আসন্ন বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ২৮ ফেব্রুয়ারি। মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এ ছাড়া আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী বাদে তিন প্রার্থীই কোটিপতি।
তবে সম্পদ ও ব্যাংকে জমানো টাকার দিক থেকে বিএনপির প্রার্থী বাদশার চেয়ে তারা আছেন এগিয়ে। লেখাপড়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী বিএ ও বিকম পাস। স্বতন্ত্র প্রার্থী অষ্টম শ্রেণি পাস। আয় ও নগদ টাকার দিক থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নানের ধারের কাছে নেই আওয়ামী লীগের আবু ওবায়দুল হাসান ববি ও বিএনপির রেজাউল করিম বাদশা। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাদে তিনজনের নামেই মামলা আছে। ধারদেনা আছে দুই প্রার্থীর। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু ওবায়দুল হাসান ববি বিএ পাস। ঠিকাদারি পেশায় জড়িত এই নেতা বীমা কোম্পানিতেও চাকরি করেন। তার বার্ষিক আয় ৭৭ লাখ ১১ হাজার ১১৬ টাকা। নগদ আছে ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়া আছে ৫০ হাজার টাকার অলঙ্কার, ৫০ হাজার টাকার ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী। ব্যবসায় পুঁজি আছে ৭৭ লাখ ৭৯ হাজার ৭৯৩ টাকার। আছে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪০ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি এবং পৈতৃক সূত্রে পাওয়া একটি বাড়ি।
নিজের নামে ন্যাশনাল ব্যাংকে ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭৪ টাকা আছে। স্ত্রীর কাছে তার ঋণ আছে ১০ লাখ টাকা। এ ছাড়া জমি বন্ধক বাবদ দেনা আছে ৪১ হাজার ৩১৮ টাকার। নিজের ব্যবসার আয় থেকে নির্বাচনে ৫ লাখ টাকা ব্যয় করবেন তিনি।
বিএনপির প্রার্থী রেজাউল করিম বাদশা বিকম পাস। ছাপাখানা ও কনস্ট্রাকশন ব্যবসায়ী এই নেতার নামে ১৩টি মামলা ছিল। এর মধ্যে দুটিতে খালাস, তিনটিতে অব্যাহতি, একটি প্রত্যাহার ও একটিতে এফআরটি গ্রহণ হয়েছে। এ ছাড়া বিচারাধীন দুটি, তদন্তাধীন একটি, চার্জশিট গ্রহণের অপেক্ষায় একটি, ফাইনাল রিপোর্ট গ্রহণের অপেক্ষায় একটি মামলা আছে।
বাদশার বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, নির্ভরশীলদের আয় ১ লাখ ৮৭ হাজার ২০০ টাকা। হাতে নগদ টাকা নেই। তবে নিজের নামে ব্যাংকে আছে ১০ লাখ ১০ হাজার ১৫১ টাকা। একটি মাসিক ৫ হাজার হাজার টাকা মূল্যের ডিপিএস, কম্পিউটার, প্রিন্টার, এয়ারকুলার, প্রিন্টিং প্রেস, প্লেট মেকিং মেশিন, জেনারেটর আছে।
স্ত্রীর নামে ব্যাংকে আছে ৩১ লাখ ৫৩ হাজার ১০৭ টাকা। এফডিআর আছে ১৫ লাখ ৪৫ হাজার ৩১৫ টাকার। মাসিক ৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি ডিপিএস, একটি মাইক্রোবাস, ২০ তোলা স্বর্ণ, এয়ারকুলার তিনটি, পোলট্রি ফার্ম, ওয়াশিং মেশিনসহ আসবাবপত্র রয়েছে।
বাদশার নিজের নামে ১২ লাখ ১১ হাজার টাকা মূল্যে ৩২ শতক অকৃষি জমি, ৩ লাখ টাকা মূল্যের একটি দোকান, ৬ লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যের একতলা বাড়ি রয়েছে। তার স্ত্রীর নামে রয়েছে সাড়ে ৩৩ শতক কৃষিজমি, ১৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা মূল্যের সাড়ে ৩০ শতক অকৃষি জমি, ৪০ লাখ টাকা মূল্যের নির্মাণাধীন একটি বাড়ি এবং লিজ নেওয়া দুটি দোকান। তবে তাদের কোনো দেনা নেই।নির্বাচনে বাদশা নিজের ব্যবসার আয় থেকে ৩ লাখ এবং চাকরিজীবী স্ত্রীর কাছ থেকে ২ লাখ টাকা দান হিসেবে নিয়ে ব্যয় করবেন।স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান আকন্দ অষ্টম শ্রেণি পাস। ঠিকাদারি ও কমিউনিটি ব্যবসায়ী আবদুল মান্নানের নামে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটিসহ মোট ছয়টি মামলা বিচারাধীন।
মান্নানের বার্ষিক আয় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। নিজের কাছে নগদ আছে ৫ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আছে ঠিকাদারি যন্ত্রাংশ ও একটি মাইক্রোবাস ও আসবাবপত্র। স্ত্রীর নামে আছে নগদ ১ লাখ টাকা ও ১৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। এ ছাড়া নিজের নামে ৪৬৪ শতক কৃষিজমি, ১৯ দশমিক ২৫ শতক অকৃষি জমি, তিনটি ফ্ল্যাট, একটি কমিউনিটি সেন্টার ও একটি তিনতলা বাড়ি। স্ত্রীর নামে ২০ শতক কৃষিজমি রয়েছে। নিজের নামে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৩৭ হাজার ৬৪১ টাকার ব্যাংকঋণ রয়েছে। নির্বাচনে তিনি ব্যবসার আয় থেকে ৫ লাখ টাকা ব্যয় করবেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আবদুল মতিন দাওরায়ে হাদিস পাস। পেশায় শিক্ষক তিনি। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা একটি মামলা বিচারাধীন। তার বার্ষিক আয় ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। তার কাছে নগদ ৪০ হাজার টাকা, ব্যাংকে আছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া একটি মোটরসাইকেল, ১০ ভরি স্বর্ণ, আসবাবপত্রও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী আছে। তার স্ত্রীর নামে আছে নগদ ৫০ হাজার টাকা। সম্পদের মধ্যে নিজের নামে ১১২ দশমিক ৮৭ শতক কৃষিজমি ও স্ত্রীর নামে ৬ শতক অকৃষি জমি রয়েছে। নির্বাচনে মতিন নিজের বেতন-ভাতার আয় থেকে ১ লাখ টাকা, ভাই আবদুল বাতেনের কাছ থেকে ৩০ হাজার এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা শাখার সদস্য ও কর্মীদের কাছ থেকে অনুদান হিসেবে ১ লাখ টাকা ব্যয় করবেন।
Leave a Reply