লিচুর রাজধানী পাবনার ঈশ্বরদীতে বাগান মালিকরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এবার বৈরী আবহাওয়ায় লিচুর গুটি ঝরছে আশঙ্কজনক হারে। এ অবস্থায় দিশেহারা লিচুচাষিরা। শুধু ঈশ্বরদী নয়, সারা দেশের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে ঈশ্বরদীর সুস্বাদু লিচু। তাই লিচু আবাদে সরকারি রক্ষাণাবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। চাষিদের দাবি, অবিলম্বে ঈশ্বরদীতে লিচু গবেষণাগার স্থাপন করা হোক।
ঈশ্বরদীর সর্বত্রই লিচুর আবাদ থাকলেও উপজেলার সাহাপুর, আওতাপাড়া, বাঁশেরবাধা, জয়নগর, মানিকনগর ও মিরকামারী শেখের দাইড় এলাকায় লিচুর চাষ উল্লেখযোগ্য। বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছ থেকে ঝরে পড়ছে বিখ্যাত বোম্বাই লিচুর গুটি-কড়ি। আর কয়দিন বাদেই লাল বর্ণ ধারণ করবে ঈশ্বরদীর লিচু বাগান। লিচুচাষিদের চোখে যখন রঙিন স্বপ্ন ঠিক তখনই দেখা দিয়েছে হতাশাজনক আবহাওয়া। লিচু পরিপক্ব হয়ে ওঠার আগেই ঝরে পড়ছে।
কৃষি বিভাগ ও ঈশ্বরদীর লিচুচাষি সূত্র জানা যায়, প্রতি বছর চার থেকে পাঁচ শ’ কোটি টাকার লিচুর উৎপাদন হয় শুধু ঈশ্বরদীতে। এবারো লিচুর প্রাথমিক ফলন দেখে তেমনই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এবারের বিরূপ পরিস্থিতিতে লিচুর উৎপাদন নিয়ে রীতিমতো শঙ্কায় পড়েছেন চাষিরা।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল লতিফ জানান, এ বছর ঈশ্বরদীতে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ায় লিচুর মুকুল আসেনি বেশির ভাগ গাছেই। এখন আবার তীব্র তাপদাহে লিচুর কড়ি ঝরে পড়ার কারণে এবার শঙ্কায় পড়েছেন চাষিরা।
এ বছর তীব্র তাপদাহের কারণে প্রতিদিনই গাছ থেকে ঝরে পড়ছে অপরিপক্ব লিচুর গুটি। এই অঞ্চলের বেশির ভাগ লিচুচাষি সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন লিচুর মৌসুমের জন্য। কেননা, এমন অনেক চাষি আছেন, যারা শুধু লিচু আবাদের ওপরই নির্ভরশীল। ঈশ্বরদীর বিভিন্ন গ্রামে অসংখ্য চাষি সারা বছর লিচু গাছের পরিচর্যা করে আশায় থাকেন ভালো ফলন ফলিয়ে লাভবান হবেন। কিন্তু এবার লিচুর বৈরী সময়। করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে লিচু নিয়ে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ঈশ্বরদীর চাষিরা। এমনিতেই এবার অর্ধেকেরও বেশি গাছে লিচু ধরেনি, তার ওপর করোনাকাল। এবার গরম, কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। লিচুর জন্য এই আবহাওয়া সুখকর নয়।
এ বিষয়ে জাতীয় কৃষক আলহাজ শাজাহান আলী বাদশা (পেপে বাদশ) জানান, তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে মুকুল ৩-৪ ইঞ্চি হওয়ার পর ঝরে গেছে। এতে চরম হতাশ হচ্ছেন চাষিরা। কারণ লিচু যেহেতু মৌসুমি আবাদ পর পর কয়েক বছর লিচু না এলে চাষিদের সারা বছর সংসার চালানো কঠিন। এ জন্য অনেকে চিন্তা করছেন লিচু বাগান না রাখার। তারা বলছেন এখন খালি জমির অনেক চাহিদা, প্রয়োজনে জমি ভাড়া দিয়ে চলা যাবে।
পেপে বাদশা বলেন, ঈশ্বরদীতে লিচু গবেষণাগার স্থাপন অত্যন্ত জরুরি। কারণ ঈশ্বরদীতে যে হারে লিচুর আবাদ বাড়ছে তাতে এখানকার লিচু দেশের চাহিদা মিটে বিদেশ রফতানি করা সম্ভব। এমন গবেষণা দরকার যাতে প্রতি বছর প্রতি গাছে লিচু ধরে। আর এটা অসম্ভব কিছু না। কারণ আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতের গবেষকরা সফল হয়েছেন। ঈশ্বরদীতে লিচু গবেষণাগার এ জন্য দরকার।
ঈশ্বরদীর শেখের দাইড় গ্রামের লিচুচাষি সাইদুল ইসলাম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে সকারের কাছে দাবি করে আসছি ঈশ্বরদীতে লিচু গবেষণাগার স্থাপনের জন্য। কিন্তু আমাদের এ দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই লিচুর আবাদ ছেড়ে বিকল্প চিন্তা করছি।
Leave a Reply