রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কেন্দ্রে কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের জন্য গত ৯ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধন করেছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব আনোয়ার হোসেন (ছদ্মনাম)। কিন্তু গতকাল শনিবার পর্যন্ত টিকা গ্রহণের জন্য তিনি কোনো এসএমএস পাননি। তাই এখন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছেন এসএমএস ছাড়া টিকা নিতে কেন্দ্রে যাবেন কিনা। একইভাবে গত ৯ এবং ১০ ফেব্রুয়ারি খিলগাঁও বি-ব্লকের একই পরিবারের ১০ জন টিকার জন্য নিবন্ধন করেন। পরদিন তারা খিলগাঁও তিলপাড়া কেন্দ্রে টিকাও নিতে যান। এর মধ্যে নিবন্ধনের পর যে ৭ জন এসএমএস পেয়েছেন তারাই টিকা গ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। বাকি ৩ জন টিকা নিতে পারেননি এসএমএস না পাওয়ায়। শুধু খিলগাঁও কেন্দ্রে টিকার জন্য নিবন্ধনকারীরা এসএমএস পাচ্ছেন না এমন নয়, আরও বেশ কিছু কেন্দ্রের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে নিবন্ধনকারী টিকাদান কেন্দ্র থেকে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
গতকাল শনিবার বিএসএমএমইউ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে টিকা নিতে অনেকে হাজির হয়েছেন। তবে সেখানকার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা যাদের হাতে নিবন্ধনের কপি ও মোবাইলে এসএমএম এসেছে তাদেরই শুধু টিকাদান কেন্দ্রে ঢুকতে দিচ্ছেন। হাতে নিবন্ধনের কপি থাকলেও এসএমএস না পাওয়ায় টিকা গ্রহণে ইচ্ছুক অনেকে ফেরত যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিএসএমএমইউতে টিকা নিতে আসা একজন বলেন, আমি গত ৯ ফেব্রুয়ারি টিকার জন্য নিবন্ধন করেছি, কিন্তু এখনো এসএমএস পাইনি।
কয়েকদিন এসএমএসের জন্য অপেক্ষা করে টিকাদান কেন্দ্রে চলে এসেছি। কিন্তু টিকা নেওয়ার সুযোগ পাইনি। তথ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করার পর তারাও কোনো সমাধান দেয়নি, বলছে ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। এসএমএস না পেলে কীভাবে টিকা দেব, এখন সেটি জানার চেষ্টা করছি।
জানা গেছে, অনেক কেন্দ্রে টিকাদানের কোটা পূর্ণ হয়েছে বলে অনেকে নিবন্ধন করতে পারছেন না। ফলে তারা বারবার অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ঢুকে নিবন্ধনের চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া গতকাল অনেকেই অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও (ংঁৎড়শশযধ.মড়া.নফ) ঢুকতে পারেননি। আবার কেউ কেউ প্ল্যাটফর্মে ঢুকে নিবন্ধনের কয়েকটি ধাপ সম্পন্ন করতে পারলেও সবগুলো পারেননি। তারা বারবার নিবন্ধনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
বিএসএমএমইউর জনসংযোগ শাখা জানায়, তাদের কনভেনশন সেন্টারে টিকাদানে ৮টি বুথ রয়েছে। যেখানে গতকাল ১ হাজার ৩৩০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিএসএমএমইউতে মোট ৭ হাজার ৭৭৫ জন টিকা নিয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশের ১ হাজার ৫টি হাসপাতালে মোট ২ হাজার ৪০০ টিম টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন মোট ৭ লাখ ৩৬ হাজার ৬৮০ জন। যার মধ্যে ৩৯৪ জনের শরীরে মৃদু পাশর্^প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। গতকাল সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত সারাদেশে টিকা নিয়েছেন মোট ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৭১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২৭ হাজার ৪৩ জন এবং নারী ৬৭ হাজার ৩২৮ জন। যারা টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে মৃদু পাশর্^প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ৩১ জনের মধ্যে।
রাজধানীর ৪৬টি কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম চললেও গতকাল এর ৩টিতে টিকা প্রদান বন্ধ ছিল। এগুলো হলো- এএএফ বাসার, এএএফ বঙ্গবন্ধু ও সচিবালয় ক্লিনিক। বাকি ৪৩টি টিকাদান কেন্দ্রে টিকা নিয়েছেন মোট ২৬ হাজার ৫৬৪ জন।
বয়স্কদের জন্য ফের টিকাদান কেন্দ্রে নিবন্ধন চালু হতে পারে : স্বাস্থ্যসচিব দেশের প্রবীণ নাগরিকদের জন্য টিকাদান কেন্দ্রে নিবন্ধনের ব্যবস্থা শিগগিরই পুনরায় চালু করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান। গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকাদান কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, গ্রামের মানুষের আগ্রহ বাড়াতে প্রয়োজনে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। টিকার জন্য এখন পর্যন্ত ১৪ লাখ লোক নিবন্ধন করেছে। ৩৫ লাখ টিকা দেওয়ার পর পরিসংখ্যান যাচাই করব। যদি দেখা যায় গ্রামের মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার প্রবণতা কম তা হলে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যাদের বয়স বেশি বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ, ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে গেলে তাদের নিবন্ধন করা হবে। এ রকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আমরা চিন্তা করছি, বলেন আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারাদেশে সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। শনিবার এই সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এটা সম্ভব হয়েছে টিকাদান কার্যক্রমে বাংলাদেশের ভালো অভিজ্ঞতার কারণে।
গত ২ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন, করোনার টিকার জন্য কেউ অনলাইনে নিবন্ধন করতে না পারলে টিকাদান কেন্দ্রেও সেই ব্যবস্থা রাখা হবে।
৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে একযোগে শুরু হয় টিকাদান। বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়।
তবে অনলাইনে নিবন্ধন না করেই অনেকে টিকাদান কেন্দ্রে চলে আসেন। বিভিন্ন কেন্দ্রে ভিড় বেড়ে যায়, তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা।
এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধনের সুযোগ আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। টিকাদান কার্যক্রম ঠিকভাবে চালাতেই আপাতত ওই সুবিধা বন্ধের সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছেন বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
Leave a Reply