মিয়ানমারে স্বায়ত্ত্বশাসনপন্থী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সশস্ত্র দলগুলোর সংঘবদ্ধ জোট দেশটিতে এক পুলিশ স্টেশনে হামলা চালিয়েছে। শনিবারের এই হামলায় অন্তত ১০ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন বলে খবর জানায় স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলীয় শান রাজ্যের নাঙ্গমনের পুলিশ স্টেশনে শনিবার সকালে মিয়ানমারের আঞ্চলিক গোষ্ঠীগত স্বায়ত্ত্বশাসনপন্থী দলগুলোর সম্মিলিত জোটভুক্ত যোদ্ধারা হামলা করে।
স্থানীয় শান নিউজ জানায়, হামলায় অন্তত ১০ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে। অপরদিকে শিও ফি মাইআই নিউজ এজেন্সি ১৪ জনের নিহত হওয়ার কথা জানায়।
হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক জান্তার কোনো মন্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি।
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে এই সম্মিলিত জোট সমর্থন দেয়। এর আগে বিক্ষোভকারীদের দমনে সামরিক বাহিনী সহিংস অবস্থান ত্যাগ না করলে হামলা শুরু করার ঘোষণা দেয় সম্মিলিত এই জোট।
স্বায়ত্ত্বশাসনপন্থী সম্মিলিত এই জোটে আরাকান আর্মি, তা’য়াঙ্গ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মিসহ বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠন রয়েছে।
এদিকে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় শহর বাগোতে শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া নিরাপত্তা বাহিনীর দমন অভিযানে অন্তত ৬০ জন নিহত হয়েছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর খবর সংগ্রহকারী সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়ার (আরএফএ) এক প্রতিবেদনে জানানো হয়।
বাগোর বিভিন্ন সড়কে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের তৈরি ব্যারিকেড সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ভাঙতে এলে সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ ও সৈন্যরা বৃষ্টির মতো বাগোর সড়কে গুলি ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। নিহতদের লাশ তারা স্থানীয় প্যাগোডা ও স্কুল মাঠে জড়ো করে রাখে।
নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের অবস্থা পর্যবেক্ষণকারী থাইল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) তাদের শুক্রবারের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে অন্তত ৬১৮ জন নিহত হয়েছেন।
সংস্থাটি আরো জানায়, বিক্ষোভ সংশ্লিষ্টতায় সামরিক জান্তার হাতে দুই হাজার নয় শ’ ৩১ জন বন্দী রয়েছে। এছাড়া গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে আরো পাঁচ শ’ ২০ জনের নামে।
১ ফেব্রুয়ারি তাতমাদাও নামে পরিচিত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। সাথে সাথে দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্কের জেরে এই অভ্যুত্থান ঘটায় সামরিক বাহিনী।
সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরেই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা অং সান সু চিসহ বন্দী রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন।
সূত্র : আলজাজিরা
Leave a Reply