1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫, ০৯:১৯ অপরাহ্ন

অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে পুঁজিবাজার

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫

অর্থনীতি থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে দেশের শেয়ারবাজার। মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি কোনোটির সঙ্গেই এই শেয়ারবাজারের কোনো সংযোগ নেই। ১৯৯৬ সালে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় শেয়ারবাজারে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে। এটাই ছিল পাপের সূত্রপাত। এরপর শাস্তি না হওয়ায় পুঁজিবাজারে অন্যায় ও দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হয়নি। এই বাজারের ধাক্কা পুরো অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিয়েছে। বাংলাদেশে রাজনীতির ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ফলে পুঁজিবাজারে সুদিন ফেরাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এখানে সমাধানের ব্যবস্থা আছে; কিন্তু প্রয়োগ নেই। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার আইন প্রয়োগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনায় পুঁজিবাজার : দর্শন ও অনুশীলন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) আয়োজিত এই আলোচনাসভায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এতে নির্ধারিত আলোচক ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মো. মোহসিন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক, গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ, আইসিএমএবির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস?্য মো. মোবারক হোসাইন এবং এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনুভা জাবীন।

আলোচনাসভায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অর্থনীতি থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে দেশের পুঁজিবাজার। এর সঙ্গে মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি কোনোটির সঙ্গেই কোনো সংযোগ নেই। কারণ এ বিষয়ে কেউ হাত দিতে চায়নি। শেয়ারবাজার নিয়ে কোনো রাজনৈতিক অংশীদারত্ব নিতে চায়নি কেউ। রাজনৈতিক অঙ্গীকারও কেউ করেনি। এ পর্যন্ত শেয়ারবাজারের যা কিছু ভালো সংস্কার হয়েছে, বিএনপি আমলেই হয়েছে। ভবিষ্যতে বিএনপি এ বাজারের জন্য আরও বেশি কিছু করবে। তিনি বলেন, এত বছর যারা পুঁজিবাজার চালিয়েছেন, তারা ক্যাসিনোর মতো চালিয়েছেন। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে।

বিএনপি আমলে আর্থিক খাত কোনো ধরনের বিপদে পড়েনি উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মতো সংস্থাকে রাজনীতিকীকরণ করেনি বিএনপি। ভবিষ্যতেও করা হবে না। তিনি বলেন, লুটপাট করতে করতে শেয়ারবাজারকে এমন অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যে, ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দিতে হয়েছিল। অথচ নিয়ম হচ্ছে শেয়ারের মূল্য ঠিক করবে বাজার। বিনিয়োগকারীরা লোকসান মেনে নিয়েও বাজার থেকে বের হতে পারছিলেন না।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় কথা হচ্ছে বিনিয়োগ। এর বিকল্প নেই। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার গঠন হলে দেশে-বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। বিদেশে থাকা অনেক বিনিয়োগকারী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

মূল প্রবন্ধে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ২০১০-১১ সালে পুঁজিবাজার থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন, যার মধ্যে অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। শাস্তি না হলে অন্যায় ও দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব নয়। আমরা দেখেছি, ১৯৯৬ সালে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় শেয়ারবাজারে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ পথে বসেছে, অথচ সে সময়কার ঘটনার কোনো বিচার হয়নি। এটি ছিল পাপের সূত্রপাত।

টোটকা ওষুধে পুঁজিবাজার ঠিক হবে না উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, এই বাজারের ধাক্কা পুরো অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিয়েছে। এমনকি ওই সময়ে একটি আইপিওও আসেনি। পুঁজিবাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, একে সচল করতে হলে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে।

প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএসইসির কমিশনার মোহসিন চৌধুরী বলেন, আমরা আইপিও প্রক্রিয়া সহজ করাসহ পুঁজিবাজারে বিভিন্ন মেয়াদে সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মোবারক হোসেন বলেন, বাংলাদেশের বাজেটের ২৫ শতাংশ টাকা অনিয়মের মাধ্যমে ড্রেনেজে চলে যাচ্ছে। এটা রোধ করা গেলে দেশের অর্থনীতি আরও ভালো হবে। পুঁজিবাজারসহ দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলগুলোর একসঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির জয়েন্ট কনভেনার ডা. তাসনুভা জাবীন বলেন, পুঁজিবাজার অর্থনীতির আয়নার মতো। বাংলাদেশের প্রত্যেক খাতের সমস্যা সুপার ফেসিয়াল। খুব গভীরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সমস্যা সমাধানের অর্থনৈতিক থিওরি আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) ও অর্থনীতিবিদ ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, পুঁজিবাজারের দুর্বলতার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী পাওয়া যায় না। এখানে বাজারের পতন হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর মতো কোনো কাঠানো কাজ করে না। এক্ষেত্রে আর্থিক শিক্ষা বাড়ানো জরুরি।

ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। সেটা কীভাবে ফিরিয়ে আনব, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

সিএসইর চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সংকুচিত ছিল। আরও হয়ে আসছে। পতনের পেছনে যে সংস্কৃতি কাজ করেছে, সেটা হলো অ্যাবসেন্স অব রুলস অব ল। এর থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেন স্বাধীনভাবে আইনে দেওয়া ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ বলেন, নিয়ন্ত্রণসহ পুঁজিবাজারের ব্যর্থতায় তিন কারণ রয়েছে। এগুলো হলো- রাজনৈতিক অর্থনীতি, নীতি ও নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা।

আইসিএমএবির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার এলিট ক্লাসের খেলা। গত ৩০-৪০ বছরে পুঁজিবাজার থেকে যারা পয়সা বানিয়েছেন, তারা ১ শতাংশ। যারা দুর্নীতি, অনিয়ম করেছেন, তারাও এই ১ শতাংশের মধ্যেই রয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com