1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় যেভাবে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২০

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে হোয়াইট হাউস যাওয়ার পদ্ধতি বিশ্বের অন্য দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার তুলনায় অনেকটাই ভিন্ন এবং কিছুটা জটিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো একজন প্রার্থী নাগরিকদের সরাসরি ভোট পেলেই যে তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন তা কিন্তু নয়, ইলেকটোরাল কলেজ নামে যুক্তরাষ্ট্রের যে বিশেষ নির্বাচনী ব্যবস্থা আছে সেটির মাধ্যমেই আসলে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পদ্ধতি তুলে ধরেছে।

আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট পদে যে ভোট গ্রহণ হবে তাকে বলা হয় পপুলার ভোট। আর ইলেকটোরাল কলেজের ভোটকে বলা যায় ইলেকটোরাল ভোট। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট আছে। দুই অঙ্গরাজ্য বাদে বাকি সব অঙ্গরাজ্যের নিয়ম হলো- যে প্রার্থী অঙ্গরাজ্যে সবচেয়ে বেশি পপুলার ভোট পাবেন, তিনি ওই অঙ্গরাজ্যের সবগুলো ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে যাবেন। এভাবে সবগুলো অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট যোগ করে যে প্রার্থী ২৭০টি ইলেকটোলার ভোট পাবেন-তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।

ইলেকটোরাল কলেজ কারা?

ইলেকটোরাল কলেজ হচ্ছেন একদল নির্বাচকমণ্ডলী বা কর্মকর্তা- যারা একেকটি রাজ্যের পপুলার ভোটে প্রতিফলিত রায় অনুযায়ী ভোট দেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত এবং রাষ্ট্র ও কেন্দ্রীয় আইনের অধীনে একটি জটিল ব্যবস্থা। ইলেকটোরাল কলেজে মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। হোয়াইট হাউসের দৌড়ে বিজয়ী হতে হলে প্রার্থীকে এর মধ্যে কমপক্ষে ২৭০টি ভোট পেতে হবে। ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি অনুযায়ী যেসব রাজ্যে জনসংখ্যা বেশি, সেসব রাজ্যে ইলেকটোরাল ভোটও বেশি। তাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে কিছু কিছু অঙ্গরাজ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এসব অঙ্গরাজ্য ‘নির্বাচনী রণক্ষেত্র’ হিসেবে পরিচিত। আর স্বাভাবিকভাবেই এসব অঙ্গরাজ্যের ভোটের মাঠে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়।

‘নির্বাচনী রণক্ষেত্র’ কেন হয়?

মার্কিন নির্বাচনী ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা গেছে- বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যই নির্দিষ্ট কোন রাজনৈতিক দলের অনুকূলে ভোট দিয়ে থাকে। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা কিছুটা নিশ্চিত থাকেন যে, তারা প্রথাগতভাবে এইসব রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোটগুলো পাবেন।

মার্কিন নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের দুর্গ বলে পরিচিত এই অঙ্গরাজ্যগুলোকে বলা হয় ‘রেড স্টেট’ বা ‘লাল রাজ্য’। আর ডেমোক্র্যাটদের প্রাধান্য পাওয়া স্টেটগুলোকে বলা হয় ‘ব্লু স্টেট’ বা ‘নীল রাজ্য’। কিন্তু হাতে গোনা কিছু অঙ্গরাজ্য আছে যে রাজ্যগুলোর ভোট, প্রার্থীদের কারণে যে কোন শিবিরে যেতে পারে। এগুলোই হলো মার্কিন নির্বাচনের ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ বা ‘নির্বাচনী রণক্ষেত্র’। এগুলোকেই অনেকে বলে থাকে ‘বেগুনি রাজ্য’। আর এই অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটই শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়ায় জয়- পরাজয়ের মূল চাবিকাঠি। এই রাজ্যগুলোতেই হয় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। মার্কিন নির্বাচনে এসব রাজ্যেই প্রচারণার বিনিয়োগ ও ব্যয় সবচেয়ে বেশি। এসব রাজ্যেই ঘন ঘন চলে প্রার্থীদের আনাগোণা, তাদের প্রচারণা সমাবেশ।

এবারের নির্বাচনে ‘নির্বাচনী রণক্ষেত্র’

মার্কিন নির্বাচনী ইতিহাসে দেখা গেছে- এই স্টেটগুলোতে অনেক ভোটারই কোনো একটি দলের কট্টর সমর্থক নন এবং প্রার্থীদের নীতিমালা এবং আগামী চারবছরের জন্য প্রার্থীদের পরিকল্পনার বিচারে তারা শেষ মুহূর্তে ভোট দেন। নিরপেক্ষ হিসেবে পরিচিত এ অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা প্রচার-প্রচারণার নিরিখে সিদ্ধান্ত নেন । ফলে এই রাজ্যগুলোর ভোটই চূড়ান্ত ফলকে যে কোনো প্রার্থীর পক্ষে ঠেলে দিতে পারে। এই ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেটগুলোতে ভোট কোন্ দুর্গে যাবে তা যেহেতু বোঝা কঠিন তাই এই রাজ্যগুলোকে ‘সুইং স্টেট’ বা দোদুল্যমান রাজ্যও বলা হয়।

