বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপ নেওয়া করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নজির স্থাপন করেছে সাড়ে নয় কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশ ভিয়েতনাম। চীনের সঙ্গে দীর্ঘ স্থল সীমান্ত দিয়ে ভিয়েতনামের অধিকাংশ ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পাদিত হলেও দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্তে সংখ্যা মাত্র ৩২৮! আর করোনাভাইরাসে মৃত মানুষের সংখ্যা- ০।
মাত্র তিন সপ্তাহ সারা দেশ লকডাউন থাকার পর গত এপ্রিলের শেষ দিকে তুলে দেওয়া হয়েছে লকডাউন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সবই চলছে পুরোদমে।
ভিয়েতনামের একটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা
অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে ভিয়েতনামের সাফল্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন। যেভাবে এ মহামারি মোকাবিলা করেছে ভিয়েতনাম তা উঠে এসেছে এ প্রতিবেদনে।
সময়ের আগেই পদক্ষেপ
চীন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখন নিশ্চিত ছিল না এ ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় কি না তখন থেকেই পদক্ষেপ নিয়েছে ভিয়েতনাম। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকের উহানে করোনার উপস্থিতি জানতে পেরে জানুয়ারির শুরুতেই সতর্কতা অবলম্বন করেছে ভিয়েতনাম সরকার। জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে স্থল ও বিমানবন্দরে মেডিকেল কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা চালু করা হয়। এরপর ২৩ জানুয়ারি প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার সারা দেশে মহামারি ঘোষণা করে চীনের সঙ্গে সকল বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
হ্যানয় শহরের একটি বাজার
হ্যানোর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড এপিডেমিওলজির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপ-প্রধান ফ্যাম কোয়াং থাই বলেন, আমরা কেবল বিশ্ব স্বাস্থ্যর নির্দেশিকার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম না। আমরা যে ডেটা সংগ্রহ করেছি তার ভিত্তিতে দেশের বাইরে ও অভ্যন্তরে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
কঠোর স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই ভিয়েতনাম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বেশ কড়াকড়ি ব্যবস্থা নিয়েছিলো। ফেব্রুয়ারি ১২ তারিখ ভিয়েতনামে লকডাউন আরোপ করা হয়।এর পাশাপাশি প্রথম থেকেই দেশজুড়ে টেস্টিং এবং কনট্যাক্ট ট্রেসিং (আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে কারা কারা এসেছিল) এর ব্যবস্থা নিয়েছিল ভিয়েতনাম। কোন এলাকায় মাত্র একটি সংক্রমণ ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো এলাকা লকডাউন করে দেয়া হয়েছে।
রাজধানী হ্যানয়
তাদের সব বিমানবন্দরে যাত্রীদের কঠোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা চালু করা হয়েছিল। বিমানবন্দরে এসে নামা যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হতো এবং তাদেরকে একটি স্বাস্থ্য-ফর্ম পূরণ করতে হতো। সেই ফর্মে যাত্রীদের উল্লেখ করতে হতো তারা কার কার সংস্পর্শে এসেছে, কোথায় কোথায় গিয়েছে।
কঠোর কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা
ভিয়েতনাম দ্বিতীয় জোর দিয়েছিল কঠোর কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা চালুর ওপর। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে যে সমস্ত ভিয়েতনামী নাগরিক বিদেশ থেকে ফিরেছে তাদেরকে আসার পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছে এবং কোভিড-নাইনটিনের জন্য টেস্ট করা হয়েছে। ভিয়েতনামে আসা বিদেশিদের বেলাতেও এই একই নীতি নেওয়া হয়। দেশের ভেতরেও একটি বড় নগরী থেকে আরেকটি বড় নগরীতে যেতে হলে সেখানে একই ধরণের কোয়ারেন্টিনের নীতি চালু রয়েছে।
জনগণকে সচেতন করা
ভিয়েতনামের সাফল্যের জন্য গবেষকরা তৃতীয় যে বিষয়টির উল্লেখ করছেন, সেটি হচ্ছে তাদের সফল যোগাযোগ ব্যবস্থা। শুরু থেকেই সরকার এই ভাইরাসটি যে কতো মারাত্মক সে ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন এবং তাদের বার্তাটি ছিল স্পষ্ট। কোভিড-নাইনটিন শুধু একটা খারাপ ধরনের ফ্লু নয়, তার চাইতেও মারাত্মক কিছু এবং জনগণকে তারা পরামর্শ দিয়েছিল কোনোভাবেই যেন তারা নিজেদের ঝুঁকির মধ্যে না ফেলে।
Leave a Reply