খুন হয়েছেন চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমু। সম্প্রতি তার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর মধ্যে ২৮ জানুয়ারি হতে যাচ্ছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। এখন চলচ্চিত্র অঙ্গনে আলোচনার বিষয় হচ্ছে শিমু হত্যাকা- আর নির্বাচন।
মেয়েটার দুইটা বাচ্চা, কী হবে ওদের
কাজী হায়াৎ
চলচ্চিত্র ও নাটকের অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুর হত্যাকা-ের খবর শোনার পর থেকেই মন খারাপ বরেণ্য পরিচালক কাজী হায়াতের। ১৯৯৮ সালে এই পরিচালকের হাত ধরেই চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় শিমুর। কাজী হায়াৎ বলেন, ‘একজন অভিনেত্রী এভাবে চলে যাবে তা মেনে নেওয়া যায় না। এমন হত্যাকা-ের সঠিক তথ্য বের হয়ে আসা উচিত। যে বা যারা এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। এমন শাস্তি, যাতে আর কোনো দিন কেউ যেন এ ধরনের অপরাধ করার চিন্তাই করতে না পারে।’ গত সোমবার দুপুরে ঢাকার কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশটি বস্তায় ভরে ফেলে রাখা হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। কে বা কারা এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। তার অপমৃত্যুর খবর দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে চলচ্চিত্র অঙ্গনে। রাস্তার পাশে অভিনেত্রী শিমুর বস্তাবন্দি লাশ পাওয়ার খবর শুনে হতবাক চলচ্চিত্রের বিখ্যাত এই পরিচালক।
কাজী হায়াৎ আরও বলেন, শিমু একজন শিল্পী। আফটার অল দারুণভাবেই শিল্পীমনা ছিল। তীব্র ইচ্ছা ছিল চলচ্চিত্র এবং শিল্প অঙ্গনে কিছু করার। এভাবে বস্তাবন্দি লাশ হওয়া খুব দুঃখজনক। কিচ্ছু বলার নেই আমার। শিমু আমার ছবিতে কাজ করেছিল। মেয়েটা আমার চোখে ভীষণ ভালো ছিল। মান্না ওকে আদর করত, আমিও ওকে ভালো জানতাম; কিন্তু আজ বস্তাবন্দি লাশের কথা শুনে তো বিস্মিত হলাম। খুবই দুঃখজনক, ভীষণ দুঃখজনক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কি একটু অবনতি ঘটল? নাকি এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এমনটা আর যেন না হয়, তেমনটাই চাওয়া হবে; কিন্তু ও যে এভাবে চলে গেল, এটা খুবই দুঃখজনক। তবে শিমু চলে গেলেও এই হত্যাকা-ের সঠিক তথ্য বের হয়ে আসা উচিত।’
রাইমা ইসলাম শিমু বেশ কয়েক বছর ধরে চলচ্চিত্রজগতে আলোচনায় ছিলেন না। নতুন কোনো চলচ্চিত্রে তাকে দেখা যায়নি। কোনো খবরের শিরোনামে ছিলেন না প্রয়াত এই অভিনেত্রী। করোনার মধ্যে হঠাৎ এই চিত্রনায়িকাকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্যপদ হারানো ১৮৪ জনের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে সোচ্চার হতে দেখা গেছে। তিনি ছিলেন ভোটাধিকারবঞ্চিত চলচ্চিত্র শিল্পী ঐক্যজোটের যুগ্ম আহ্বায়ক।
শিমুকে নিজের চলচ্চিত্রে কীভাবে নিয়েছিলেন কাজী হায়াৎ- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ওর ভাই খোকন এফডিসিতে ঘোরাঘুরি করত। তার সঙ্গে মান্নার ভাইয়ের যোগাযোগ ছিল। সেই সূত্রে মান্নার সঙ্গেও পরিচয়। একদিন শিমুকে এনে মান্না বলল- হায়াৎ ভাই, দেখেন তো এই মেয়েটা চলে কিনা? চলচ্চিত্রে অভিনয় করার তার খুব আগ্রহ। আমার প্রথম সিনেমা ‘বর্তমান’-এ প্রথম কাজ দিলাম। এর পর ‘মিনিস্টার’-এ অভিনয় করেছে। দুটি সিনেমায় মান্নার অনুরোধে শিমুকে নেওয়া।”
শিমুকে ‘বিষ্ণুপদ’ নামে ডাকতেন বলে জানালেন কাজী হায়াৎ। কারণ হিসেবে বললেন, ‘আমাদের গ্রামে বিষ্ণুপদ নামে এক হিন্দু ভদ্রলোক ছিলেন। তার চেহারার সঙ্গে শিমুর চেহারার মিল ছিল। শিমু ছিল ওই ভদ্রলোকের মতো নম্র-ভদ্র।’
কাজী হায়াৎ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘শিমু খুব একটা কথা বলত না, চুপচাপ শুনত; শান্ত মেজাজের। আহা, সেই শান্ত মেয়েটাকে কারা এভাবে মারল! আহ্?হা…। মেয়েটার তো দুটি বাচ্চা (এক মেয়ে এক ছেলে) আছে, কী হবে ওদের!’
