মাঠ প্রশাসনে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত থাকেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। জেলার নানা সমস্যা ও সমাধানের চিত্র তুলে ধরে তারা সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠান। প্রতিবছর ডিসি সম্মেলনে তাদের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন সরকার ও প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিরা। এবার সম্মেলনে তারা ২৬৪টি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।
আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ৩ দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনে এসব প্রস্তাব নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে। ডিসিরা সাধারণত জেলার প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য দপ্তর-সংস্থার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকেন। এবার তারা জেলাপর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের এসএমই ও ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের সঙ্গে যুক্ত হতে চাচ্ছেন। এ জন্য এসএমই ও ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের জন্য ডিসিকে সভাপতি করে জেলা কমিটি গঠন করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন বরিশালের ডিসি। প্রস্তাবের পক্ষে বলা হয়েছে, এসএমই ও ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কৃষিঋণ প্রদান সম্পর্কিত
সমন্বয় কমিটির মতো জেলা প্রশাসককে সভাপতি করা হলে একদিকে যেমন সঠিক ব্যক্তি ঋণ পাবে, অন্যদিকে ঋণ আদায়ের হার সন্তোষজনক হবে। সুতরাং শিল্প মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করে কৃষিঋণ প্রদানের মতোই একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা যেতে পারে।
চাকরিরত অবস্থায় সরকারি কর্মচারী মারা গেলে তাদের সন্তানদের জন্য শিক্ষাভাতা চালু করার প্রস্তাব দিয়েছেন সুনামগঞ্জের ডিসি। প্রস্তাবের পক্ষে বলা হয়েছে, চাকরিরত অবস্থায় সরকারি কর্মচারী মৃত্যুবরণ করলে তাদের সন্তানরা লেখাপড়া ভালোভাবে চালিয়ে যেতে পারবেন। মৃত কর্মচারীর সন্তানরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন। ফলে শিক্ষায় ঝরে পড়া হ্রাস পাবে। আর জেলা পর্যায়ের সব কর্মচারীর বেতন ইএফটির (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) মাধ্যমে প্রদানের প্রস্তাব করেছেন মাগুরার ডিসি। এতে করে বেতন উত্তোলনে হয়রানি বন্ধ হবে। ফলে কর্মচারীদের কাজের গতি বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কার্যক্রমে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে সম্পৃক্ত করার পক্ষে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন সিলেটের ডিসি। যুক্তি তুলে ধরে তার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কার্যক্রম আইএমইডি করে থাকে। কিন্তু ওই বিভাগের বিভাগ বা জেলা পর্যায়ে কোনো অফিস নেই। স্থানীয় পর্যায়ে এই পরিবীক্ষণ কার্যক্রম গৃহীত হলে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান দ্রুত হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সুবিধা নিশ্চিত ও অসুবিধা দূর করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার ভূমিকা রাখতে পারবেন। সুতরাং প্রকল্প বাস্তবায়ন-পরিবীক্ষণ কার্যক্রমে বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসির নেতৃত্বে একটি মনিটরিং কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছেন সিলেটের ডিসি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আবাসনের জন্য কৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত নীতিমালার পরিবর্তে পৃথক নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব তুলেছেন ঢাকার ডিসি। প্রস্তাবের পক্ষে তার যুক্তি, কৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত নীতিমালা ১৯৯৭ অনুসারে এই ঘরগুলো বন্দোবস্ত দেওয়ায় শূন্য ঘরগুলো পুনরায় ৯৯ বছরের আগে ছিন্নমূল পরিবারের মধ্যে বন্দোবস্ত দেওয়া সম্ভব হয় না। যেহেতু কৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদানের মূল উদ্দেশ্য ছিল অনাবাদি কৃষি জমিসমূহ আবাদের আওতায় আনা এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিন্নমূল ও অসহায় জনগণের আবাসনের ব্যবস্থা করা। সুতরাং আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য আলাদা বন্দোবস্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৯৯ বছরের পরিবর্তে ৩০ বছর মেয়াদি জমি বন্দোবস্ত প্রদানের বিধান রেখে আলাদা নীতিমালা তৈরি করা যেতে পারে।
উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব প্রণয়নকালে প্রকল্পের পরিবেশ, জমির শ্রেণি ও তার ব্যবহারে জেলা প্রশাসক ও জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মতামত গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছেন মাগুরার ডিসি। আর জেলায় উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রকল্প কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছেন কুমিল্লার ডিসি।
জনপ্রশাসনের পদায়ন নীতিমালায় পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দিয়েছেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার। জাতিসংঘ মিশনে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির প্রস্তাব দিয়েছেন রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ডেটাবেজে সংরক্ষিত সব কর্মকর্তার জন্য আইডি কার্ড প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডিসি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ‘চার্টার অব ডিউটিজ’ সুনির্দিষ্টকরণের প্রস্তাব এসেছে নারায়ণগঞ্জের ডিসির কাছ থেকে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন ভোলার ডিসি। প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল স্থাপনের পক্ষে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন নওগাঁর ডিসি।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি রোধ ও যোগ্য প্রার্থী নিয়োগের ক্ষেত্রে অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক নিয়োগে পুল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন খুলনার ডিসি। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যাল, মেডিক্যাল কলেজ ও হাসাপাতাল সিন্ডেকেট এবং পরিচালনা কমিটিতে ডিসিকে অন্তর্ভুক্তকরণের প্রস্তাব দিয়েছেন ফরিদপুরের ডিসি। নদীভাঙন এলাকায় শিশুদের ঝরে পড়া রোধে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় বিশেষ স্কিম ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছেন শরীয়তপুরের ডিসি।
নদীভাঙন প্রতিরোধে উপকূলীয় জেলাগুলো নদীশাসনপূর্বক টেকসই বাঁধ নিমাণের প্রস্তাব দিয়েছেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার। নদীভাঙন প্রবণতা রোধে এবং যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা কমিটির আওতায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদী ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রস্তাব দিয়েছেন সিলেটের ডিসি। বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরীসহ বিভিন্ন নদনদী পর্যায়ক্রমে ও নিয়মিত ড্রেজিং করার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণপূর্বক ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও ড্রেজিংয়ের মাটি ইটভাটাসহ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহার নীতিমালা করা যেতে পারে, এমন প্রস্তাব দিয়েছেন ঢাকার ডিসি। দেশি মাছ চাষে ৪ ভাগ হারে ব্যাংক সুদ প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন বরিশালের ডিসি।
Leave a Reply