রমজান মাসে কতদিন ছুটি থাকবে, কতদিন ক্লাস হবে- এটি ছাড়াও সারা বছরের ক্লাস, পরীক্ষা আর ছুটির দিনসহ শিক্ষাপঞ্জি তৈরি করা হয় শিক্ষবর্ষের শুরুতেই। এ বছরও তা-ই ছিল। হঠাৎ রমজান শুরুর এক মাস আগে এসে এই শিক্ষাপঞ্জি সংশোধন করে শিক্ষা প্রশাসন। এক দপ্তরের সঙ্গে আরেক দপ্তরের কোনো মিল ছিল না এই ছুটির সিদ্ধান্তে। ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্তের কারণে একাধিক শ্রেণিতে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা পড়েছেন বিপাকে।
জানা গেছে, ২০২৪ শিক্ষাপঞ্জি সংশোধন করে আসন্ন রমজানে শুরু থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে না। রমজানের প্রথম ১০ দিন পর্যন্ত খোলা থাকবে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে ১৫ রমজান পর্যন্ত। তবে রমজানজুড়ে ছুটি থাকবে মাদ্রাসায়।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত পৃথক অফিস আদেশ জারি করেছে দুই মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশে জানানো হয়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ছুটির তালিকা ও শিক্ষাপঞ্জি আংশিক সংশোধন করে আসন্ন পবিত্র রমজানের প্রথম ১০ দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণে বার্ষিক ছুটির তালিকা সংশোধন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম ১০ দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখার কথা জানানো হয়েছে।
ওই দিন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ছুটির তালিকা ও শিক্ষাপঞ্জি আংশিক সংশোধনক্রমে আগামী ১১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত মোট ১৫ দিন সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের শ্রেণি কার্যক্রম চালু রাখা হবে।
ভিন্ন ভিন্ন ছুটির অফিস আদেশ প্রসঙ্গে রাজধানীর একটি স্বনামধন্য স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষা প্রশাসনের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। আমার স্কুলে অনেক অভিভাবক আছেন, যার দুই বাচ্চার একজন প্রাইমারিতে, অন্যজন হাইস্কুলে পড়ে। এখন এক বাচ্চার ছুটি, অন্য বাচ্চার ক্লাস চলমান থাকলে ওই পরিবার দোটানায় পড়ে যায়। যেমন- প্রাইমারির বাচ্চাটির স্কুল ছুটি হলে তাদের গ্রামে চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু দুই বাচ্চা দুই শ্রেণিতে পড়ায় তারা এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।
এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, নতুন কারিকুলাম চালু হয়েছে। সরকার শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ছুটি কমিয়ে এনেছে। এতে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে আমাদের সময়কে বলেন, আগে শুনতাম রমজানে শহরের যানজট কমানোর জন্য সরকার সবার আগে স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করত। এখন হঠাৎ করে ছুটি কমিয়ে ক্লাস চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। রোজার শুরুতেই বেশি যানজট তৈরি হয়। আমাদের স্কুল সময়ে বেশি যানজটে পড়তে হয়। রোজা রেখে বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া বেশি কষ্টকর।
বাংলাবাজার সরকারি বালিকা স্কুলের এক অভিভাবক জানান, তার দুই সন্তান। একজন তৃতীয় শ্রেণিতে, অন্যজন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। এখন তৃতীয় শ্রেণিতে যে পড়ে তার ছুটি হলেও তারা গ্রামের বাড়ি যেতে পারছেন না। সপ্তম শ্রেণির ক্লাস চালু থাকছে। এমন সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে কেন? সব শ্রেণির ছুটি ক্লাস একসঙ্গে চালু বন্ধ হওয়া উচিত।
ভিন্ন ছুটি কেন? প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের এমন প্রশ্ন করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত তারা বাস্তবায়ন করছে মাত্র।
জানা গেছে, গত ১২ ডিসেম্বর প্রকাশিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২৪ সালের ছুটির তালিকা অনুযায়ী- ১১ মার্চ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ছিল। পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতর, গ্রীষ্মকালীন অবকাশ, জাতীয় শিশু দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডেসহ বেশ কিছু সরকারি ছুটির সমন্বয়ে দীর্ঘ এ সময় ক্লাস বন্ধ রাখার কথা ছিল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ১৫ দিন সব সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম, অর্থাৎ ক্লাস চালু থাকবে।
এদিকে মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের অফিস আদেশে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের সংশোধিত ছুটির তালিকা ও শিক্ষাপঞ্জি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, পুরো রমজান মাস বন্ধ থাকবে সরকারি ও বেসরকারি (স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি, দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল) মাদ্রাসা।
ছুটির তালিকা ও শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী- ২০২৪ সালে দেশের তিনটি সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা এবং বেসরকারি সব মাদ্রাসায় ৭১ দিন ছুটি থাকবে। ৭ মার্চ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত পবিত্র রমজান, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, স্বাধীনতা দিবস, ঈদুল ফিতরসহ কয়েকটি সরকারি ছুটি মিলিয়ে টানা ৩০ দিন (সাপ্তাহিক বন্ধ বাদে) ছুটি থাকবে। তবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে নিজস্ব রুটিনে চলবে রমজানে ক্লাস, পরীক্ষা ও ছুটি।
Leave a Reply