যেভাবে ‘জামাই শ্বশুর’ সিনেমায় শিমু
আবদুল্লাহ জহির বাবু
অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু অকালে চলে গেলেন। নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তাকে।
চিত্রনায়ক রিয়াজ আহমেদের সঙ্গে ব্যবসাসফল সিনেমা ‘জামাই শ্বশুর’-এ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা গিয়েছিল শিমুকে। আবদুল্লাহ জহির বাবুর গল্পে শাহাদাৎ খান পরিচালিত এ সিনেমায় পূর্ণিমার বোনের চরিত্রে দেখা যায় শিমুকে।
‘জামাই শ্বশুর’ সিনেমায় কীভাবে যুক্ত হয়েছিলেন শিমু, ফেসবুকে সে ঘটনা তুলে ধরেছেন কাহিনিকার আবদুল্লাহ জহির বাবু। তিনি লেখেন, ‘ছায়াছবির জন্য একজন শিল্পী প্রয়োজন যিনি পূর্ণিমার বড় বোনের চরিত্রে অভিনয় করবেন। তখনই হঠাৎ আমার রাইমা ইসলাম শিমুর কথা মনে পড়ে। পরিচয় হয়েছিল স্বপন চৌধুরী স্যারের অফিসে। তার কথা মনে ছিল শুধু, ওর মন খোলা হাসি আর অসাধারণ ব্যবহারের জন্য। আমার বাসার সামনে রামপুরা এলাকায় থাকত। ডাকলাম তাকে, প্রযোজক ফরহাদ ভাই আর পরিচালক শাহাদাত ভাই দেখে এক নজরে নির্বাচিত করলেন শিমুকে।’
তিনি আরও লেখেন, “কয়েক দিনের মধ্যে দিনাজপুরে আউটডোর শুটিংয়ে গেল ইউনিট, দুর্দান্ত কাজ করল শিমু। তারপর অনেক দিনের গ্যাপ। যোগাযোগ ছিল না। ২০১৭ সালে ‘বঙ্গ’তে নাটক সংগ্রহ করতে গিয়ে পরিচালক বি ইউ শুভের সরবরাহ করা নাটকে দেখলাম পরিচালক হিসেবে শিমুর নাম। সঙ্গে সঙ্গে ফোন, উচ্ছ্বসিত হয়ে জানাল, সে এখন ভালো আছে। কাজ করছে এটিএন বাংলায়। নাটক প্রযোজনা করছে। স্বামী দুই সন্তান নিয়ে খুব সুখী।’
দুঃখ প্রকাশ করে বাবু লেখেন, ‘হায়রে সুখ…নিজের দুঃখটাকে সব সময় লুকিয়েছে মেয়েটা। শুধু একটু সুখের আশায়। আল্লাহতালার কাছে প্রার্থনা, শিমুর সমস্ত জাগতিক ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে, তার আত্মাকে শান্তি দিন।
Leave a Reply