1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২০ পূর্বাহ্ন

করোনাযুদ্ধে টিকার জয় হোক

মেজর (অব.) সুধীর সাহা
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

দেশে বেকারত্ব, দারিদ্র্য, নিম্ন আয়, গ্রামীণ দুর্দশা, অপুষ্টি, আয়বৈষম্য-এসব সমস্যা করোনার ধাক্কা লাগার আগে থেকেই ছিল। করোনা নিয়ে এসেছে আরও কিছু নতুন সমস্যা। অর্থনীতির সঙ্গে স্বাস্থ্যের একটি যোগসূত্র আছে। স্বাস্থ্য বলতে শুধু রোগ থেকে মুক্তি বোঝায় না, সারা জীবন ধরে নিজেদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা গড়ে তোলার উপায়ই হলো স্বাস্থ্য।

শ্রমের উৎপাদনশীলতা কমে যায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মন্দায়, আবার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় উৎপাদনশীলতা হ্রাসের কারণে। তাই অর্থনীতির ক্ষতি আর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হাত ধরাধরি করে চলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকা এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যালেরিয়াকে অসুস্থতা ও মৃত্যুর অতি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তাই সে সময়ে ম্যালেরিয়াকে উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল, জনস্বাস্থ্য নীতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল।

এমনকি ১৯৫৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ম্যালেরিয়াকে ‘অর্থনৈতিক রোগ’ বলে চিহ্নিত করেছিল। রোগের চিকিৎসাজনিত খরচ, রোগের কারণে কাজে যোগ না দিতে পারা ইত্যাদি নানা কারণে উৎপাদনশীলতার ক্ষতি হয়, আয় হ্রাস পায়। রোগে মৃত্যু হলে সেটি বড় ধরনের এবং স্থায়ী আর্থিক ক্ষতি হয়।

তবে মৃত্যুজনিত আর্থিক ক্ষতির চেয়ে উৎপাদনশীলতাজনিত ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলে এটিকে চিহ্নিত করা যায় অর্থনৈতিক রোগ হিসাবে। সেই হিসাবে সেদিনের ম্যালেরিয়া ছিল অর্থনৈতিক রোগ। ২০২০ সালের করোনা রোগ একেও ছাড়িয়ে গেছে। বস্তুত পুরো দুনিয়াটাকেই গ্রাস করে ফেলেছে এ মহামারি। তাই বলা যায়, এর থেকে বড় অর্থনৈতিক রোগ পৃথিবীতে আর কখনো আসেনি।

এমন একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পৃথিবীর মানুষ অপেক্ষা করছিল করোনা রোগ নিরাময়ের পথের আশায়। টিকা আবিষ্কার সে পথে দুনিয়ার মানুষকে আশার আলো দেখিয়েছে। এক বছরের সাধনার ফল হিসাবে পৃথিবীর সেরা সেরা বিজ্ঞানী আর প্রতিষ্ঠান টিকা আবিষ্কার করে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। মৃত্যুর মিছিলে যেন দেখা দিচ্ছে কিছুটা স্বস্তির বাতাস। সারা পৃথিবী হুড়মুড় করে টিকা সংগ্রহের নতুন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে।

উন্নত দেশগুলো অগ্রিম কিনে নিয়েছে তাদের প্রয়োজনীয় ডোজগুলো। ভারতও পিছিয়ে থাকেনি এ দৌড়ে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের ‘সেরাম ইনস্টিটিউট’ অক্সফোর্ডের টিকা প্রস্তুত করার কাজে হাতে দিয়েছিল। এভাবে ভারতের টিকা লাভের পথটি সুগম হয়। বাংলাদেশও ভারতের সঙ্গে টিকাপ্রাপ্তির বিষয়ে ফলপ্রসূ যোগাযোগ রক্ষা করে সময়মতো টিকা লাভ নিশ্চিত করেছে।

পাকিস্তান অগ্রিম কোনো ব্যবস্থা না করলেও শেষ মুহূর্তে চীনের টিকা লাভ করেছে এবং পাঁচ লাখ ডোজ ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করে এ বছর জানুয়ারিতেই কার্যক্রম শুরু করেছে।

ইতোমধ্যে ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথ এবং যুক্তরাষ্ট্রের চার সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, জর্জ বুশ, বিল ক্লিনটন এবং বারাক ওবামা আতঙ্ক কাটাতে টিকা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের সরকারপ্রধানরাও বারবার আশ্বাস দিয়েছেন, টিকা গ্রহণ নিরাপদ। টিকা আসার পর সবচেয়ে আগে নেওয়া শুরু করে যুক্তরাজ্যের মানুষ।

