দর্শক বিশৃঙ্খলায় প্রায় দেড় ঘণ্টা পর শুরু হয় কোপা আমেরিকার ফাইনাল। এরপর ম্যাচে নেমে আর্জেন্টিনার সেরা তারকা লিওনেল মেসি ইনজুরির কারণে উঠে যান। ডাগআউটে কান্নায় ভেঙে পড়েন। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে কলম্বিয়া-আর্জেন্টিনা তুমুল লড়াই করলেও জালের দেখা পায়নি। অবশেষে অতিরিক্ত সময়ে লাওতারো মার্তিনেজ ১১২তম মিনিটে গোল করলে শেষ বাঁশি বাজার পর বাধভাঙা উল্লাসে মাতে আলবিসেলেস্তারা।
কলম্বিয়াকে ১–০ গোলে হারিয়ে টানা তিনটি বড় শিরোপা জিতল আর্জেন্টিনা। যেখানে টানা দ্বিতীয় কোপা আমেরিকা ও বিশ্বকাপ ঘরে তোলে লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা। ২০২১ সালের কোপা আমেরিকা, ২০২২ সালের বিশ্বকাপ আর ২০২৪ সালের কোপা আমেরিকা। টানা তিন আন্তর্জাতিক ট্রফি জয়ের এক বিরল রেকর্ড গড়ল তারা। স্পেনের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে এই কীর্তি গড়ল তারা। স্পেন এর আগে ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ইউরো এবং বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল তারা। এবার লাতিন আমেরিকা থেকে তাদের সেই কীর্তিদের ভাগ বসালেন লিওনেল মেসিরা।
আজ সোমবার ফ্লোরিডার মায়ামি গার্ডেন্সের হার্ড রক স্টেডিয়ামে দর্শক বিশৃঙ্খলায় প্রায় দেড় ঘণ্টা পর কোপা আমেরিকার ফাইনাল শুরু হয়। যেখানে খেলার প্রথমার্ধ অবশ্য কলম্বিয়ার আধিপত্য ছিল। বল দখলের লড়াইয়ে কিছুটা এগিয়ে থাকা নেস্তর লরেন্সোর দল প্রথমার্ধে গোলের জন্য নেয় আটটি শট, এর চারটি ছিল লক্ষ্যে। আর আর্জেন্টিনার তিনটি শটের কেবল একটি ছিল লক্ষ্যে।
যদিও আর্জেন্টিনাই শুরুটা ভালো করেছিল। প্রথম মিনিটে গনসালো মন্তিয়েলের ক্রসে ডি-বক্সের মাঝে বল পেয়ে যান হুলিয়ান আলভারেস। কিন্তু তার ডান পায়ের শট বাম পাশ দিয়ে চলে যায় বাইরে।
কিন্তু এরপরর শুরু হয় কলম্বিয়ার দাপট। পঞ্চম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে বাম পায়ের শট নেন লুইস দিয়াস। তেমন গতি না থাকায় ঠেকাতে সমস্যা হয়নি এমিলিয়ানো মার্তিনেসের। এক মিনিট পর ডি-বক্সের ভেতর থেকে হন কর্দোবার শট দূরের পোস্টে লেগে বাইরে চলে যায়। এরপর আরও দুই দফা আর্জেন্টিনার রক্ষণে হানা দেয় কলম্বিয়া। তবে লিসান্দ্রো মার্তিনেস, নিকোলাস তাগলিয়াফিকোদের রক্ষণ ভাঙতে পারেনি তারা।
আর্জেন্টিনা ২০তম মিনিটে বড় সুযোগ পায়। জায়গা বদলে বাম পাশে চলে আসেন আনহেল দি মারিয়া। তার ঠাণ্ডা মাথার ক্রস ডি-বক্সে পেয়ে বাম পায়ের শট করেন লিওনেল মেসি। কিন্তু আলভারেসের পায়ে লেগে গতি হারায় বল। ফলে সহজেই ঠেকিয়ে দেন কলম্বিয়া গোলরক্ষক কামিলো ভার্গাস।
খেলার ৩৩তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে আচমকা দূরপাল্লার শট নেন লের্মা। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে আঙুল ছুঁয়ে দুর্দান্ত সেভ দেন এমিলিয়ানো।
