1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৬ অপরাহ্ন

করোনার প্রভাবে ক্ষতি হতে পারে ৫ হাজার কোটি টাকা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৩ মার্চ, ২০২০

করোনাভাইরাসের প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করেছে। এর বিরূপ প্রভাবে শুধু তিনটি খাতেই ক্ষতি পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াতে পারে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। এই তিন খাত হচ্ছেÑ ফিনিশড লেদার, গার্মেন্ট এক্সেসরিজ ও মুদ্রণ শিল্প। এর পাশাপাশি করোনার প্রভাবে দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরী পোশাক শিল্প সুদূরপ্রসারী ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে চীনে কাঁকড়া ও কুঁচে রফতানি হয়। কিন্তু করোনার কারণে এ দু’টি পণ্য চীনে রফতানি বন্ধ রয়েছে। ফলে শুধু এক মাসে ২০০ কোটি টাকার জীবন্ত কাঁকড়া ও কুঁচে মারা গেছে। রফতানি শুরু না হলে এ খাতে ক্ষতি হতে পারে ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ প্রাথমিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা এই প্রতিবেদনটি গত মাসের শেষ সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সম্প্রতি চীনে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস বিশ্ববাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত সব দেশের বাণিজ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশে আমদানিকৃত প্রাথমিক কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামাল ও সম্পূর্ণ পণ্যের বেশির ভাগ চীন থেকে আনা হয়। করোনাভাইরাসের ফলে চীনের স্থানীয় উৎপাদন থেকে শুরু করে রফতানি বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এই স্থবিরতার প্রভাব বাংলাদেশের বাণিজ্যে ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে।
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য প্রভাবে খাতভিত্তিক পর্যালোচনা শীর্ষে স্থান পেয়েছে তৈরী পোশাক খাত।
ওভেন : প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ওভেন খাতের পণ্য চীন থেকে আমদানি হয়। করোনাভাইরাসের প্রভাবে এ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।

নিট : নিট খাতের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি হয়। এ ছাড়া নিট ও ডাইং কেমিক্যাল এবং অ্যাক্সেসরিজের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ আমদানি হয় চীন থেকে। বর্তমানে চীন থেকে সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এ খাতেরও ক্ষতি নিরূপণের বিষয়টি চলমান।
ফিনিশড লেদার ও লেদার গুডস শিল্প : প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার ও লেদার গুডস শিল্প মোট যে পরিমাণ রফতানি করে তার মধ্যে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ রফতানি করা হয় চীনে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে এ খাতে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।
গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স শিল্প : গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং খাতে বার্ষিক চার বিলিয়ন ডলারের কাঁচামাল দরকার হয়। যার ৪০ শতাংশ আসে চীন থেকে। কাঁচামালের প্রাপ্তি বিঘিœত বা সঙ্কুচিত হলে বা হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেখা দিলে এ শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মতে, প্রায় এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

কসমেটিকস অ্যান্ড টয়েলেট্রিস শিল্প : চীন থেকে কসমেটিকস অ্যান্ড টয়েলেট্রিস খাতে প্রতি মাসে আমদানির পরিমাণ ২০০ কনটেইনারেরও বেশি। যার মূল্য প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। বর্তমানে চীন থেকে এসব পণ্য আমদানি ও জাহাজীকরণ বন্ধ আছে।
ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইজ ম্যানুফ্যাকচারার্স শিল্প : বাংলাদেশে আমদানি করা মেশিনারি ও স্পেয়ার পার্টসের শতকরা ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ চীন থেকে আসে। এ খাতের আমদানি ও জাহাজীকরণ বর্তমানে বন্ধ আছে। এ খাতের আর্থিক ক্ষতি নিরূপণের কার্যক্রম কমিশনে চলমান বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জুট স্পিনার্স শিল্প : জুট স্পিনার্স পণ্য চীনে রফতানির পরিমাণ বছরে আনুমানিক ৮১ হাজার মেট্রিক টন। যার মূল্য প্রায় ৫৩২ কোটি টাকা। চীনে রফতানি ও জাহাজীকরণ বর্তমানে বন্ধ আছে। এ খাতের আর্থিক ক্ষতি নিরূপণের কার্যক্রমও চলমান।
মুদ্রণ শল্প : মুদ্রণশিল্পের কাঁচামাল চীন থেকে বার্ষিক প্রায় ১৮০ কোটি টাকার আমদানি করা হয়। বর্তমানে এরও আমদানি ও জাহাজীকরণ বন্ধ আছে। এ খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা।
মেডিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স : মেডিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপমেন্ট চীন থেকে বার্ষিক প্রায় ২৫ কনটেইনার আমদানি করতে হয়। বর্তমানে আমদানি ও জাহাজীকরণ বন্ধ আছে। এ খাতের আর্থিক ক্ষতি নিরূপণের কার্যক্রম চলমান।
চশমাশিল্প : চশমাশিল্পের কাঁচামাল মোট আমদানির (তৈরি পণ্য ও যন্ত্রাংশ) আনুমানিক ৯৫ শতাংশ চীন থেকে আসে। বর্তমানে চীন থেকে আমদানি ও জাহাজীকরণ বন্ধ আছে। এ খাতের আর্থিক ক্ষতি নিরূপণের কার্যক্রমও কমিশনে চলমান।

কম্পিউটার ও কম্পিউটার অ্যাক্সেসরিজ শিল্প : কম্পিউটার খাত অনেকটাই চীনের ওপর নির্ভরশীল। ইতোমধ্যে কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ, অ্যাক্সেসরিজ ইত্যাদির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করা সম্ভব হবে না বলে ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ইলেকট্রনিক্স শিল্প : টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল ফোন, ওভেন, চার্জারসহ ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ৮০ ভাগই আসে চীন থেকে। শিপমেন্ট বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজারে পণ্যের সঙ্কট দেখা দিতে শুরু করেছে।
লাইভ অ্যান্ড চিলড ফুড শিল্প : প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৫ জানুয়ারি থেকে চীনে কাঁকড়া ও কুঁচে রফতানি বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ কাঁকড়া ও কুঁচে চীনে রফতানি হয়। স্থানীয় বাজারে এসব পণ্যের কোনো চাহিদা নেই। তাই পণ্যগুলো রফতানি করতে না পারায় গত এক মাসে প্রায় ২০০ কোটি টাকার জীবন্ত কাঁকড়া ও কুঁচে মারা গেছে। মজুদ করা পণ্য রফতানি করতে না পারলে ক্ষতি ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

প্লাস্টিক শিল্প : প্রতিবেদনে বলা হয়, কাঁচামাল ও মেশিনারিজসহ বিভিন্ন মেশিনের স্পেয়ার পার্টস যেমনÑ ইনজেকশন মোল্ডিং, প্রিন্টিং, এক্সটুশন মেশিনের পার্টস চীন থেকে আনতে হয়। এসব পণ্যের সরবরাহ বন্ধ হওয়ার কারণে সম্পূর্ণ সেক্টর হুমকির সম্মুখীন।

এ রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ট্যারিফ কমিশনের এই প্রতিবেদনে একেবারেই প্রাথমিক বলা যেতে পারে। কমিশন এ মাসের শেষে আরো একটি প্রতিবেদন আমাদের কাছে দেবে তখন দেশের অর্থনীতির ওপর করোনার প্রভাবের একটি স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
এর আগে এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের কাছে বিশেষ ঋণসহায়তা চাওয়া হয়। একই সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানানো হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com