সেরা তিনে থাকা হলো না মরক্কোর। চতুর্থ স্থানে থেকেই স্বপ্নের কাতার বিশ্বকাপ শেষ করল আফ্রিকান মুসলিম দেশটি৷ আজ তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে মরক্কোকে ২-১ গোলে হারিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। ফলে গতবারের রানার্সআপরা এবার তৃতীয়স্থানে থেকে ব্রোঞ্জপদক নিয়েই দেশে ফিরবে।
আজ ম্যাচের ৭ মিনিটের মাথায় গুয়ার্ডিওলের গোলে এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। তবে সেই আনন্দ ধরে রাখতে পারেনি তারা, দুই মিনিটেরও কম সময়ে আশরাফ দারির গোলে সমতায় ফেরে মরক্কো। অবশ্য ৪৩ মিনিটের মাথায় ফের ক্রোয়েশিয়াকে এগিয়ে নেন মিসলাভ ওরিসিচ। দ্বিতীয়ার্ধে কোনো দলই আর গোল করতে পারেনি। ফলে ২-১ গোলে জয় পায় ক্রোয়েটরা।
সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে ফাইনাল খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় ক্রোয়েশিয়ার। আর ফ্রান্সের কাছে হেরে ইতিহাসকে আরো সমৃদ্ধ করার দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছিল মরক্কোও। তৃতীয় স্থান দখলের লড়াইয়ে কাতারের খলিফা ইন্টারনশ্যানাল স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় মরক্কো-ক্রোয়েশিয়া।
আজকের ম্যাচ ক্রোয়েশিয়ার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বর্তমান ফুটবলের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার ও দলটির অধিনায়ক লুকা মদ্রিচের বিশ্বকাপে এটিই ছিল শেষ ম্যাচ। আগামী বিশ্বকাপে দেখা যাবে না ৩৭ বছর বয়সী এই ব্যালন ডি অর জয়ী তারকাকে।
ম্যাচের শুরু থেকেই দু`দলের খেলা জমে উঠতে শুরু করে। ম্যাচের প্রথমেই মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিম বোনো বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে ভুলে নিজেদের জালেই জড়িয়ে দিচ্ছিলেন। যদিও অল্পের জন্য আত্মঘাতী গোলের হাত থেকে রক্ষা পায় মরক্কো। অবশ্য ৭ মিনিটের মাথায় ক্রোয়েশিয়াকে এগিয়েই দেন ডিফেন্ডার জোসকো গুয়ার্দিওল। লুকা মদ্রিচের ফ্রিকিক থেকে বল পেয়ে যান ইভান পেরেসিচ। পেরেসিচের ক্রস থেকে বল পেয়ে মাথা ঠেকিয়ে হেডে গোল করেন তিনি।
তবে ম্যাচে ফিরতে মরক্কোর সময় লেগেছে কেবল ২ মিনিট। তাদের হয়ে গোল শোধ করেন আশরফ দারি। জোসকো গুয়ার্ডিওলের ভুলে ফ্রিকিক পেয়ে যায় মরক্কো। যদিও হাকিম জিয়েখ খুব ভালো শট নিতে পারেননি। তার শটে মায়েরের গায়ে লেগে বল ফিরে এলে সেই বলে মাথা ছুঁইয়ে লক্ষ্যভেদ করেন আশরাফ দারি।
ম্যাচের ২৪ মিনিটের মাথায় লিড নেয়ার সুযোগ এসেছিল ক্রোয়েশিয়ার সামনে। ডিবক্সের প্রান্ত থেকে বল পেয়ে শট নেন লুকা মদ্রিচ। সেই শট মরক্কোর রক্ষণভাগ তড়িঘড়ি করে আটকে দিলেও বল মাঠেই ফিরে আসে। লুজ বল পেয়ে যান ইভান পেরিসিচ। খুব কাছে থেকে ট্যাপ ইনে গোল করার সুযোগ পেলেও কোনোমতে তাকে আটকে বিপদ সামাল দেন মরোক্কান গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো।
৩৭ মিনিটের মাথায় কর্ণার থেকে হাকিম জিয়েখের বিপদজনক ক্রস থেকে গোল হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। অনেকটা উচুতে লাফিয়ে উঠেছিলেন সোফিয়ানে বাউফল। কিন্তু বলে ঠিকঠাক মাথা লাগাতে ব্যর্থ হন তিনি।
৪৩ মিনিটতম সময়ে মাঝমাঠ থেকে মায়েরের কাছ থেকে বল পেয়ে যান মার্কো লিভাজা। তিনি বল বাড়িয়ে দেন বক্সের বা দিকে থাকা মিসলাভ ওরসিচের দিকে। সেখান থেকে নিখুঁত শটে ক্রোয়েশিয়ার জালে বল জড়ান ওরিসিচ। বিশ্বকাপে এটিই তার প্রথম গোল।
দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখে ক্রোয়াটরা। ৪৭ মিনিটের মাথাতেই দ্বিতীয় গোলের সুযোগ এসেছিল ওরিসিচের সামনে। বা দিক থেকে কাট ইনসাইড করে শট নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সময়মত সামনে এসে বল ডিফ্লেক্ট করে দেন এল ইয়ামিক। বারের বাইরে দিয়ে চলে যায় বল। ম্যাচের প্রথম ৬০ মিনিটে ক্রোয়েশিয়া নেওয়া ১০টি অ্যাটেম্পটেড শটের পাঁচটিই নিয়েছেন ওরিসিচ। একইসময়ে পায়ে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়েন ক্রোয়েট মিডফিল্ডার আন্দ্রে ক্রামারিচ।
৭৪ মিনিটের মাথায় বল নিয়ে মরক্কোর ডিবক্সে ঢুকে পড়েন গুয়ার্দিওল। গোলকিপারের সাথে ওয়ান-অন-ওয়ান পজিশনে ছিলেন তিনি। তবে তিনি শট নেয়ার আগেই বাম পা দিয়ে তাকে ট্যাকেল করে মাটিতে ফেলে দেন আমরাবাত। ক্রোয়েশিয়ার পেনাল্টি পাওয়ার সম্ভাবনা জেগে উঠলেও ভিএআর দ্বারা চেকিং-এর পরে দলটিকে পেনাল্টি দেন নি রেফারিরা।
কিছুক্ষণের ভেতরের পালটা জবাব দিতে আক্রমণে যায় মরক্কো। হাফ ভলি শটে প্রায় ক্রোয়েশিয়ার জালে বল ঢুকিয়ে দিচ্ছিলেন এন নেসেরি, তবে দুই হাত প্রসারিত করে বল আটকে দারুণ সেভ দেন ক্রোয়েট গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। বিপরীতে শেষদিকে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করলেও আর গোল করতে পারেনি মরক্কো। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরেও আর সমতায় ফিরতে পারেনি দলটি।
ফলে এবারের বিশ্বকাপে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ের শিষ্যদের। তবে মরক্কোর রূপকথার গল্পের মত এই বিশ্বকাপযাত্রা ফুটবলপ্রেমীদের মনে নিঃসন্দেহে গেঁথে থাকবে দীর্ঘ দিন। বিপরীতে আজকের ম্যাচে জয় নিয়ে চলতি বিশ্বকাপে তৃতীয় হয়ে ব্রোঞ্জপদক জিতে নায়কোচিতভাবেই দেশে ফিরবে ক্রোয়েটরা।
Leave a Reply