কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করল আসরের অন্যতম ফেভারিট দল ইংল্যান্ড। নকআউট পর্বের আজকের ম্যাচে তারা সেনেগালকে হারায় ৩-০ গোল ব্যবধানে। আজ দোহার আল বায়েত স্টেডিয়ামে শেষ ষোলোর দ্বৈরথে মুখোমুখি হয়েছিল ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও ‘এ’ গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় হয়ে ওঠা সেনেগাল। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এবারই প্রথম একে অপরের বিরুদ্ধে খেলেছে এই দুই দল।
ম্যাচের প্রথম ৩০ মিনিটে খেলা দোদুল্যমান অবস্থায় থাকলেও এরপরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় থ্রি লায়নসরা। ৩৮ মিনিটতম সময়ে জর্ডান হেন্ডারসন ও অতিরিক্ত সময়ে ইংলিশদের অধিনায়ক হ্যারি কেইনের গোলে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধের বিরতিতে যায় ইংল্যান্ড।
৫৮ মিনিটের সময়ে তৃতীয় গোলটি করেন বুকায়ো সাকা। ম্যাচের ৬২ শতাংশ সময় বল ছিল তাদের পায়েই। সেনেগালও আক্রমণের চেষ্টা চালিয়েছে বারবারই, কিন্তু তাদের ভোঁতা আক্রমণের সামনে অক্ষত থেকেছে ইংলিশদের রক্ষণদুর্গ। ১০টি অ্যাটেম্পটেড শটের ভেতর তারা কেবল একটি শটই অন টার্গেটে রাখতে পেরেছিল।
ইংল্যান্ডের শুরুর একাদশে আজ ছিলেন না আগের ম্যাচগুলোয় দুর্ধর্ষ পারফর্ম করা মার্কাস র্যাশফোর্ড। তবে বেঞ্চে ছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত কারণে আজ দলে ছিলেন না রহিম স্টার্লিং।
মাত্র চতুর্থ মিনিটের মাথায়ই গোলের সুযোগ তৈরি হয়েছিল সেনেগালের। ইংল্যান্ডের মিডফিল্ডে ফাঁকা জায়গা খুঁজে পেয়ে বল নিয়ে দৌড়ে যান বৌলায়ে দিয়া। তবে ইংলিশ ডিফেন্ডার হ্যারি ম্যাগুয়েরে ও গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড তাকে থামিয়ে দেন।
এই একটি সুযোগ ছাড়া প্রথম ১৫ মিনিট সেনেগালকে বেশ চাপেই রেখেছিল ইংল্যান্ডের আক্রমণ ভাগ। তবে ২১ মিনিটের মাথায় প্রায় গোল খেয়ে বসছিল ইংল্যান্ড। হ্যারি ম্যাগুয়েরের ব্যাক পাস থেকে বল পেয়ে যান সেনেগালের ফরোয়ার্ড দিয়াত্তা। তার ক্রস ঠিকমতো রিসিভ করতে পারেননি বৌলায়ে দিয়া। তার শটে তবুও বল চলে আসে ইংল্যান্ডের বারের সামনে। সেখান থেকে গোল করার সুযোগ এসেছিল সেনেগালিজ ফরোয়ার্ড ইসমাইলা সারের সামনে। কিন্তু ইংলিশ ডিফেন্ডার জন স্টোনস এসে তাকে ঠেকানোর চেষ্টা করলে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি তিনি। অগোছালো শটে বল চলে যায় বারের একেবারে ওপর দিয়ে।
৩১ মিনিটের মাথায় প্রথম গোলমুখী শট নেয় সেনেগাল। বুকায়ো সাকার পাস থেকে বল পেয়ে গিয়েছিলেন ইসমাইলা সার। তিনি বল বাড়িয়ে দেন ডিবক্সের ধারে থাকা ডিয়ার দিকে। বাম দিক থেকে তার নেওয়া শট বহুকষ্টে থামান জর্ডান পিকফোর্ড।
এরপর থেকে বাড়তে থাকে ইংল্যান্ডের আক্রমণের ধার। পরিকল্পিত ও গোছানো আক্রমণে অবশেষে ডেডলক ভাঙে ইংল্যান্ডই। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে জুড বেলিংহ্যাম ঢুকে যান সেনেগালের ডি বক্সের ভেতরে। সেখান থেকে তার বাড়ানো ক্রসে বাঁ পা দিয়ে শট নিয়ে ম্যাচের প্রথম গোলটি করেন জর্ডান হ্যান্ডারসন। আর প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে ফিল ফোডেনের অ্যাসিস্ট থেকে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইন। এটি এ বিশ্বকাপে তার প্রথম গোল।
দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণ অব্যাহত রাখে ইংল্যান্ড। ৫৮ মিনিটের মাথায় বুকায়ো সাকার গোলে ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় তারা। লেফট উইং থেকে ফিল ফোডনের বাড়ানো ক্রস রিসিভ করে আলতো করে পা ছুঁইয়ে এডুয়ার্ড মেন্ডিকে পরাস্ত করে সেনেগালের জালে বল জড়ান সাকা। এটি বিশ্বকাপে তার তৃতীয় গোল।
৬৫ মিনিটের মাথায় বুকায়ো সাকা ও ফিল ফোডেনের পরিবর্তে খেলতে নামেন মার্কাস র্যাশফোর্ড ও জ্যাক গ্রিলিশ। ইংল্যান্ডের জার্সিতে এটি ছিল র্যাশফোর্ডের ৫০তম ম্যাচ।
৭৪ মিনিটের একবার ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়েছিল সেনেগাল। কিন্তু ৩০ গজ দূর থেকে ফ্রি কিক পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি তারা। পেপে সারের নিচু করে নেয়া শটে বল গড়িয়ে যায় বারের পাশ দিয়ে।
৩ গোলে পিছিয়ে পড়া সেনেগাল তখন যথেষ্টই হতাশ হয়ে পড়েছে। আবার ৭৬ মিনিট সময়ে হ্যারি কেইনকে চ্যালেঞ্জ করে হলুদ কার্ড দেখেন সেনেগালের অধিনায়ক কালিদু কৌলিবালি। শেষ পর্যন্ত কোনো পক্ষই আর কোনো গোল না করলে ৩-০ গোলে ম্যাচ জিতে নেয় ইংলিশরা।
নেদারল্যান্ডস, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্সের পর কোয়ার্টার নিশ্চিত করল সাউথগেটের শিষ্যরা। কোয়ার্টারে তাদের প্রতিপক্ষ ফ্রান্স।
Leave a Reply