এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। একে তো চলচ্চিত্রের অবস্থা বেহাল তার মধ্যে করোনার থাবা। এমনিতেই চলচ্চিত্র নির্মাণ কমে গেছে বহু বছর হলো। আর এখন পুরোপুরি বন্ধই বলা যায়। প্রশ্ন উঠেছে চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে! যদিও এ নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই! যেমন মাথাব্যথা নেই চলচ্চিত্র নির্মাণের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত এফডিসি নিয়ে! ফলে জৌলুস হারাচ্ছে এফডিসি।
তবুও কিছু মানুষ চেষ্টা করে যাচ্ছেন এর হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার। কিছু মানুষ স্মৃতি হাতড়াতে সিনেমার এই আঁতুড়ঘরে যাতায়াত করেন। এর মধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে এফডিসির ৩ ও ৪ নম্বর ফ্লোর। সেখানে তৈরি হচ্ছে ১৫ তলা বিএফডিসি কমপ্লেক্স। আয় বাড়ানো এবং আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে এই কমপ্লেক্স নির্মাণ দরকার বলে মনে করছে বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ। ভাঙা অংশ ও তৎসংলগ্ন কিছু জায়গায় নতুন করে আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হবে। যেটি হবে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ভবন। কিছু অংশে থাকবে শুটিং ফ্লোর, থাকবে সিনেপ্লেক্সও। দুই দশক ধরে এফডিসির নেই আধুনিকায়ন। নির্মাতা-প্রযোজকদের এফডিসিতে শুটিংয়ে উদ্বুদ্ধ করার জন্য নেই কোনো প্রণোদনা বা পরিকল্পনা! সিনেমার মূল জায়গায় কোনো উন্নয়ন নেই, অথচ এফডিসিতে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে সিনেমার উন্নয়ন করা হচ্ছে বলে যে স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে সেটি কতটা যুক্তিযুক্ত? বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনায় ক্ষুব্ধ অনেকে।
উন্নয়নের নামে এই ভাঙাগড়া নিয়ে অভিনেতা ও নির্মাতা সোহেল রানা বলেন, ‘বিএফডিসি আর বিএফডিসি থাকবে না। ওটা অফিসপাড়া হয়ে যাচ্ছে। শুনলাম, নিজস্ব আয়ের রাস্তা করছে বিএফডিসি। আমি তো মনে করি, পুরো বিএফডিসিই নিজস্ব আয়ের রাস্তা। যেখানে উন্নয়ন ও সংস্কার দরকার সেখানে না করে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করতে হবে কেন? শুটিং ফ্লোরগুলো উন্নত করুক। তা হলে নির্মাতারা বাইরে শুটিং করবেন না। এভাবেও আয় বাড়ানো যায়।’ অভিনেতা আলমগীর বলেন, ‘শুটিং ফ্লোর ভেঙে বহুতল ভবন কেন? এটা করলে তো বিএফডিসি তার জৌলুস হারাবে।’ তার কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে অভিনেত্রী কবরী বলেন, ‘এই শুটিং ফ্লোর নিয়ে আমাদের কত স্মৃতি। ফ্লোর ভাঙার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি।’
অভিনেতা শাকিব খানের কথায়, ‘এমনিতেই ছবি নেই। অনেক মানুষ এখনো বিএফডিসি যায় কিছু একটা হবে এটা ভেবে। আর সেখানে ফ্লোর ভেঙে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটি চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলীদের আবেগের জায়গা, সেটা কেন অনুধাবন করতে পারছেন না বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ।’ অভিনেত্রী মৌসুমী বলেন, ‘পুরো বিশ্ব আধুনিকায়ন হচ্ছে। কিন্তু সবাই তার অস্তিত্ব ঠিক রেখে আধুনিক হচ্ছে। মাল্টিপ্লেক্স হতেই পারে; কিন্তু সেটা বিএফডিসিতে নয়। তা করলে শিল্পীদের কাজের জায়গায় বাইরের মানুষ আসবে। তাতে এখানে আর কাজের পরিবেশ থাকবে না।’
এফডিসির পরিচালক (কারিগরি ও প্রকৌশল) কেএম আইয়ুব আলী জানান, ৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন ভবন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৫ তলা ভবনের বেসমেন্টের তিনটি তলায় থাকবে গাড়িপার্কিং। বাকি ১২ তলার তিনটি তলায় আবাসিক হোটেল, দুটি তলায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও বীমা কার্যালয়, একটি তলায় চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়, দুটো তলায় বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের কার্যালয়, দুটো তলায় শুটিং স্পট এবং ওপরের দুটো তলায় সিনেপ্লেক্স থাকবে। তিনি বলেন, ‘ফ্লোর ভাঙা হচ্ছে কারণ দুটির মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে। যে কোনো সময় ধসে পড়ার ঝুঁকি আছে। তা ছাড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ করে আয় বাড়ানোর উপায়ও আছে। পর্যাপ্ত সিনেমা হল নেই, ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে সিনেপ্লেক্সও হলো। শুটিং ফ্লোরও থাকছে।’
শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, ‘এটা কোনো অজুহাতই হতে পারে না। আমার এখন সন্দেহ লাগছে, না জানি এক সময় এফডিসিই এখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
Leave a Reply