1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৩৮ অপরাহ্ন

চীন-রাশিয়ার টিকা পেতে দেরি হবে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৩ মে, ২০২১

চুক্তি অনুযায়ী সময়মতো ভারত থেকে টিকা না পাওয়ায় ‘গণটিকাদান কার্যক্রম’ স্থগিত আছে, দেখা দিয়েছে সংকট। তাই জরুরি ভিত্তিতে চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা আমদানি করে সংকট মোকাবিলার চেষ্টা থাকলেও তা সহসা পাওয়া যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডাসহ অন্যান্য উৎসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সেখান থেকে মেলেনি সুখবর। কূটনীতিক সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বাংলাদেশে করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ। চুক্তি মোতাবেক ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা না পাওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম ডোজ থেকে দ্বিতীয় ডোজের অতিরিক্ত বিরতিতে নতুন নতুন করোনার ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হতে পারে।

এ পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে টিকা পেতে বাংলাদেশ যোগাযোগ শুরু করে চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। টিকা চাওয়া হয় যুক্তরাজ্য ও কানাডার কাছেও। কিন্তু কোনো জায়গা থেকেই দ্রুত টিকার পাওয়ার সুখবর পায়নি বাংলাদেশ।

জানা গেছে, রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির খসড়া এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত করেনি বাংলাদেশ। চীনের টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় টিকা পেতে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত। অন্যদিকে সংকট উত্তরণে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ডোজ পেতে সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের কাছে অনুরোধ করে বাংলাদেশ সরকার। তবে সক্ষমতা না থাকায় ব্রিটিশ সরকার আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছে।

চীনের উপহারের পাঁচ লাখ ডোজ করোনার টিকা গত ১২ মে বাংলাদেশে পৌঁছালেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কেনা টিকা কবে বাংলাদেশে আসবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিয়তা নেই। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এ জন্য বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়ক্ষেপণকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, টিকা পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক

বাজারে ক্রেতাদের দীর্ঘ কিউ তৈরি হয়েছে। আর স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ টিকার জন্য সেই লাইনের সম্মুখভাগের খুব কাছাকাছি অবস্থানে নেই। আমি বলতে চাইছি- সরকারি পর্যায়ে চীন থেকে কেনা টিকার প্রথম চালান হাতে পেতে আমাদের আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। তবে সুখবর হলো- চীন বাংলাদেশকে আরও ছয় লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে প্রদান করছে।

অন্যদিকে রাশিয়ার টিকা পেতেও সময় লাগতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে। সূত্র বলছে, রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি টিকার উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অব রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বা সিআরডিআইএফের পক্ষ থেকে চুক্তির শর্ত সম্মলিত যে খসড়া দেওয়া হয়েছিল, তার উত্তর দিতেও দেরি করেছে বাংলাদেশ। গত ৯ মে ঢাকা-মস্কো চুক্তির খসড়ায় আইন মন্ত্রণালয়ের ২৯ সুপারিশ পাঠানো হয়। রাশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন সেটি ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অব রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বা সিআরডিআইএফ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, উৎপাদক প্রতিষ্ঠান আইন মন্ত্রণালয়ের ২৯ দফা সুপারিশের বিপরীতে তাদের মতামত দেয়। মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাস সেটি গত ১২ মে বাংলাদেশে প্রেরণ করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের মতামত জানায়নি। সঙ্গত কারণেই রাশিয়ার সঙ্গে টিকা নিয়ে চূড়ান্ত চুক্তিতে যেতে পারছে না বাংলাদেশ। ফলে রাশিয়া থেকেও টিকা প্রাপ্তি দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় তৈরি হওয়া সংকট মেটাতে যুক্তরাজ্যের কাছে জরুরি ভিত্তিতে টিকা সহায়তা চায় বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, প্রয়োজনীয় ডোজ পেতে সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের কাছে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ সরকার। তবে সক্ষমতা না থাকায় ব্রিটিশ সরকার ওই আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি ব্রিটিশ সরকার চেষ্টা করলে, তারা এটা দিতে পারবে; কারণ তাদের সামর্থ্য রয়েছে। তিনি বলেন, ব্রিটিশ সরকারের কাছে আমার বার্তা হলো- তাদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। কমনওয়েলথ সদস্য দেশকে তাদের সাহায্য করা উচিত।

অন্যদিকে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দিতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চিঠি দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে টিকাপ্রাপ্তির অগ্রাধিকার তালিকায় বাংলাদেশ নেই বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে টিকা দিতে রাজি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে সেখানেও জটিলতা আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তবে সমস্যা হলো- এফডিএ (যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন) এই অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন রপ্তানি অনুমোদন করতে অনেক সময় নিচ্ছে। তবে যেহেতু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যাকসিন ইতোমধ্যে অনুমোদন করেছে, তাই এফডিএ এটি অনুমোদন না করলেও যুক্তরাষ্ট্র যদি টিকার চালান পাঠাতে রাজি হয়, বাংলাদেশ অবিলম্বে তা নিতে রাজি আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার প্রায় ছয় কোটি ডোজ টিকা মজুদ আছে। গত মঙ্গলবার ঢাকায় কানাডার হাইকমিশনার বেনোয়া প্রেফেঁতে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশকে ২০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কানাডার পক্ষ থেকে কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি।

যুক্তরাজ্যের টেলিভিশন আইটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের টিকা পরিস্থিতিকে সংকট আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন, ‘টিকা পেতে আমরা মরিয়া।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। ফলে বাংলাদেশও আপাতত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা পাচ্ছে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত ভয়ঙ্কর সংকটময় মুহূর্ত পার করছে। দেশটির করোনা পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। আমরা এ পরিস্থিতি বুঝতে পারছি। ফলে তারা যে পরিমাণ টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে।

আইটিভির খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রায় ১৬ লাখ মানুষকে অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে, যাদের ১২ সপ্তাহের মধ্যে এই টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কথা। কিন্তু সেরামের কাছ থেকে টিকা না আসায় ১৬ লাখ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

আবদুল মোমেন বলেন, যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে বাংলাদেশ ১৬ লাখ ডোজ টিকা চেয়েছে। বাংলাদেশ সরকার সরাসরি যুক্তরাজ্য সরকারের কাছ থেকে এই পরিমাণ টিকা চেয়েছে। কিন্তু তাদের টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা নেই বলে বাংলাদেশের এই আবেদন খারিজ করেছে ব্রিটিশ সরকার।

তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি- যুক্তরাজ্য সরকার চেষ্টা করলে এই পরিমাণ টিকার ব্যবস্থা করতে পারবে। আমরা মনে করি, তাদের সেই সামর্থ্য আছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করে। তাদের উচিত, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোকে সাহায্য করা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের ভালো বন্ধু। অনেক বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। তাই যুক্তরাজ্যের উচিত এগিয়ে আসা। মোমেন বলেন, আমরা অনেক টিকা চাইছি না। শুধু অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১৬ লাখ ডোজ চাইছি। যে টিকা যুক্তরাজ্যের আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com