সুইং স্টেট’ বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য

নির্বাচনী সময়সূচির মধ্যে যে কোনো সময়ে এই ব্যাটলগ্রাউন্ড বা নির্বাচনী রণক্ষেত্রে ভোটের অঙ্ক বদলে যেতে পারে। ফাইভ থার্টি এইট নামে আমেরিকার একটি নির্বাচন বিষয়ক ওয়েবাসইট, যারা জনমত জরিপ বিশ্লেষণ করে, তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কিছু অঙ্গরাজ্যকে গত কয়েকটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বরাবরই ‘সুইং স্টেট’ হিসেবে আবির্ভূত হতে দেখা গেছে।

গত কয়েকটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে অঙ্গরাজ্যগুলোর ‘দোদুল্যমান’ ভোট প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর জয়-পরাজয় নিশ্চিত করেছে সেগুলোর মধ্যে ছিল কলোরাডো, ফ্লোরিডা, আইওয়া, মিশিগান, মিনেসোটা, নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহাইও, পেনসিলভেনিয়া, ভার্জিনিয়া এবং উইসকনসিন।

তারা ২০০৪ থেকে ২০১৬ গত চারটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জুন পর্যন্ত জনমত জরিপের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে বলছে ২০২০র নির্বাচনে অ্যারিজোনা, মিশিগান, নর্থ ক্যারোলাইনা আর উইসকনসিন গুরুত্বপূর্ণ ‘সুইং স্টেট’ হয়ে উঠতে পারে। আবার কোনো কোনো বিশ্লেষক ২০২০-র নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান স্টেটের তালিকায় রাখছেন অ্যারিজোনা, পেনসিলভেনিয়া এবং উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যকে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য ২০১৬-র ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ ভোটের শেয়ার ধরে রাখা জরুরি, কারণ জো বাইডেন কোনো কোনো রাজ্যে এখন পর্যন্ত জরিপে এগিয়ে। কোনো কোনোনির্বাচনী পর্যবেক্ষকের মতে ২০২০এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নর্থ ক্যারোলাইনা, ফ্লোরিডা, মিশিগান, উনসকনসিন এবং অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যগুলো নির্ধারক ‘সুইং স্টেট’ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ এই অঙ্গরাজ্যগুলো থেকেই ২০১৬-র নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে অল্প ব্যবধানে হিলারি ক্লিন্টনের কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কাজেই ২০২০র নির্বাচনে  ট্রাম্পের জন্য এই রাজ্যগুলোর ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ধরে রাখা খুবই জরুরি হবে।

জনমত জরিপ যদি বিশ্বাসযোগ্য হয়, তাহলে এখন পর্যন্ত জরিপে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে ট্রাম্পের জয়-নির্ধারক অঙ্গরাজ্যগুলোতে প্রতিযোগিতার দৌড়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন একটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। তবে এই পরিস্থিতি যে কোনো সময় বদলে যেতে পারে।

‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ অঙ্গরাজ্যে কে এগিয়ে

বর্তমান জরিপের ফলাফল জো বাইডেনের পক্ষে হলেও নির্বাচনের এখনও অনেক সময় বাকি। আর অতীত রেকর্ড থেকে দেখা গেছে নির্বাচনী রণক্ষেত্রে জনমত জরিপ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যে কোনো সময় যে কোনো দিকে যেতে পারে। গত ৩ আগস্ট পর্যন্ত বিবিসি সংকলিত জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, জো বাইডেন মিশিগান, পেনসালভেনিয়া এবং উইসকনসিন রাজ্যে এগিয়ে আছেন। এসব রাজ্যে ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প এক শতাংশের এরও কম ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন।

ইলেকটোরাল কলেজের ভোট

‘ইলেকটোরাল কলেজ’ হচ্ছে কর্মকর্তাদের একটি প্যানেল, যাদের ‘ইলেকটরস্’ বা ‘নির্বাচকমণ্ডলী’বলা হয়। প্রতি চার বছর পর পর এটি গঠন করা হয়, এবং এরাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে বাছাই করেন।

কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে প্রতিটি স্টেটের ইলেকটরসের সংখ্যা নির্ধারিত হয়: যা নির্ধারিত হয় স্টেটে সিনেটরের সংখ্যা (প্রত্যেক স্টেটে দুইজন) এবং প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিনিধির (যা জনসংখ্যার অনুপাতে) যোগফল মিলে নির্ধারিত হয়।

সবচেয়ে বড় ছয়টি স্টেট হলো ক্যালিফোর্নিয়া (৫৫), টেক্সাস (৩৮), নিউইয়র্ক (২৯), ফ্লোরিডা (২৯), ইলিনয় (২০) এবং পেনসিলভেনিয়া (২০)। প্রত্যেক নির্বাচনের সময় দেখা গেছে যেসব রাজ্যের ভোট বেশি, প্রার্থীরা সেসব রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণার পেছনে অনেক বেশি সময় ও অর্থ ব্যয় করে থাকেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি যেহেতু এই ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ রাজ্যগুলোতে, তাই দুই দলের প্রার্থীই আগামী মাসগুলোতে জয়ের জন্য তাদের মরিয়া লড়াই সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com