রাষ্ট্র সংস্কারে ১২টি মৌলিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হওয়া নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘মৌলিক বিষয়গুলো আছে সেগুলো সমাধান করে দ্রুত নির্বাচনের একটা মোটামুটি ধারণা পাওয়া গেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হলে নিজেদের মধ্যকার দ্বিধা কাটিয়ে আমরা একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারব।’
আজ বৃহস্পতিবার ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাব আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক একটা বোঝাপড়া না থাকলে তিক্ততা সৃষ্টি হবে। দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক একটা বোঝাপড়া থাকতে হবে। এই বোঝাপড়া না থাকলে রাজনীতিতে কাদা ছোড়াছুড়ি বাড়বে। গণতন্ত্রে কাদা ছোড়াছুড়ি হবে। অনেক কথা আসবে। কিন্তু এটার একটা সীমা থাকা দরকার। তা না হলে একটা তিক্ততা সৃষ্টি হয়। যে তিক্ততা ভবিষ্যতে গিয়ে রাজনীতিকে আরও কলুষিত করে। আমি আশা করব, আমরা আগামী দিনে একটা সুন্দর বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের পর গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার একটা নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমি মনেপ্রাণে গণতন্ত্র বিশ্বাস করি। বিপ্লব যারা করবেন তারা বিপ্লবী দল করবেন বিপ্লবী সংগঠন করবেন এবং বিপ্লব করে বিপ্লবী সরকার গঠন করে তারা দেশে বিপ্লবকে সফল করবেন বলেও মনে করি।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকারে যাব। জনগণের কাছে ওয়াদাবদ্ধ কাজগুলো করার চেষ্টা করব। তারপর আবার জনগণের কাছে ফিরে যাব, যদি তারা আমাকে গ্রহণ করেন আমি আসব, না হলে আসব না। ’
তিনি বলেন, ‘সবাইকে মতামত প্রকাশ করার সুযোগ দিতে হবে, সবাইকেই তার কথা বলার সুযোগ দিতে হবে, একজন সাধারণ মানুষ যেমন তার ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে, সমাজে মর্যাদা নিয়ে তার প্রতিষ্ঠারও সুযোগ রয়েছে, কিন্তু আজ শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বেই লিবারেল ডেমোক্রেসি একটু একটু করে নিচে নেমে যাচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনমানসিকতা সবকিছু বদলায়। সে বদলানোর ফলে দেখা যায় যে চলমান রাজনৈতিক কাঠামো পরিবর্তন ছাড়া রাজনীতিকে ধরে রাখা কঠিন। সম্প্রতি আমি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নিয়ে চীনে গিয়েছিলাম। যতবার চীনে যাই, দেখি চীনের ভিন্ন চেহারা। চীন প্রতিদিন বদলাচ্ছে। আর তাদের সিস্টেমটা তো ভিন্ন। আমাদের সিস্টেম ভিন্ন। আবার দেখুন আমেরিকার রাজনৈতিক কাঠামো আর আমাদের কাঠামো কিন্তু এক নয়।’
গত এক বছরেও জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের তালিকা তৈরি করতে না পারায় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন তারা এক বছরেও কি এদের খুঁজে পেলেন না? যারা এই দেশকে পরিবর্তনের জন্য প্রাণ দিল রক্ত দিল তাদের জন্য একটা তালিকা তৈরি করে সঠিকভাবে তাদের পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা করতে পারলেন না!’
বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নির্যাতন এবং হয়রানির শিকার হওয়ায় মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবীর, যায়যায়দিন সম্পাদক শফিক রেহমান ও সংগ্রামের সাবেক সম্পাদক আবুল আসাদকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগান্তর সম্পাদক আব্দুল হাই শিকদার প্রমুখ।
Leave a Reply