বাইপাস সার্জারির কথা উঠলেই মনে করা হয় তা হার্টের বাইপাস সার্জারি। কিন্তু হার্ট ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের রক্তনালির ব্লকের জন্য বাইপাস সার্জারি করা হয়। রক্তনালির বাইপাস সার্জারি হলোÑ আমাদের শরীরে প্রকৃতি প্রদত্ত রক্তনালি কোনো কারণে ব্লক হয়ে গেলে ওই পথটি বাদ দিয়ে ঘোরানো পথে ব্লকের আগে ও পরে সংযোগ স্থাপন করে দেওয়া, যাতে টার্গেট ওরগান বা অঞ্চল পুনরায় নিরবচ্ছিন্নভাবে রক্ত সরবরাহ পেতে পারে।
কিছু বাইপাস সার্জারি : যেমন পেটের ভেতর নাভির নিচের প্রধানতম রক্তনালি (এবডোমিনাল এওর্টা) ব্লক, সরু হয়ে যাওয়া বা স্ফীতিবস্থা (এন্যুরিজম) হলে নাভির ওপর থেকে ওই প্রধানতম রক্তনালির সঙ্গে দুই কুচকির রক্তনালির সংযোগ স্থাপন করা হয়। এ ক্ষেত্রে এই বাইপাসের পথটুকু হিসেবে কৃত্রিম রক্তনালি বা মৎধভঃ স্থাপন করা হয় । আবার কুচকির রক্তনালি বা থাইয়ের রক্তনালি ব্লক হলে কৃত্রিম রক্তনালি বা রোগীর থাই বা পায়ের অপেক্ষাকৃত কম দরকারি এবং ঠিক চামড়ার নিচেই শুয়ে থাকা শিরা তুলে ব্লকের আগে-পরে লাগিয়ে বাইপাস সার্জারি করা হয়। অনুরূপভাবে হাতে, বগলে, ঘাড়ে রক্তনালির বাইপাস সার্জারিও করা হয়।
এনেস্থেসিয়া : খুব কম ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ (মবহবৎধষ) অজ্ঞান করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৎরমরড়হধষ ধহবংঃযবংরধ বা আঞ্চলিক অবশ (বঢ়রফঁৎধষ বা ংঢ়রহধষ) দিয়ে প্রয়োজনমতো বুক বা পেট থেকে পা পর্যন্ত অবশের মাধ্যমে বাইপাস অপারেশন করা হয়।
বাইপাসের জন্য ব্যবহৃত নল : সাধারণত দুধরনের গ্রাফট ব্যবহৃত হয়। ন্যাচারাল অর্থাৎ রোগীর নিজের শরীর থেকে কম প্রয়োজনীয় সুস্থ শিরা এবং কৃত্রিম রক্তনালি বা নল। এগুলোর মধ্যে কিছু আছে সরু, ফাঁপা ও লম্বা নলের মতো। কিছু আছে ণ সদৃশ নলের মতো।
অপারেশনের আগের পরীক্ষা : ডুপ্লেক্স স্টাডি, যার মাধ্যমে ব্লকের অস্তিত্ব ও স্থান সম্পর্কে জানা যায়। সিটি এনজিওগ্রাম, এমআর এনজিওগ্রাম বা কনভেনশনাল এনজিওগ্রামÑ এ পরীক্ষার মাধ্যমে ব্লকের স্থান, বিস্তৃতি, ধরন ইত্যাদি জানাসহ অপারেশনের প্ল্যান তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়াও জটিলতাবিহীন অপারেশন, অজ্ঞান বা অবশ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
বাইপাস সার্জারির কিছু জটিলতা : গ্রাফট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইনফেকশন, রক্ত ঝরা ইত্যাদি হতে পারে। অবশ ও অজ্ঞান সংক্রান্ত জটিলতা। আঘাত লেগে ফেটে যেতে পারে।
জটিলতা প্রতিরোধে করণীয় : রক্ত তরলীকরণ ও চর্বি হ্রাসকরণ ওষুধ নিয়মিত সেবন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ। নিজেকে সচল রাখা। ৩ থেকে ৬ মাস পর পর ডুপ্লেক্স স্টাডি করে গ্রাফটের অবস্থা দেখা। সর্বোপরি, ব্লক হওয়া প্রতিরোধ করুন। একান্ত প্রয়োজন হলে আপনার ভাসকুলার সার্জনের সঙ্গে আলাপ সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। সার্জারি-পরবর্তী নির্দেশনা মেনে চলুন। কারণ অঙ্গ হানি নয়, অঙ্গ সংরক্ষণই মুখ্য উদ্দেশ্য।
লেখক : ভাসকুলার, এন্ডোভাসকুলার ও লেজার স্পেশালিস্ট সার্জন
Leave a Reply