1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন

ইরাকে বেশির ভাগ অবৈধ শ্রমিক ‘দৌড়ের ওপর’

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২৩

মধ্যেপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইরাকের রাজধানী বাগদাদ, বসরাসহ বিভিন্ন প্রদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের বেশির ভাগ রয়েছেন অনেকটা দৌড়ের ওপর। মূলত আকামা না থাকার কারণে তারা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছে না। যার কারণে পুলিশ দেখলেই তাদের দৌড়ে পালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। অথচ এসব হতভাগ্য শ্রমিক দালালের প্রলোভন আর খপ্পরে পড়ে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে পাড়ি জমিয়েছে এই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে।
অভিযোগ রয়েছে- ঢাকা থেকে বৈধভাবে যাওয়ার পর কিছু শ্রমিক শুধু পাসপোর্ট নবায়ন না হওয়ার কারণে অবৈধ হয়ে পড়ছেন। আর প্রতিনিয়ত পুলিশের অভিযানে এসব শ্রমিকের কেউ কেউ ধরা পড়ছেন। যাদের অনেকেই এখন দেশটির বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন। তারা দূতাবাসের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ইরাকে কষ্টে থাকা শ্রমিকরা দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কর্মীদের আকামার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের ক্ষোভ সবচেয়ে বেশি বলে শ্রমিকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ দিকে ইরাকে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে সম্প্রতি প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের সর্তকবার্তা দিয়ে জানানো হয়েছে, শুধু ফটোকপি দিয়ে পাসপোর্ট নবায়নের কোনো সিদ্ধান্ত দূতাবাস থেকে নেয়া হয়নি। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কারো পাসপোর্ট হারানো গেলে পুলিশ প্রতিবেদনসহ দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করা যাবে। এরপরও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার করে সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে মর্মে দূতাবাসের নজরে এসেছে। এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য এবং যেকোনো প্রয়োজনে দূতাবাসের সাথে যোগাযোগের জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ইরাকের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এমন সতর্ক বার্তা প্রকাশ করার পর থেকেই ক্ষুব্ধ ইরাক প্রবাসী বাংলাদেশীরা পক্ষে-বিপক্ষে নানা ধরনের মন্তব্য করছেন দূতাবাসের খোলা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

সজিব নামের একজন শ্রমিক বলেন, দূতাবাসের সতর্কবার্তা ঠিক আছে। অনেকে পাসপোর্ট রেখে কাজ ফেলে চলে আসে, বিভিন্ন রকম অপরাধ করে পাসপোর্ট হারায়, এই সতর্ক বার্তা তাদের জন্য। মোহাম্মদ মোস্তফা মাহমুদ তার মন্তব্য উল্লেখ করেন, “আপনারা যখন আইন করেন তখন কি ‘গাঁজা খেয়ে’ আইন করেন! মানুষ কোনো হুন্ডিতে টাকা পাঠাইবে? পাশের দেশ ভারত, ৭০-৮০ হাজারে বিদেশে লোক পাঠাতে পারে, আমাদের বেলায় কেন চার-পাঁচ লাখ টাকা লাগে। আসার পর আবার কোনো কোনো দেশের মালিকরা কফিলকে টাকা দেয়। এর মধ্যে যারা বিদেশে আসে তাদের বেশির ভাগই সুদে ঋণ করে আসে। যা তুলতে দুই থেকে তিন বছর সময় লেগে যায়।

