নায়ক শব্দটি উচ্চারণ করতেই যার চেহারা আমাদের চোখের সামনে ভেসে আসে, তিনি হলেন নায়করাজ রাজ্জাক। হঠাৎ করেই তিনি যখন পরপারে পাড়ি জমান সেই সময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের নানা সংগঠন নায়করাজের নামকরণ করে অনেক কিছু করার প্রতিশ্রতি দিয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নায়করাজের নামে সড়ক করা কিংবা তার নামে বিএফডিসির কোনো একটি ফ্লোর করা। আবার কেউ কেউ সেই সময় তার চেয়েও বেশি কিছু করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
কিন্তু অনেক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও নায়করাজ রাজ্জাককে নিয়ে কিছুই করা হয়নি। অবশ্য তাতে তার পরিবার কোনো রকম মনক্ষুণ্ন হয়নি। কারণ জীবদ্দশাতেই নায়করাজের পরিবারকে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। আর মরণের পর কী হবে, না হবে- তা নিয়ে একেবারেই চিন্তিত ছিল না তার পরিবার।
তবে গেল একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে নায়করাজের স্ত্রী ও তার বড় ছেলে বাপ্পারাজ শ্রীমঙ্গলের রাধানগরে গিয়েছিলেন ‘হারমিটেজ গেস্ট হাউজ’-এ। সেখানে গিয়ে বেশ বিস্মিতই হন তারা। কারণ গত ছয় মাস আগে গেস্ট হাউজটির কর্ণধার আইনজীবী সুলতানা ফাইজুন্নাহার নির্মিত নতুন বাংলোটি নায়করাজ রাজ্জাককে উৎসর্গ করেন।
উৎসর্গ পত্রে লেখা আছে ‘নায়করাজ রাজ্জাক স্মরণে-যিনি এই পর্ণকুটিরে একাধিকবার পদধূলি দিয়াছেন।’ নিজের বাবার নামে বাংলা উৎসর্গ দেখে অনেকটাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন বাপ্পারাজ।
বাপ্পারাজ বলেন, ‘আমি, আমার পরিবার শ্রদ্ধেয় সুলতানা ফাইজুন্নাহার আন্টির কাছে ভীষণ কৃতজ্ঞ। আমরা এমনিতেই কয়েক দিনের জন্য সেখানে বেড়াতে গিয়েছি। কিন্তু সেখানে গিয়ে এতটা ভালোবাসা আর মায়ার জালে জড়াবো, ভাবতেও পারিনি। আব্বা চলে যাওয়ার পর অনেকেই অনেক কিছু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বুঝতে পেরেছিলাম, কিছুই হবে না। দিন যাচ্ছে সময় যাচ্ছে। আমার সেই ধারণা সত্যি হচ্ছে। কিন্তু আমার সেই ধারণা একজন সাধারণ মানুষের কাছে মিথ্যে হয়ে গেল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ফাইজুন্নাহার আন্টির ভালোবাসার কাছে হেরে গেলাম। তার কাছে ঋণী হয়ে গেলাম। আব্বার প্রতি তার শ্রদ্ধা-ভালোবাসা দেখে সত্যিই চোখে পানি চলে আসছিল বারবার। আম্মাও আবেগাপ্লুত হয়ে উঠেন।’
সুলতানা ফাইজুন্নাহার বলেন, ‘আমার প্রিয় নায়ক নায়করাজ রাজ্জাক। পেশায় আমি একজন আইনজীবী হলেও বিগত বেশ কয়েক বছর যাবৎ আমি এই গেস্ট হাউজটি নিয়েই ব্যস্ত। সর্বশেষ যখন আমার প্রিয় নায়ক এখানে এসেছিলেন, তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন, তিনি আবার আসবেন। কিন্তু আর তার আসা হলো না। তখন আমি খুব কষ্ট পাই। তাকে মনের মতো করে রান্না করে খাওয়াতে পারিনি। ঠিকমতো সময় দিতে পারিনি। তার প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা থেকেই নতুন বাংলোটি আমি তাকে উৎসর্গ করি। আমি আমার মনের শান্তির জন্যই এটি করেছি। আল্লাহ নায়করাজকে বেহেশত নসীব করুন।’
Leave a Reply