ভোট চুরি’র অভিযোগ নতুন করে ভারতের রাজনীতিতে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।এই অনিয়মের সঙ্গে দেশটির নির্বাচন কমিশন জড়িত বলে দাবি করেছেন বিরোধী দলীয় নেতারা। কমিশন ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) নিয়মবর্হিভূতভাবে সুবিধা দিয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে অভিযোগ তুললে সংসদের অধিবেশন স্থগিত করা হয়। একদিন আগে, নয়াদিল্লিতে ইসি দপ্তর অভিমুখে মিছিলের চেষ্টা করলে রাহুল গান্ধীসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে সাময়িকভাবে আটক করে পুলিশ। ৭ আগস্ট রাহুলই প্রথম সংবাদ সম্মেলন করে ‘ভোট চুরি’র অভিযোগ তোলেন। নির্বাচন কমিশন ও বিজেপি এই অভিযোগকে অস্বীকার করেছে।
রাহুল অভিযোগ করেছেন, ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপির টানা তৃতীয়বারের জয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদি। এই নির্বাচনে অনিয়ম করে ১ লাখের বেশি ভোটার নিবন্ধন করা হয়েছে। এটি করা হয়েছে ব্যাঙ্গালুরু কেন্দ্রীয় আসনের মহাদেবপুরা এলাকায়। এসব ভোটারদের মধ্যে অনেকেই ডুপ্লিকেট। তাদের ঠিকানায়ও ত্রুটি আছে, এমনকি একই ভোটার একাধিক স্থানে নিবন্ধন পাওয়া। রাহুল মহাদেবপুরায় এক ঠিকানায় ৮০ জনকে নিবন্ধন দেওয়ার তথ্য প্রকাশ করেছেন।
গত নির্বাচনে কংগ্রেস ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ৯৯টিতে জয় পায়। বিজেপি জেতে ২৪০টিতে। রাহুলের অভিযোগ, ইসির অনিয়মের কারণে তাঁর দল নির্বাচনে কমপক্ষে ৪৮টি আসন হারিয়েছে। অনিয়ম ঢাকতে ইসি ভোটকেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজও মুছে ফেলেছে।
এদিকে, রাহুল গান্ধীর সংবাদ সম্মেলনের পরপরই নির্বাচন কমিশন এক্স-এ প্রতিক্রিয়া জানায়। তারা এমন অভিযোগকে অস্বীকার করেছে। ইসি দাবি করেছে, এমন অভিযোগ তোলায় রাহুল গান্ধীকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
ইসির কেরালা কার্যালয় জানিয়েছে, গত লোকসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আপত্তি জমা দেয়নি। আর সিসিটিভির ফুটেজ মুছে ফেলা প্রসঙ্গে বলেছে, ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর কেবল ৪৫ দিন পর্যন্ত ফুটেজ সংরক্ষণ করা হয়।
বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রাধান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘এমন বিশৃঙ্খলা তৈরি করাটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি গণতন্ত্রের জন্যও বিপদের।’
আর কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বলেন, রাহুল গান্ধী ও বিরোধী জোট গণতন্ত্রকে কলঙ্কিত করছে। তারা সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদায় হস্তক্ষেপ করছে।
রাজনীতি যেভাবে উত্তাল
রাহুল গান্ধী এমন সময় অভিযোগগুলো তুলেছেন, যখন বিহার রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। আগামী নভেম্বরে এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা।
নির্বাচন কমিশন বলছে, ডুপ্লিকেট ও মৃত ভোটারদের বাদ দিতেই এই সংশোধনী আনা হচ্ছে। তবে বিহারের অনেক ভোটার বিবিসিকে জানিয়েছেন, খসড়া তালিকায় ভুল ছবি এমনকি মৃত ব্যক্তির নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর সমালোচকরা বলছেন, সংশোধন আনার কাজে তাড়াহুড়া করায় অনেক ভোটার বিশেষ করে অভিবাসী ও সংখ্যালঘুদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
সংশোধনীর বিরুদ্ধে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে কয়েকটি পিটিশন দায়ের হয়েছে। আবেদনকারীরা ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া প্রায় ৬৫ লাখ ব্যক্তির নাম ও বাদ দেওয়ার কারণ জানতে চেয়েছেন। ইসি জানিয়েছে, বাদ পড়াদের মধ্যে ২ দশমিক ২ মিলিয়ন ব্যক্তি মৃত, ৭ লাখের বেশি একাধিকবার নিবন্ধিত এবং ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন মানুষ স্থানান্তরিত হয়েছে।
এ অবস্থায় রাহুল গান্ধী জাতীয় পর্যায়েও ভোটার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ আরও জোরালোভাবে তুলছেন। ১২ আগস্ট তিনি বিহারের খসড়া নির্বাচনী তালিকায় ১২৪ বছর বয়সী এক ভোটারের নাম থাকার উদাহরণ দেন। বলেন, এমন আরও উদাহরণ আছে। কাহিনী এখানেই শেষ নয়, আরও বাকি।
Leave a Reply