1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৫ অপরাহ্ন

দশ বছর আগে যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল জাপানের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১০ মার্চ, ২০২১

দশ বছর আগে মার্চের এক শুক্রবার সকালে শক্তিশালী এক ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিলো জাপানের পূর্ব উপকূলে যাতে তছনছ হয়ে যায় ফুকুশিমার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। নয় মাত্রার ওই ভয়াবহ ভূমিকম্পের জেরে সুনামি তৈরি হয় আর তাতে কার্যত ভেসে যায় হংসু দ্বীপ এবং মারা যায় প্রায় আঠার হাজার মানুষ।

বড় ধরনের ঢেউ আঘাত হানে ফুকুশিমা বিদ্যুৎকেন্দ্রে এবং এর পারমানবিক চুল্লি প্লাবিত হয়ে পড়ে পানিতে, যা বড় ধরনের বিপর্যয়ের সূত্রপাত ঘটায়।

কর্তৃপক্ষ একটি এক্সক্লুসিভ জোন তৈরি করে যা দিন দিন বড় হতে থাকে, কারণ ওই কেন্দ্রটি থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হচ্ছিল। ফলে আশপাশের এলাকা থেকে দ্রুত প্রায় দেড় লাখ মানুষকে সরিয়ে নিতে হয়।

ওই ঘটনার এক দশক পরেও ওই এক্সক্লুসিভ জোনটি যেমন ছিলো তেমনই আছে এবং সেখানকার বেশিরভাগ অধিবাসী আর ফিরে আসেনি।

কর্তৃপক্ষের ধারণা সেখানকার কাজ শেষ করতে অন্তত চল্লিশ বছর সময় লাগবে এবং এর জন্য জাপানের ইতোমধ্যেই ব্যয় হয়েছে কয়েক ট্রিলিয়ন ইয়েন।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কোথায় ছিল
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জাপানের ফুকুশিমার ওকুমা শহরে যা দেশটির পূর্ব উপকূলীয় এলাকায় তবে রাজধানী টোকিও থেকে প্রায় ২২০ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে।

২০১১ সালের ১১ মার্চ স্থানীয় সময় বেলা পৌনে তিনটায় ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। আঘাত হানার মূল জায়গাটি ছিলো ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মাত্র ৯৭ কিলোমিটার দূরে সেন্দাই শহরে।

ওদিকে সুনামি উপকূলে আঘাত হানার আগে সতর্ক হওয়ার জন্য মাত্র দশ মিনিট সময় পেয়েছিলো সেখানকার অধিবাসীরা।

তবে ভূমিকম্প, সুনামি ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্ঘটনার কারণে সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে তাদের বাড়িঘর ছাড়তে হয়েছে।

যা হয়েছিলো ফুকুশিমায়
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সিস্টেম থেকে ভূমিকম্প চিহ্নিত হয়েছিলো এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে পারমাণবিক চুল্লি বন্ধ হয়েছিল। তবে কুলিং সিস্টেম চালিয়ে যাওয়ার জন্য জরুরি ডিজেল জেনারেটরগুলো চালু হয়ে যায়।

কিন্তু প্রায় ১৪ মিটার বা ৪৬ ফুট উঁচু ঢেউ ফুকুশিমায় আঘাত হানার পর পুরো কেন্দ্র পানিতে সয়লাব হয়ে যায় এবং জরুরি জেনারেটরগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে।

কর্মীরা বিদ্যুৎ পুনরায় চালুর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন কিন্তু এর মধ্যেই রিয়েক্টরের মধ্যে পারমানবিক ফুয়েল প্রচণ্ড গরম হয়ে যায় এবং কোরের একটি অংশ গলে পড়ে। এরপর ওই কেন্দ্রে কয়েকটি রাসায়নিক বিস্ফোরণ হয় যাতে পুরো ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রেডিও এক্টিভ উপকরণগুলো লিক হয়ে বেরিয়ে এসে পরিবেশ ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এ কারণেই দ্রুত লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয় এবং এক্সক্লুসিভ জোন তৈরি করা হয়।

কত মানুষ হতাহত হয়েছিলো
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিপর্যয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কেউ মারা যায়নি তবে বিস্ফোরণে কেন্দ্রটির ১৬ জন কর্মী আহত হয়েছিলো। আর রিয়েক্টর নিয়ে যারা কাজ করছিলেন তাদের মধ্যে অনেকে রেডিয়েশনে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে কয়েকজনকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়।

তবে দীর্ঘমেয়াদে এ বিপর্যয়ের ক্ষতি নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৩ সালে যে রিপোর্ট প্রকাশ করে তাতে বলা হয় ওই বিপর্যয় অঞ্চলটিতে ক্যান্সারের হার বাড়ায়নি।

জাপানের ভেতর ও বাইরের বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন রেডিয়েশনের ঝুঁকি ছিলো তুলনামূলক কম। কিন্তু অনেকেই বিশ্বাস করেন এর বিপদ ছিলো অনেক বেশি।

বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার পরও বেশিরভাগ অধিবাসীই আর সেখানকার বাড়িঘরে ফিরে যাননি। ২০১৮ সালে জাপান সরকার ঘোষণা দেয় যে রেডিয়েশনের কারণে একজন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তবে স্থানীয় হাসপাতাল ও বাড়িঘর থেকে লোকজনকে জরুরি ভিত্তিতে সরিয়ে নেয়ার সময় কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল এটমিক এনার্জি ওই দুর্ঘটনাকে সাত মাত্রার দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করেছে যা এ ধরণের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ। রাশিয়ার চেরনোবিলের দ্বিতীয় উদাহরণ।

দায় ছিলো কার
সমালোচকরা টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার বা সরকারের সমালোচনা করে আসছে কারণ তারা মনে করেন ওই সময় দুর্ঘটনা মোকাবেলার যথাযথ প্রস্তুতি ছিলো না।

জাপান পার্লামেন্টের একটি স্বাধীন তদন্ত রিপোর্টে বলা হয় যে ‘এটি মনুষ্য সৃষ্ট’ দুর্ঘটনা এবং এনার্জি কোম্পানিকে দায়ী করা হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করার জন্য। তবে টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ারের কর্মকর্তারা পরে আদালত থেকে রেহাই পান।

ওদিকে ২০১৯ সালে একটি আদালত সরকারকে আংশিক দায়ী বলে আদেশ দিয়ে লোকজনকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয়।

দশ বছর পর…
দশ বছর পরেও জাপানের উত্তর পূর্বাঞ্চলের অনেকগুলো শহর কার্যত বন্ধ আছে এবং কর্তৃপক্ষ পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চালিয়েই যাচ্ছে যাতে অধিবাসীরা ফিরে আসতে পারেন।

কিন্তু বড় ধরনের চ্যালেঞ্জও আছে। হাজার হাজার শ্রমিক দরকার হবে আগামী ৩০/৪০ বছরে নিরাপদে বিভিন্ন ধরনের পারমাণবিক বর্জ্য সরিয়ে নেয়ার জন্য। রেডিয়েশনের ভয়ে কিছু অধিবাসী সেখানে আর কখনোই না ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com