দুবাইয়ের রাজকুমারী লতিফা আল মাখতুম জীবিত আছেন কি না সেই বিষয়ে আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো তথ্য দেয়নি বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। লতিফা জীবিত আছেন কিনা তার প্রমাণ উপস্থাপন করতে সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয়। গতকাল শুক্রবার মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র লিজ থ্রোসেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, লতিফার পিতা শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রপ্রধানদের একজন। তিনি দুবাইয়ের শাসক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট। মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করে থাকেন, শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদের শাসন ব্যবস্থায় ভিন্নমতের প্রতি কোনো সহনশীলতা নেই এবং বিচার ব্যবস্থাও নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক। এমন অবস্থায় নতুন জীবনের আশায় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুবাই থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন লতিফা। পরে বন্ধুদের কাছে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তিনি নিজের বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন। বলেছিলেন তাকে ‘জিম্মি’ করে রাখা হয়েছে এবং জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
সম্প্রতি বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানে সেই ভিডিও প্রচার করা হয়। আর তা দেখার পর এ ঘটনায় জাতিসংঘের তদন্ত শুরুর জন্য আহ্বান জানায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এ অবস্থায় তদন্তের আশ্বাস দেয় এ জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র লিজ থ্রোসেল জানান, এরইমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছ থেকে লতিফার বেঁচে থাকার প্রমাণ চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি তারা যেন এ ইস্যুতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সাড়া দেয়। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যাবো।’
থ্রোসেল জানান, গত বৃহস্পতিবার জেনেভায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্থায়ী মিশনের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছে কমিশন।
এর আগে জাতিসংঘে লতিফার মামলা উপস্থাপনকারী আইনজীবী রোডনি ডিক্সন বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি রাজকুমারী লতিফাকে শেষ পর্যন্ত মুক্ত করতে জাতিসংঘের তদন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাকে যারা আটকে রেখেছে তাদের সঙ্গে জাতিসংঘের সরাসরি বৈঠক হওয়া প্রয়োজন। এর মধ্য দিয়ে এমন একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে যেন তাকে মুক্ত করা যায়।’
উল্লেখ্য, বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানকে ওই ফুটেজ সরবরাহ করেন রাজকুমারী লতিফা আল মাকতুমের বন্ধুরা। সেখানে রাজকুমারী বলেন, তিনি নৌকায় করে পালিয়ে যাওয়ার পর ভারত মহাসাগর থেকে কমান্ডোরা তাকে অচেতন করে আবার বন্দিশালায় নিয়ে যায়। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন। বাথরুম থেকে বন্ধুদের কাছে গোপনে ভিডিও পাঠিয়ে তিনি তার বন্দিদশার কথা জানিয়েছিলেন।
২০১৯ সালে দুবাইয়ের ক্ষমতাসীন পরিবারের উত্তেজনার বিষয়টি ইংল্যান্ডের হাইকোর্টের সামনে উন্মোচিত হয়, যখন শাসক শেখ মোহাম্মদের স্ত্রী ও লতিফার সৎমা প্রিন্সেস হায়া তার দুই সন্তান নিয়ে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে আসেন। তিনি নিজেদের সুরক্ষা ও নিপীড়িত না হওয়ার অধিকার চেয়ে শেখের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেন।
গত বছর হাইকোর্ট বেশ কয়েকটি রায় দেয়, যেখানে বলা হয় শেখ মোহাম্মদ ২০০২ এবং ২০১৮ সালে লতিফাকে জোর করে ফেরত নেওয়ার নির্দেশ এবং পরিকল্পনা করেছিলেন। এছাড়া ২০০০ সালে তার বোন রাজকুমারী শামসাকেও যুক্তরাজ্য থেকে বেআইনিভাবে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনিও পালানোর চেষ্টা করেছিলেন।
Leave a Reply