1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৯ অপরাহ্ন

আদালতের সঙ্গে আরাভের প্রতারণা

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২০ মার্চ, ২০২৩
পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার প্রধান আসামি বহুল আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে আরাভ খান আদালতের সঙ্গেও প্রতারণা করেছিলেন।

মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান জনৈক মো. আবু ইউসুফকে নিজ নাম মো. রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয় দাবি করে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর আদালতে আত্মসমর্পণ করিয়ে জামিনের প্রার্থনা করেন। আদালত

তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এরপর ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মো. আবু ইউসুফের পিতা মো. নুরুজ্জামান দরখাস্ত দিয়ে তার ছেলে মো. আবু ইউসুফ ওই মামলার আসামি নয় মর্মে দাবি করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের প্রতিবেদন তলব করেন। পরে গোয়েন্দা পুলিশ মো. আবু ইউসুফ নিজের পরিচয় গোপন করে ওই মামলার প্রকৃত আসামি মো. রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয়ের নাম ধারণ করে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।

ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফয়সাল আতিক বিন কাদের ওই ঘটনায় আসামি মো. রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয় এবং মো. আবু ইউসুফসহ অন্য জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন। ওই ঘটনায় রবিউল ইসলাম ও মো. আবু ইউসুফের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়।

এদিকে এ মামলায় ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফয়সাল আতিক বিন কাদের ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন। এরপর ২০২২ সালের ২৮ জুলাই এ মামলায় বাদী নিহতের ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান আদালতে আংশিক সাক্ষ্যও দিয়েছেন। মামলায় আগামীকাল ২১ মার্চ পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য আছে।

এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমান ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল সিএমএম আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন।

আরাভ খান ছাড়া মামলাটিতে আরও ৯ জন আসামি রয়েছেন। মামলাটি বর্তমানে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন হয়ে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে মামলার বাদী নিহতের ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান আদালতে সাক্ষ্যও দিয়েছেন।

মামলার অপর আসামিরা হলেন- রবিউলের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া (২১), ইমরানের বন্ধু রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দিদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১), সারোয়ার হোসেন (২৩) এবং দুই কিশোরী মেহেরুন নেছা স্বর্ণ ওরফে আফরিন ওরফে আন্নাফী (১৬) ও ফারিয়া বিনতে মীম ওরফে মাইশা (১৬)। আসামিদের মধ্যে রবিউল ও সুরাইয়া পলাতক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় আন্নাফী ও মাইশা জামিনে আছেন এবং অপর আসামিরা কারাগারে রয়েছেন।

২০১৮ সালের ৯ জুলাই গাজীপুরের জঙ্গল থেকে মামুন ইমরান খানের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় মামুনের ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

চার্জশিটে বলা হয়, টেলিভিশনে ক্রাইম ফিকশন অনুষ্ঠানে আসামি রহমত উল্লাহর সঙ্গে অভিনয়ের সূত্র ধরেই মামুন ইমরান খানের পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব। ওই দুজনের সঙ্গে অভিনয় করত কিশোরী মেহেরুন নেছা স্বর্ণা। ওই চক্রের প্রধান রবিউলের স্ত্রী কেয়া জানায়, রহমত উল্লাহর অনেক টাকা আছে। তাকে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করা সম্ভব। ওই কিশোরী পূর্বপরিকল্পিতভাবে রহমত উল্লাহকে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করতে জন্মদিনের কথা বলে ফোন দিয়ে আসতে বলেন। ফোন পেয়ে রহমত উল্লাহ পরিদর্শক মামুন ইমরানকেও ওই অনুষ্ঠানে আসতে আমন্ত্রণ জানায়। ইমরান ও রহমাত উল্লাহ ২০১৮ সালের ৮ জুলাই বনানীর ওই বাসার নিচে এলে ওই কিশোরী দুই মহিলাসহ নিচে আসেন। সে একজনকে বোন এবং একজনকে ভাবী বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। এরপর তাদের বাসার ভেতরে নিয়ে যায়। বাসায় গিয়ে তারা দেখেন, জন্মদিনের কোনো আয়োজনই নেই। তখন রহমত উল্লাহ ওই কিশোরীকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের নাকি বার্থডে পার্টি, কিন্তু তার তো কিছু দেখছি না।’ তখন চক্রের প্রধান রবিউলের স্ত্রী কেয়া বলেন, ‘প্রতিদিন তাদের বার্থডে পার্টি এ রকমই হয়। একটু পরই দেখতে পাবেন।’ কেয়া ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আসামি স্বপন, দিদার, আতিক ও মিজান আসে। তারা মামুন ও রহমতের উদ্দেশে বলেন, ‘বাজে উদ্দেশ্য নিয়ে তোরা এখানে এসেছিস। তখন ইমরান ওই কথার প্রতিবাদ করলে সঙ্গে সঙ্গে ওই চারজন ইমরানকে মারতে শুরু করেন। আসামি স্বপন, আতিক ও দিদার বলে, ‘ওদের হাত-পা বেঁধে ফেলো। মেয়েদের সঙ্গে ছবি তুলে টাকা আদায় করা হবে।’ তখন ইমরানকে চেপে ধরে স্বপন, আতিক ও দিদার। স্কচটেপ দিয়ে হাত-পা বাঁধেন দিদার ও স্বপন। আসামি মিজান মুখ চেপে ধরলে ইমরান তার হাতে কামড় দেন। তখন মিজান ও দিদার পেছন থেকে ইমরানের ঘাড়ে আঘাত করেন এবং আতিক সজোরে লাথি মারলে ইমরান অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তখন রহমত উল্লাহকেও হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়।

চার্জশিটে বলা হয়, রাত ১২টার দিকে স্বপন বলে, ইমরানের হাত-পা কেমন শক্ত মনে হচ্ছে। তখন প্রধান আসামি রবিউলকে সে ওই তথ্য মুঠোফোনে জানায়। এরপর রবিউলের পরামর্শে আসামি স্বপন, আতিক ও দিদার ধারালো অস্ত্র দিয়ে মামুনের পায়ের আঙুল কেটে রক্ত বের না হওয়ায় তারা নিশ্চিত হন পুলিশ কর্মকর্তা ইমরান মারা গেছেন। স্বপন আর দিদার তখন রবিউলকে ফোন দিয়ে বড় একটা ট্রলি বা বস্তা নিয়ে আসতে বলেন। সকাল সাতটায় আসামি স্বপন, দিদার ও আতিক লিফটে করে মামুনের লাশ নিচে নিয়ে এসে রহমত উল্লাহর প্রাইভেট কারের পেছনে রাখে। রহমত উল্লাহ গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায়। গাড়িতে দিদার, আতিক, স্বপন ও মিজান ছিল। প্রধান আসামি রবিউল সামনে মোটরসাইকেলে ছিল। গাড়িটি বনানী থেকে আবদুল্লাহপুর যাওয়ার পথে বাঁশঝাড় দেখে আসামি স্বপন রহমত উল্লাহকে গাড়ি থামাতে বলেন। তখন গাড়ি থেকে লাশ বাঁশঝাড়ের মধ্যে নিয়ে আতিক লাশের গায়ে পেট্রোল ঢালে এবং স্বপন আগুন দেয়। এরপর রহমত উল্লাহ গাড়ি চালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন।

চার্জশিটে আরও বলা হয়, বিত্তবানদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করাই ছিল ওই চক্রের কাজ। যার প্রধান রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com