তারপর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, হাঙ্গেরি, ইসরাইল, কুয়েত, মেক্সিকো, ওমান, পোল্যান্ড, কাতার, রাশিয়া, সৌদি আরব, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, আরব আমিরাত, ভারত, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই টিকা প্রদানের কাজ শুরু হয়।

তবে পাকিস্তানে কার্যক্রমটি স্বাভাবিক ধারায় চলতে গিয়ে কিছুটা বাধার সম্মুখীন হয়। টিকা নিতে আগ্রহীদের সংখ্যা আশাতীত হয়নি সেখানে। ২০১১ সালে পাকিস্তানে পোলিও টিকা কর্মসূচি চালানোর আড়ালে অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনের খোঁজ পেয়েছিল আমেরিকার গোয়েন্দারা। তারপরই লাদেনকে হত্যা করেছিল আমেরিকার বিশেষ বাহিনী। কিন্তু ২০১১ সালের সেই টিকা কর্মসূচির ‘ভূত’ ২০২১ সালেও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে পাকিস্তানিদের।

করোনার টিকা কর্মসূচি চালাতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে প্রশাসনকে। স্বাস্থ্যকর্মীদের বাঁকা চোখে দেখা শুরু করেছে পাকিস্তানের নাগরিকরা। এর বাইরে আছে তাদের মধ্যে ‘মুসলিম তত্ত্ব’। এ দুই সমস্যার কারণে সেখানে টিকা গ্রহণের প্রবণতা কম। আরও একটি কারণ আছে সেখানে।

চীনে অনুমোদন না-পাওয়া টিকা পাকিস্তানে ছাড় পাওয়ার বিষয়টিও তাদের দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের প্রশ্নের মুখে ফেলেছিল। টিকা না-নেওয়ার পেছনে সেই তত্ত্বও কাজ করেছে সেখানে। পাকিস্তানে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১২ হাজার মানুষের। তারপরও অন্ধবিশ্বাসের ওপর ভর করে পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষ টিকা নেওয়া থেকে বিরত রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার বেশ তৎপরতা দেখিয়েছে টিকা পাওয়ার ব্যাপারে। ভারতের সঙ্গে সময়মতো চুক্তি করেছে। এ ছাড়া ভারত উপহার হিসাবে দিয়েছে ২০ লাখ ডোজ। সব মিলিয়ে জানুয়ারি মাসের মধ্যেই বাংলাদেশের হাতে এসেছে ৭০ লাখ ডোজ। ৩৫ লাখ মানুষের টিকা দেওয়ার একটি প্রাথমিক অবস্থা বাংলাদেশ সরকারকে নিঃসন্দেহে একটি স্বস্তির জায়গায় নিয়ে গেছে। বাংলাদেশেও টিকা নেওয়ার ব্যাপারে একটি নেতিবাচক প্রচার লক্ষ করা গেছে।

ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া কিংবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অজানা ভয়টি কারও কারও ক্ষেত্রে টিকা গ্রহণে দূরে থাকতে সাহায্য করছে। টিকা সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, সঠিক ডোজ এবং উৎপাদনকারী দেশ নিয়েও কেউ কেউ সন্দেহের মধ্যে আছে। তবে যতই দিন যাচ্ছে, টিকা নেওয়ার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। ভারতেও অধিকাংশ লোকের মধ্যে টিকা নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। টিকা ম্যানেজমেন্টও তাদের প্রশংসনীয়।

পৃথিবী তোলপাড় করা মহামারির নাম করোনা। লাখ লাখ মানুষের প্রাণ নিয়েছে করোনা। বিজ্ঞান আর বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর যে টিকা, তার প্রতি আগ্রহ নেই কিছু মানুষের-এটি দুর্ভাগ্যজনক। বিনা মূল্যে হলেও টিকা গ্রহণের ইচ্ছা নেই তাদের। কীসের ভয়?

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়, অজানা প্রতিক্রিয়ার ভয়! বহুবার বহুজন বলেছেন-ভয় নেই, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সামান্যই হতে পারে। তারপরও সচেতন নয় অনেকে। ‘টিকা চাই’, ‘টিকা চাই’ চিৎকারে বারোটি মাস পার হলো। এবার টিকা এসেছে, তা গ্রহণে এগিয়ে আসুন সবাই।

মেজর (অব.) সুধীর সাহা : কলাম লেখক

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com