সমর্থিত কার্যালয়ে বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ তাকে স্বাগত জানান। জাতীয় প্রেসক্লাবের পর ইশরাক ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) ও বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে গিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। ডিআরইউর সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী এবং ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক কাজল হাজরা ইশরাককে স্বাগত জানান। এছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমসহ নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন তিনি। সেখান থেকে খিলগাঁও জোড় পুকুরপাড়, খিলগাঁও রেলগেট, বাসাবো, মুগদা, কমলাপুর, মতিঝিল হয়ে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দ্বিতীয় পথসভায় বক্তব্য রাখেন তিনি।
সোমবারের গণসংযোগে ব্যাপক লোকসমাগম হয়। সড়কের যতদূর চোখ গেছে শুধু মানুষ আর মানুষ। গানে গানে আর স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে রাজপথ। মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবেন ইশরাক হোসেন।
ইশরাকের মায়ের গণসংযোগ
এদিকে অবিভক্ত ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র মরহুম সাদেক হোসেন খোকার স্ত্রী ইসমত আরা খোকা রাজপথে নেমে মেয়রপ্রার্থী সন্তান ইশরাকের জন্য ভোট ও খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। আজ দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টন পলওয়েল সুপার মার্কেটে দোকানদারদের হাতে লিফলেট তুলে দিয়ে স্লোগান ধরে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন। ধানের শীষে দিলে ভোট, শান্তি পাবে দেশের লোক, মাগো তোমায় একটি ভোটে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে। এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসমত আরা বলেন, আমার ছেলে ইশরাক সুযোগ্য প্রার্থী। সে নির্বাচিত হলে আপনাদের সেবা করতে পারবেন। আপনারা সকাল সকাল ভোট দিতে যাবেন।
Leave a Reply