কর্মস্থলে প্রায় প্রতিটি নারীই কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন। সম্প্রতি প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ও গার্লস অ্যাডভোকেসি অ্যালায়েন্সের সহায়তায় জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্যই বেরিয়ে এসেছে। গতকাল সকালে একটি অনলাইন অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় জরিপের এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
জরিপের তথ্য উপস্থাপন করে ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি বলেন, গবেষণার জন্য নমুনা হিসেবে ২০টি প্রশ্ন সংবলিত একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়। এর ওপর ভিত্তি করে তথ্য সংগ্রহকারী দলের মাধ্যমে চালানো হয় জরিপটি। প্রাথমিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত ৩৯০ নারীর একটি তালিকা তৈরি করা হয় (র্যান্ডম স্যাম্পলিং)। পরবর্তীতে সেই জরিপে অংশ নেন যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন এমন ১৩৫ কর্মজীবী নারী। গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালিত হয় এই বছরের জুলাইয়ে।
তিনি আরও বলেন, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪১ দশমিক ৪৮ শতাংশ দুই থেকে তিনবার, ২৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ নারী চার থেকে পাঁচবার এবং ২২ দশমিক ৯৬ শতাংশ নারী একবার করে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। আবার তাদের ৬১ জন শারীরিক স্পর্শের মাধ্যমে (৪৫ দশমিক ১৯ শতাংশ), ৮০ জন মৌখিকভাবে (৫৯ দশমিক ২৫ শতাংশ) এবং সরাসরি যৌন আবেদনের শিকার হয়েছেন ৬৪ নারী (৪৭ দশমিক ৪১ শতাংশ)। এ ছাড়া ৬০ নারী (৪৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ) সুপারভাইজারের মাধ্যমে, ৮৮ জন (৬৫ দশমিক ১৯ শতাংশ) ম্যানেজার বা বসের হাতে এবং আট (৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ) নারী হয়রানির শিকার হয়েছেন তাদের নিয়োগকর্তার মাধ্যমে।
জরিপে বলা হয়, উত্তরদাতাদের একটি বড় অংশ অর্থাৎ ৮৯ নারী জানেনই না কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানিবিষয়ক নীতিমালা থাকা প্রয়োজন বা এ সম্পর্কে হাইকোর্টের একটি গাইডলাইন আছে। তবে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ১১৮ জন (৭৯ দশমিক ৪০ শতাংশ) মনে করেন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি সমন্বিত আইন প্রয়োজন। শতকরা ৮৫ দশমিক ১৯ নারী বলেছেন- কেবল আইন হলেই হবে না; এটি যথাযথভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে শাস্তির বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘নারীর প্রতি যৌন হয়রানি সারাবিশ্বে একটি ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। আপনারা এখানে যে সুপারিশগুলো উপস্থাপন করেছেন এগুলো বাস্তবায়নের জন্য আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। আমরা একটি সমন্বিত আইন প্রণয়নেরও চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করছি এ বছরের মধ্যে আইনটি সংসদে উপস্থাপন করতে পারব। তবে শুধু আইন প্রণয়ন করলেই হবে না; জাতীয়, আন্তর্জাতিক ও তৃণমূলপর্যায়ে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে।’
দি হাঙ্গার প্রজেক্টের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘যৌন হয়রানি হলো একটি খারাপ আচরণ। পৃথিবীর সব সমাজে সব স্তরের মানুষের মধ্যে এটি বিদ্যমান। তবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এর ব্যাপকতা বেশি। নারীর ওপর পুরুষের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মনোভাবই এর মূল কারণ। তাই মানুষের মন মানসিকতার পরিবর্তন করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
Leave a Reply