আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে খুলনার ছয়টি সংসদীয় আসনে পাঁচ রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন। বিএনপির একাধিক নেতা প্রতিটি আসনে সক্রিয় থাকলেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী দিয়েছে। এ ছাড়া জেলার সব আসনে না থাকলেও বেশ কয়েকটি আসনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও গণসংযোগ ও রাজনৈতিক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন। পাঁচটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাই রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও গণসংযোগসহ নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনুপস্থিতিতেও তাদের অনুসারীরা মাঠে কাজ করছেন। এর ফলে প্রতিটি আসনেই নেতাকর্মীদের ব্যস্ততা বেড়েছে।

খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে খুলনায় বিএনপির প্রস্তুতি ভালো। প্রতিটি আসনেই মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা কমবেশি কাজ করছেন। তবে দল যাকে ধানের শীষ প্রতীক দেবে, তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।

খুলনা মহানগর সিপিবির নেতা মিজানুর রহমান বাবু বলেন, সরকার যদি নির্বাচনী পরিবেশ অনুকূলে আনতে পারে, তা হলে তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ জন্য তারা পূর্বপ্রস্তুতিও রেখেছেন। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স খুলনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তার প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

এনসিবির মহানগর সংগঠক সাইফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন নিয়ে তারা এখন ভাবছে না। তারা আগে সংস্কার ও খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার বিচার নিয়ে কাজ করছেন। তার পরও দুটি আসনে দলের প্রার্থীরা কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের খুলনা মহানগর কমিটির নেতা নাসির উদ্দীন বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য তাদের দল প্রস্তুতি নিচ্ছে। খুলনা ৫ ও ৬ আসন বাদে বাকি চারটি আসনে তাদের দল একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বলে জানান নাসির।

খুলনা-১ (বটিয়াঘাট ও দাকোপ উপজেলা) : এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আমির এজাজ খান ও নব্বইয়ের ছাত্রনেতা জিয়াউল হাসান পাপুল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি তৈয়বুর রহমান এবং সাবেক ছাত্রদল নেতা

অ্যাডভোকেট গোবিন্দ হালদার। এই আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী বটিয়াঘাটা উপজেলা জামায়াতের আমির শেখ আবু ইউসুফ। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন সিপিবির অশোক কুমার ও কিশোর রায় এবং ইসলামী আন্দোলনের জেলা শাখার সহসভাপতি মাওলানা আবু সাঈদ।

খুলনা-২ আসনের (সদর-সোনাডাঙ্গা থানা) : এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মহানগরের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, মহানগরের বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম তুহিন। নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চলছে, তা মোকাবিলা করতে হলে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি দরকার। সেই চিন্তা মাথায় নিয়েই দল এগোচ্ছে। আমরা দলের সঙ্গে আছি।

এই আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল। এ আসন থেকে আগামী নির্বাচনে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ আবদুল আউয়াল এবং এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ফরিদুল হক প্রার্থী হতে পারেন।

খুলনা-৩ আসন (খালিশপুর, দৌলতপুর, খানজাহান আলী থানার আংশিক ও আড়ংঘাটা থানার আংশিক) : এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এককভাবে আলোচনায় আছেন বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। তবে এর বাইরে মহানগর বিএনপির সাবেক নেতা অধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম মনোনয়ন চাইতে পারেন।

এই আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগর আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, আর কোনো নব্য স্বৈরাচার আসুক- জনগণ তা চায় না। মানুষ কল্যাণকর সুন্দর দিনের অপেক্ষায় রয়েছে। বন্ধ পাটকল চালুর ব্যাপারে জামায়াত নির্বাচনের পর চেষ্টা করবে। বেকার শ্রমিকদের পুনর্বাসনে চেষ্টার কমতি থাকবে না। সঠিক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি জয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ ছাড়া এনসিপির প্রার্থী হিসেবে আলোচনা আছেন সাবেক বিএনপি নেতা আরিফুর রহমান মিঠু এবং ইসলামী আন্দোলনের মহানগর সেক্রেটারি মুফতি ইমরান হোসাইন। বিএনপির মহানগর কমিটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ এসএম আরিফুর রহমান মিঠু বলেন, এনসিপির সাংগঠনিক কাজ করছেন তিনি। খুলনা-৩ আসনে তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এ লক্ষ্যে নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছেন বলে জানান।

খুলনা-৪ আসন (দীঘলিয়া, রূপসা ও তেরখাদা উপজেলা) : এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন দলের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, কেন্দ্রীয় নেতা শাহ কামাল তাজ এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক পারভেজ মল্লিক। এ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী জেলা নায়েবে আমির মাওলানা কবিরুল ইসলাম। এ আসন থেকে দলের মহাসচিব হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ ইউসুফ আহমেদ ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

খুলনা-৫ আসনে (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) : এ আসনে বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগর লবির মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত বলে মনে করেন তার অনুসারীরা। সম্প্রতি লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে দেশে ফিরে এলাকায় বেশ সক্রিয় হওয়ায় এমন ধারণা তৈরি হয়েছে। লবির ঘনিষ্ঠ আলী আক্কাস বলেন, এ আসনে পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে আলী আজগর লবি নির্বাচনী কাজ শুরু করেছেন। এ ছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকার বৃহত্তর খুলনা সমিতির সাধারণ সম্পাদক খান রবিউল ইসলাম, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ইবাদুল হক রুবায়েত, জেলা বিএনপির সাবেক নেতা অধ্যাপক ডা. গাজী আবদুল হক, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিএনপি নেতা টিকু রহমান, জেলা বিএনপি নেতা মোল্লা মোশাররফ হোসেন মফিজ প্রমুখ। এ আসনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন।

খুলনা-৬ আসন (পাইকগাছা-কয়রা উপজেলা) : এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন বিখ্যাত দুই সাংবাদিক। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সাংবাদিক আনোয়ার আল দীন এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ডাইরেক্টর সিনিয়র সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী। এ ছাড়া এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, জেলার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম, সাবেক সদস্য সচিব এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পি ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম রফিক। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, আমি এই আসন থেকে মনোনয়ন চাইব। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। এই আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ।