কাঁধ নড়াচড়া করানো যায় না, সবসময় কাঁধে ব্যথা হওয়া রোগটির নাম ফ্রোজেন সোল্ডার বা স্টিফ সোল্ডার। এডহেসিব ক্যাপসুলাইটিস বা জমানো কাঁধ বলে। এডহেসিব ক্যাপসুলাইটিস একটি সেল্ফ লিমিটিং রোগ। অর্থাৎ আপনাআপনি ভালো হয়। তবে পাঁচ মাস থেকে নয় মাস, এমনকি ভালো হতে সতেরো মাসও লাগে। এ সময় যথোপযুক্ত চিকিৎসা এবং ব্যায়াম না হলে জোড়া চিরস্থায়ীভাবে স্টিফ বা জমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ রোগে জয়েন্টের পর্দা বা ক্যাপসুলে প্রদাহ, সংকোচন ও স্ক্যার টিস্যু হয়। জোড়ার হাড়গুলো এবং ক্যাপসুল ও ক্যাপসুলের বাইরের টিস্যুর মধ্যে জমানো বন্ধন (এডহেসন) তৈরি হয়। এজন্য কাঁধ স্টিফ বা শক্ত হয় বা জমে যায়। আবার জোড়ার ফ্লুইড বা পানি শুকিয়ে যাওয়ার জন্যও জয়েন্ট স্টিফ হয় এবং মুভমেন্ট সীমিত হয়।
ধরন : ফ্রোজেন সোল্ডার বা জমানো কাঁধ রোগী তিনটি অবস্থার মধ্যদিয়ে রোগকাল অতিক্রম করে। প্রথম অবস্থা বা ব্যথা অবস্থায়, কাঁধে ব্যথা হয় এবং নড়াচড়া সীমিত হয়। এ অবস্থা সাধারণত ৬ থেকে ১২ সপ্তাহ থাকে।
যাদের বেশি হয় : মধ্য অবস্থা বা স্টিফ অবস্থায় কাঁধ শক্ত হয় বা জমে যায়। ব্যথার তীব্রতা কিছুটা কম। স্টিফ বা জমানো অবস্থা ৪- ৬ মাস থাকে। শেষ অবস্থা বা রিকভারি অবস্থায়, স্টিফনেস ক্রমে কমে আসে এবং ব্যথা কমে যায়। এক বছরের বেশি সময় ধরে এ অবস্থা চলতে থাকে।
ঝুঁকিতে কারা : ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মানুষ এ রোগে ভোগে এবং পুরুষের তুলনায় নারীরা দ্বিগুণ বেশি ভোগে। ডায়াবেটিক ও থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত রোগীদের জমানো কাঁধ বেশি হয়। হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ, স্ট্রোক, পারকিনসোনিসম ও আর্থ্রাইটিস রোগীদের জমানো কাঁধ হয়। মাথায় ও কাঁধে অপারেশন হলে বা কাঁধে আঘাত পেয়ে দীর্ঘদিন মুভমেন্ট না করলে জমানো কাঁধ হতে পারে। বার্সাইটিস, টেনডোনাইটিস এবং পেশির সমস্যা (টিয়ার, টেনডোনাইটিস, ডিজেনারেটিভ পরিবর্তন) ও ইমপিঞ্জমেন্ট জমানো কাঁধ করে।
রোগের লক্ষণ : সব সময় কাঁধে ব্যথা থাকে। রাতে বেশি হয় এবং শীতকালে ব্যথা বেড়ে যায়। কাঁধ বা বাহুর নড়াচড়া সব দিকে সীমিত হয়। হাত দিয়ে কোনো কিছু তোলা বা হাত ওপরে উঠানো যায় না। চুল আঁচড়ানো যায় না। জামা পরিধান বা বোতাম লাগানো কষ্টকর। ব্যথার জন্য স্টিফ কাঁধে কাত হয়ে ঘুমানো যায় না। প্যান্টের পেছনের পকেটে হাত দেয়া যায় না।
চিকিৎসা : ফ্রোজেন সোল্ডার বা জমানো কাঁধের প্রধান চিকিৎসা হলো ব্যায়াম। তবে রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাফি করে এর কারণ বের করতে হবে এবং যথোপযুক্ত চিকিৎসা প্রধান করতে হবে। চিকিৎসা শুরু করলে প্রায় ৩ থেকে ৬ মাস সময় লাগে ভালো হতে।
পরামর্শ : ক্যাপসুল ও সফট টিস্যুর স্ট্রেসিং ব্যায়াম। পেশি শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে। ব্যথার ওষুধ সেবন করতে হবে। ফিজিক্যাল থেরাপি, যেমন- গরম বা ঠা-া সেঁক। ইন্ট্রাআর্টিকুলার স্টেরয়েড ইনজেকশন। ইন্ট্রাআর্টিকুলার স্যালাইন থেরাপি।
উল্লিখিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় ফ্রোজেন সোল্ডার বা জমানো কাঁধ ভালো না হলে সর্বাধুনিক আর্থ্রোস্কোপিক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। এ পদ্ধতিতে ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে জোড়ায় আর্থ্রোস্কোপ প্রবেশ করিয়ে ক্যাপসুল রিলিজ ও স্যাব অ্যাকরোমিয়ন বিসংকোচন করা হয়। আর্থ্রোস্কোপিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
লেখক : হাড় ও জোড়া বিশেষজ্ঞ
ও আর্থ্রোস্কোপিক সার্জন
সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ
Leave a Reply