এসব কারণে অনেকে ইলিগ্যাল হয়ে যায়। ইরাকের বাগদাদ, কারবালা, নাজাফ, বসরা, কারকুক, মোহশেল, আম্বারসহ অনেক এলাকায় তো আকামা দেয় না। কই আপনারা তো পারেন না (দূতাবাস) আমাদের আকামার ব্যবস্থা করে দিতে। শুধু পারেন লম্বা লম্বা কথা বলতে।’’ তার মতে, শ্রমিকরা হুন্ডিতে টাকা পাঠায় দু’টি কারণে। এক আকামা নেই, দুই অন্যের কাজ করে সময় কম দেয়। রুবেল শেখ বলেন, অ্যাম্বাসির লোকেরাও জানে এই দেশে পুলিশ প্রতিবেদন আনতে যাওয়া কতটা কষ্টের। তারপরেও এরা মজা করে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমার সাথে কাজ করে পাকিস্তানের নাগরিক। সে সীমান্ত দিয়ে এসেছে। সেও ওদের অ্যাম্বাসিতে গিয়ে ২৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট বানিয়ে নিয়ে এসেছে। চুল পরিমাণও সমস্যা হয়নি। সালাউদ্দিন প্রধান দূতাবাসের উদ্দেশে বলেন, তোমরা কি শুধু পাসপোর্ট নিয়েই ভাবো, নাকি ইরাক প্রবাসী ভাইদের কিভাবে বৈধ করা যায়, তা নিয়ে একটু হলেও চিন্তাভাবনা করো। মোহাম্মদ শামীম নামের একজন প্রবাসী তার ক্ষোভের কথা বলতে গিয়ে বলেন, যেই দেশে প্রবাসীরা পুলিশ দেখলেই দৌড়ের ওপর থাকে সেই দেশে তারা কিভাবে পুলিশ প্রতিবেদন সংগ্রহ করবে? এসব হয়রানিমূলক কার্যকলাপ বন্ধের কথা বলেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে নাঈম ইসলাম বলেন, ভালোবাসার আরেক নাম ইরাকের বাংলাদেশ দূতাবাস! খায়রুল ইসলাম বলেন, চয় মাস হয়ে গেলেও তারা এখনো আমার পাসপোর্ট দিতে আসেনি। এরপর অপেক্ষা নামের একজন ক্ষোভ করে বলেন, যে দেশে সারা দিন পুলিশের তাড়ার ওপর থাকি, সেখানে আবার কিভাবে পুলিশের ডকুমেন্ট আনব। সুমন নামের একজন জানতে চান, প্রতিদিন লোক ধরতাছে। তোমরা কী করো বসে বসে? মুহাম্মদ সরোয়ার বলেন, আপনারা তো সবকিছু জানেন, ইরাক প্রবাসীদের চলাফেরা করা খুবই কঠিন হয়। তার মধ্যে পুলিশ প্রতিবেদন কিভাবে সম্ভব? ফটোকপি দিয়ে পাসপোর্ট বানানোর একটা পথ বের করলে ভালো হতো বলে মতামত ব্যক্ত করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ইরাকে বৈধভাবে শ্রমিক যাওয়ার হার খুবই কম। সর্বশেষ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত বৈধভাবে পাড়ি জমিয়েছে ৫৪ জন। এর মধ্যে নভেম্বর মাসে গেছে দু’জন। তবে দালালদের মাধ্যমে ঢাকা থেকে আকাশপথে দুবাই হয়ে ইরাকে পপ্রবেশ করছে অধিকাংশ লোক। যাদেরকে বৈধ করে নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এর সাথে উচ্চ বেতনের কথা বলে নেয় দুষ্ট চক্র। দেশটিতে অবৈধভাবে কী পরিমাণ শ্রমিক রয়েছে তা জানা না গেলেও দুই লাখেরও বেশি শ্রমিক রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই চক্রের সাথে বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক বা তাদের কোনো প্রতিনিধির কোনো সম্পৃত্ততা রয়েছে কি না সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করা উচিত বলে মনে করছেন অভিবাসন বিশ্লেষকরা। একই সাথে যেসব শ্রমিক বর্তমানে দেশটির বিভিন্ন কারাগারে আটকে থেকে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে তাদের মুক্ত করার জন্য দূতাবাস থেকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে সচেতন মহল মনে করছে।

ইরাকে পাড়ি জমানোর পর আকামা না হওয়ার সমস্যার বিষয় জানতে গতকাল ইরাকে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করার পরও শ্রম কাউন্সেলরের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com