আর মাত্র ছয় দিন বাকি, অতঃপর বেজে উঠবে দামামা, শুরু হবে লড়াই। মরুর দেশ কাতারে শুরু হবে ৩২ দেশের ফুটবল মহারণ। আটটি রণাঙ্গনে হবে এই লড়াই। বিশ্বকাপের আগে শেষ আট দিনে জেনে নেব সেই আটটি রণাঙ্গন সম্পর্কে। যেখানে আজ থাকছে ‘আল জানুব স্টেডিয়াম।’
‘দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ ফিফা বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে প্রচুর পরিমাণে অর্থ ব্যায় করেছে কাতার। ঢেলে সাজিয়েছে পুরো দেশকে। নির্মাণ করেছে নতুন নতুন অত্যাধুনিক সব শপিং মল, হোটেল, মোটেল, হাসপাতাল। আর যেই জায়গায় ‘দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ অনুষ্ঠিত হবে সেই স্টেডিয়াম নির্মাণেও কাতার যেন ছাড়িয়ে গেছে আগের সবগুলো আসরকেই। বিশ্বকাপের মূল আটটি ভেন্যুতেই ফুটে উঠেছে কাতারে ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি। আর সেই ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির মিশ্রণেই বানানো হয়েছে কাতার বিশ্বকাপের অন্যতম আকর্ষণীয় স্টেডিয়াম ‘আল জানুব স্টেডিয়াম।’
কাতারের রাজধানী দোহার ২২ কিলোমিটার দক্ষিণে পারস্য উপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে আল ওয়াকরাহ শহর। প্রায় ৯০ হাজার বাসিন্দার এই শহরের বেশীরভাগ মানুষই ঐতিহ্যগতভাবেই পারস্য উপসাগরে মাছ ধরা এবং মুক্তা আহরণ পেশার সাথে জড়িত। আর এই মাছ শিকার বা মুক্তা আহরণ করতে এক বিশেষ ধরনের পালতোলা নৌকা ব্যবহার করে সেই অঞ্চলের বাসিন্দারা। সেই বিশেষ ধরনের নৌকার নাম ‘ধোও’। আর এই ধোও নৌকার পালের সাথে মিল রেখেই নকশা করা হয়েছে আল জানুব স্টেডিয়ামটির। শহরের নামের সাথে মিল রেখে অনেকে একে আল ওয়াকরাহ স্টেডিয়াম নামেও ডাকে।
আল ওয়াকরাহ শহরের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য অনেক সমৃদ্ধ। তাই বিশ্বকাপ উপলক্ষে যেসব দর্শনার্থীরা এই শহরে আসবে তারা বিশ্বকাপের ম্যাচ উপভোগের পাশাপাশি এই শহরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, সাংস্কৃতিক স্থানও প্রদর্শন করতে পারবে। আর এর পাশাপাশি স্টেডিয়ামের নির্মাণশৈলী, নান্দনিক স্থাপনা, পার্কল্যান্ড যেকোনো দর্শককেই মুগ্ধ হতে বাধ্য করবে। হোটেল, শপিংমল, জিম থেকে শুরু করে সবধরনের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাই রয়েছে স্টেডিয়ামটিতে। আর পুরো স্টেডিয়ামটিই সৌরবিদ্যুৎচালিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় দর্শকরা খুব আরামেই তাদের প্রিয় দলের বিশ্বকাপ ম্যাচ উপভোগ করতে পারবে। আল ওয়াকরাহ মেট্রো স্টেশনের খুব কাছেই স্টেডিয়ামটির অবস্থান হওয়ায় দর্শকরা খুব সহজেই স্টেডিয়ামটিতে যাতায়াত করতে পারবে। এছাড়াও ম্যাচ চলাকালীন শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শকদের আনা নেয়ায় এসি বাস সার্ভিস চালুর ব্যবস্থা করেছে ফিফা।
২০১৪ সালে প্রথম এই স্টেডিয়ামটির নকশা প্রস্তুত করা হয়। এরপর একই বছরের কাজ শুরু করে ২০১৯ সালে ১৬ মে ‘আমির কাপের’ ফাইনালের মাধ্যমে স্টেডিয়ামটি উদ্বোধন করা হয়। স্টেডিয়ামটির ধারণক্ষমতা মোট ৪০ হাজার। কিন্তু বিশ্বকাপের পরে বাকি স্টেডিয়ামগুলোর মতো এটিরও ধারণক্ষমতা কমিয়ে ২০ হাজারে আনা হবে। সেই জায়গায় হাসপাতাল, শপিং মল, সিনেমা হল নির্মাণ করা হবে।
বিশ্বকাপের পর স্টেডিয়ামটি আল ওয়াকরাহ স্পোর্টিং ক্লাবের হোম ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করা হবে এবং কাতার স্টারস লিগের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। স্টেডিয়াম থেকে সরিয়ে নেয়া বাকি আসনগুলো অনুন্নত এবং স্বল্পোন্নত দেশের খেলাধুলার অবকাঠামো উন্নয়নে দান করা হবে।
রাউন্ড অফ সিক্সটিনের একটিসহ বিশ্বকাপের মোট সাতটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আল জানুব স্টেডিয়ামটিতে।
Leave a Reply