এদিকে দুই মিনিট পর ডি-বক্সের মুখে বল পেয়ে কলম্বিয়ার একজনের চ্যালেঞ্জের মুখে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইলাইনের কাছে পড়ে যান মেসি। চোট পান ডান পায়ে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে মাঠেই শুশ্রূষা নিয়ে নিজ পায়ে দাঁড়ান আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। বিরতির আগের বাকি সময়টায় তাকে খুড়াতে দেখা যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার বাড়ায় আর্জেন্টিনা। তবে শুরুতেই কর্দোবার ফ্লিকে বল পেয়ে ডি-বক্সের ডান পাশ থেকে সান্তিয়াগো আরিয়াসের ডান পায়ের শট অল্পের জন্য দূরের পোস্ট দিয়ে বাইরে চলে যায়। কিন্তু পরের মিনিটে ডি-বক্সের মধ্যে দারুণ জায়গায় পান আলেক্সিস মাক আলিস্তের। কিন্তু শট করতে পারেননি তিনি। তার আলতো টোকায় বল পেয়ে জোরাল শট করেন দি মারিয়া। খুব কাছ থেকে রুখে দেন কলম্বিয়া গোলরক্ষক।
ম্যাচের ৫৭তম মিনিটে দি মারিয়ার ক্রসে ডি-বক্সের মাঝ থেকে হেড করেন মাক আলিস্তের। কলম্বিয়ার এক ডিফেন্ডারের হাতে লেগে ফিরে আসে বল। তবে হাত সহজাত অবস্থানে থাকায় পেনাল্টি পায়নি আর্জেন্টিনা। পরের মিনিটে বাম পাশ থেকে দি মারিয়ার বাম পায়ের প্লেসিং শট বাম দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্ষিপ্রতায় ঠেকান ভারগাস। ৬২তম মিনিটে রদ্রিগেসের ফ্রি কিক থেকে ফিরতি বলে দূরপাল্লার শট নেন লের্মা। বারের অনেক ওপর দিয়ে চলে যায় বল।
এক মিনিট পর ডান পায়ের চোট ফিরে এলে মাঠে পড়ে যান মেসি। ফিজিও মাঠে ঢুকেই ইঙ্গিত করেন তাকে উঠিয়ে নেওয়ার। তার বদলে মাঠে নামেন নিকোলাস গনসালেস। কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়েন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। ডাগ আউটে বসেও কাঁদতে থাকেন মেসি। ৭০তম মিনিটে চোট পান মন্তিয়েল। তার জায়গায় নামানো হয় নাহুয়েল মোলিনাকে।
খেলার ৭৫তম মিনিটে ডি-বক্সের ভেতর থেকে আলতো টোকায় বল জালে জড়ান গনসালেস। কিন্তু তাকে পাস দেওয়া তাগলিয়াফিকো অফসাইডে থাকায় মেলেনি গোল। ৪ মিনিট পর রদ্রিগেসের ক্রসে ডি-বক্সের মাঝ থেকে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি কার্লোস কুয়েস্তা। দুই মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে বাম পাশে পাওয়া ফ্রি-কিক রক্ষণ দেওয়াল বরাবর মারেন রদ্রিগেস।
৮৮তম মিনিটে ডান পাশ থেকে লম্বা ক্রস দেন দি মারিয়া। বাম পাশে পোস্টের কাছাকাছি থেকে লাফিয়ে হেড করেন গনসালেস। অল্পের জন্য দূরের পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায় বল। সময়মতো কাছাকাছি আসতে না পারায় পা ছোঁয়াতে পারেননি আলভারেস।
মূল ম্যাচের শেষ দিকে কলম্বিয়া জালে বারবার ভীতি ছড়ায় আর্জেন্টিনা। এরপর যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে কলম্বিয়া ডিফেন্ডারের ভুলে ডি-বক্সের মধ্যে বল পেয়ে যান দি মারিয়া। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শট করতে পারেননি জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলতে নামা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। তৃতীয় মিনিটে দি মারিয়ার কর্নার কিক থেকে ক্রিস্তিয়ান রোমেরোর হেডে ডি-বক্সের মাঝে বল পান গনসালেস। কিন্তু তার শট চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। মূল ম্যাচের শেষ দিকে দুটি সুযোগ হারিয়ে অতিরিক্ত সময়ে যায় আর্জেন্টিনা।
Leave a Reply