ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় হেলিপকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি নিহত হওয়ার পর নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার ইরানের সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশটির ১৪তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে।
ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা এ তথ্য জানিয়েছে।
ইরনা জানিয়েছে, ইরানের সাংবিধানিক পরিষদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার (বর্তমানে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন), বিচার বিভাগের প্রধান গোলাম হোসেইন মোহসেনি-ইজেই এবং সংসদের স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ, পাশাপাশি আইন বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ দেহকান এবং ইরানের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
ইরানের সংবিধানের ১৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাহী শাখার দায়িত্ব নেবেন। এছাড়াও, অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট সর্বোচ্চ ৫০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে বাধ্য থাকিবে।
ইরনা আরো জানিয়েছে, ওই বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা নির্বাচনী প্রক্রিয়াগুলোর জন্য সময়সূচীও নির্ধারণ করেছেন। যার মধ্যে নির্বাহী প্রতিনিধি দল গঠন, প্রার্থীদের নিবন্ধন এবং নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করার সময় ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তফসিলের উপর ভিত্তি করে, নিবন্ধন ৩০ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত পরিচালিত হবে। যার পরে প্রার্থীরা ১২ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবে।
গত রোববার ভোরে আজারবাইজান সীমান্তে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সাথে একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন রইসি। আরাস নদীর ওপর দু-দেশের নির্মিত তৃতীয় বাঁধ এটি। ২০২৩ সালে তেহরানে আজারবাইজান দূতাবাসে বন্দুক হামলা ও ইসরাইলের সাথে আজারবাইজানের কূটনৈতিক সম্পর্কসহ দুই দেশের মধ্যে শীতল সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এই সফর অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সেখান থেকে ফেরার পথে ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি পাহাড়ি এলাকায় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রাইসি নিহত হন। একই দুর্ঘটনায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানেরও মৃত্যু হয়। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নিশ্চিত করেছে, রোববার তারা যে হেলিকপ্টারে ভ্রমণ করছিলেন, সেটি বিধ্বস্ত হলে তারা নিহত হন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত মন্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ ভাহিদি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ও তার সঙ্গীরা কয়েকটি হেলিকপ্টারে করে ফিরছিলেন কিন্তু খারাপ আবহাওয়া ও কুয়াশার কারণে একটি হেলিকপ্টার জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়।’
দুর্ঘটনার পর দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছিলেন, যাই হোক না কেন ইরান সরকারের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। প্রেসিডেন্ট মারা গেলে ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, খামেনির সম্মতিক্রমে ভাইস ফার্স্ট প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেবেন। ৫০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
ইরানের ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রইসি জয়ী হন, যে ভোটে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছিল। ১৯৮৮ সালে রক্তক্ষয়ী ইরান-ইরাক যুদ্ধ শেষে হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দীর মৃত্যুদণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে রইসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
৬৩ বছর বয়সী রইসি এর আগে দেশের বিচার বিভাগের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাকে খামেনির একজন অনুসারী হিসেবে দেখা হয়। কিছু বিশ্লেষক মনে করতেন, খামেনির মৃত্যু বা অবসর গ্রহণের পরে ৮৫ বছর বয়সী এ নেতার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন রইসি।
রইসির অধীনে ইরান এখন প্রায় উইপন-গ্রেড স্তরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শনের ক্ষেত্রে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করে।
সূত্র : ইরনা
Leave a Reply