টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বরে কানপুর টেস্টের আগের দিন তিনি জানিয়ে দেন, ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছোট সংস্করণের ক্রিকেটের শেষ ম্যাচটি খেলে ফেলেছেন তিনি। তবে টেস্ট থেকে অবসর নিতে চান তার পরের মাসে। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হওয়া ম্যাচটি খেলে সাদা পোশাক তুলে রাখতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সফলতম এই ক্রিকেটার। তবে রাজনৈতিক বাস্তবতায় আর দেশেও আসা হয়নি সাকিবের, খেলাও হয়নি টেস্ট ম্যাচ।
দীর্ঘতম ও সংক্ষিপ্ততম সংস্করণ থেকে আগেই বিদায়ের ঘোষণা দেওয়া সাকিব ওয়ানডে চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত। আগামী মাসের ১৯ তারিখ শুরু হয়ে যে টুর্নামেন্ট চলবে ৯ মার্চ পর্যন্ত। তবে প্রিয় এই টুর্নামেন্টেও টেস্টের ভাগ্য বরণ করলে হলো সাকিবকে।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য ঘোষিত ১৫ সদস্যের দলে সাকিবকে রাখেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সাকিবের বাদ পড়াটাই অবশ্য অনুমেয় ছিল। দ্বিতীয় দফায় বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষায় পাস করতে না পারায় সাকিবকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিংয়ে এক বছর নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারকা এই ক্রিকেটারকে দলে নিতে হলে শুধু ব্যাটার হিসেবেই রাখতে হতো। তবে শুধু ব্যাটার হিসেবে সাকিবকে দলে জায়গা দেওয়ার মতো পরিকল্পনা নেই বিসিবির।
প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর কথায় বাজল সেই প্রতিধ্বনিই, ‘সাকিবের বোলিং অ্যাকশন বৈধতা নিয়ে যে সমস্যা, সেটি থেকে তিনি উত্তরণের প্রক্রিয়ায় আছেন। বোলিং পরীক্ষার রেজাল্ট নেগেটিভ হওয়ার কারণে তিনি এখন শুধু একজন ব্যাটার হিসেবে খেলতে পারবেন। ফলে সিলেকশন পজিশনেও সাকিবের অবস্থান ছিল কেবল একজন ব্যাটার হিসেবে। আমাদের টিম কম্বিনেশনটা সাজাতে গিয়ে শুধু ব্যাটার হিসেবে তাকে ১৫ জনের দলে রাখতে পারিনি।’
বোলার হিসেবে সাকিবের দুর্দিন শুরু হয় ইংল্যান্ডের লাল বলের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে গিয়ে। সেই টুর্নামেন্টে সারের হয়ে খেলেন একসময়ের নম্বর ওয়ান এই অলরাউন্ডার। এই চ্যাম্পিয়নশিপে তার করা বল নিয়েই ওঠে প্রশ্ন। পরে বার্মিংহ্যামের ল্যাবে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দিতে হয় সাকিবকে। সেখানে অ্যাকশন অবৈধ হওয়ায় তাকে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। গত মাসে দ্বিতীয় দফায় সাকিব পরীক্ষা দেন ভারতের চেন্নাইয়ের শ্রী রামচন্দ্র স্পোর্টস সায়েন্স সেন্টারে। সেখানে একই ফল আসায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিংয়ে নিষিদ্ধ হন সাকিব। নিয়ম অনুযায়ী, পরপর দুই পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে এই নিষেধাজ্ঞা আসে। যদিও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তার নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে।
২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশের জার্সিতে মাঠ মাতাচ্ছেন সাকিব। ১৭ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি ভারতের বিপক্ষে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন। ৭১ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ৪ হাজার ৬০৯ রান তার; উইকেট নিয়েছেন ২৪৬টি। ওয়ানডেতে তিনি সবশেষ ম্যাচ খেলেছেন ২০২৩ সালের নভেম্বরে দিল্লিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে। তার ৩৪৭ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ৭ হাজার ৫৭০ রান ও ৩১৭ উইকেট রয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে সাকিব সবশেষ ম্যাচ খেলেছেন গত বছরের জুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ১২৯ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ২ হাজার ৫৫১ রান ও ১৪৯ উইকেট তার শিকার। বাংলাদেশ দলের হয়ে তার অনেক অর্জন রয়েছে। তবে শেষটা রঙিন হলো না এই অলরাউন্ডারের। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে জায়গা না পাওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটেই সাকিব অধ্যায়ের অনানুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে গেল!
Leave a Reply