উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তবে এতে চলমান সংকট নিয়ে কোনো সমাধান আসেনি। গতকাল শনিবার মধ্যরাতে ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনকারীদের দাবির কথা লিখিতভাবে জমা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সেটা পাওয়ার পর তিনি এ নিয়ে পরবর্তী উদ্যোগ নেবেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙারও আহ্বান জানান মন্ত্রী।
এ বিষয়ে আজ রোববার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলটির আরেকটি বৈঠকে হওয়ার কথা রয়েছে। আলোচনার মাধ্যমেই এই সংকট সমাধান করা সম্ভব বলে আশা করেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আলোচনার পাশাপাশি তাদের আন্দোলন ও অনশনও চলবে।
সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলটি মন্ত্রীকে জানিয়েছে, তারা অন্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলাপ করে রোববার সকালে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রীকে অবহিত করবে। এর আগে শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল শাবিপ্রবিতে আসে। এতে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। রাত ১টা থেকে সোয়া ২টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে উপস্থিত ছিল। এর মধ্যে দুজন অনশনকারী শিক্ষার্থীও ছিলেন।
বৈঠক শেষে রাত সোয়া দুইটার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শফিউল আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, বৈঠকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছে। শিক্ষামন্ত্রী সব ধৈর্য সহকারে শুনেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের অনশন থেকে সরে আসার কথা বলেছেন। এ ছাড়া আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের আইনগত ও একাডেমিক কোনো সমস্যায় যেন পড়তে না হয়, সেটি দেখবেন বলেও জানিয়েছেন।
শফিউল আলম চৌধুরী বলেন, শিক্ষামন্ত্রী লিখিতভাবে শিক্ষার্থীদের সব জানাতে বলেছেন। এরপর তিনি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলটি অন্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে বলে শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছে।
উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শফিউল আলম বলেন, উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়া, অপসারণ করা বা ছুটিতে পাঠানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা হবে বলে তিনি শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়েছেন।
এই বৈঠক শেষ হওয়ার পরপরই বাইরে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। রাত আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের মোহাইমিনুল বাশার সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষামন্ত্রীকে আমরা নিজেদের দাবির বিষয়ে অবহিত করেছি। রোববার দুপুর দুটার পর পুনরায় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এই আলোচনার পাশাপাশি আন্দোলনও চলবে। আমরণ অনশন চলমান রেখেই তারা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবেন।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হেয়ার রোডে মন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে শাবিপ্রবির শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন ডা. দীপু মনি। সেই বৈঠকেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বশেষ গত বুধবার উপাচার্যের বাসার সামনে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। এরমধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরের দিনই বাড়ি চলে যান। বাকি ২৩ অনশনকারীর মধ্যে এখন ১৭ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাকি শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের শরীরে স্যালাইন পুশ করেছেন চিকিৎসকরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রীদের এই আন্দোলনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
পরের দিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। এরপর ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
Leave a Reply