গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার প্রতি বাইডেন প্রশাসনের সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পদত্যাগ করেছেন। ১ মে তিনি পদত্যাগ করেন বলে জানা গেছে। তিনি মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি ইহুদি বংশোদ্ভূতও ছিলেন।
মেজর হ্যারিসন মান বলেছেন, ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্র যে ’প্রায় আকুণ্ঠ সমর্থন’ দিয়ে যাচ্ছে, তার প্রতিবাদে তিনি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা বিভাগ (ডিআইএ) থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন, বাইডেন প্রশাসনের ওই সমর্থনের কারণেই ইসরাইলের পক্ষে গাজার লাখ লাখ নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা ও ক্ষুধায় মারতে পারছে ইসরাইল।
সোমবার লিনকেডইনে পোস্ট করা পদত্যাগপত্রে মান সংস্থা থেকে তার ’আকস্মিক বিদায়ের’ কারণ তার সহকর্মীদের কাছে ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বলেন, একটি পর্যায়ে হয় আপনাকে শিশুদের গণবুভুক্ষার নীতিকে সমর্থন করতে হবে, কিংবা না করতে হবে। আমি জানি, আমি সেটা করেছি। আমি আমার ছোট্ট প্রয়াসের মাধ্যমে তা করেছি।
মান ১৩ বছর ধরে মার্কিন সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন। তিনি তিউনিসে মার্কিন দূতাবাসে নিরাপত্তা সহযোগিতা কর্মকর্তা পদে কাজ করেন।
তিউনিসে দায়িত্ব পালনের পর তিনি ডিআইএতে মিডল ইস্ট গোয়েন্দা বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করেন। সর্বসম্প্রতি তিনি সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকান সেন্টারে ‘নির্বাহী কর্মকর্তা’ হিসেবে কাজ করেছেন।
গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধে মার্কিন সমর্থনের প্রতিবাদে এই প্রথম কোনো মার্কিন সেনাকর্মকর্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করলেন।
বাইডেন প্রশাসনের গাজা নীতির প্রতিবাদে এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দুই কর্মকর্তা প্রকাশ্যে পদত্যাগ করেছিলেন। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ পদাধিকারী ছিলেন যশ পল। তিনি মার্কিন অস্ত্র হস্তান্তর তদারকির সাবেক পরিচালক ছিলেন।
এছাড়া পররাষ্ট্রবিষয়ক কর্মকর্তা অ্যানেলে শেলাইনও পদত্যাগ করেছেন। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুই বছরের চুক্তিতে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি মার্চে পদত্যাগ করেন।
মান জানান, তিনি ডিআইএতে ছোট ভূমিকায় ছিলেন। তিনি ‘প্রশাসনিক বা প্রান্তিক’ কোনো কাজে ছিলেন না।
তিনি বলেন, গত মাসগুলো আমাদের সামনে সবচেয়ে নৃশংস ও হৃদয়বিদারক এমনসব ছবি হাজির করেছে, যা অকল্পনীয়। আমি এসব ছবি এবং আমার এখানকার দায়িত্বের মধ্যে সম্পর্ক অগ্রাহ্য করতে পারছিলাম না। এগুলো আমাকে অবিশ্বাস্য লজ্জা ও অপরাধে নিমজ্জিত করেছিল।
মান তার ইউরোপিয়ান ইহুদি রক্ত থাকার কথাও জানান। তিনি বলেন, জাতিগত নির্মূল অভিযানের দায়দায়িত্বের কথা তার মনে পড়েছে্
অবশ্য ইসরাইলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের কারণে মানই মার্কিন সামরিক বাহিনী থেকে প্রথম প্রতিবাদ করেছেন, এমন নয়।
গত ফেব্রুয়ারিতে ২৫ বছর বয়স্ক মার্কিন বিমানবাহিনীর সার্ভিসম্যান অ্যারন বুশনেল গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহূতি দেন। তিনি ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন’ স্লোগান দিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসরাইল দূতাবাসের সামনে নিজের গায়ে আগুন দেন। পরে তিনি মারা যান।
তবে মানের পদত্যাগ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ইসরাইলের প্রতি মার্কিন সমর্থন মার্কিন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে কিভাবে জটিলতা সৃষ্টি করছে, তার প্রকাশ্য পদত্যাগে তা প্রকাশ পেয়েছে।
সূত্র : আল জাজিরা, মিডল ইস্ট আই এবং অন্যান্য
Leave a Reply