বাংলাদেশ ইস্যুতে আলজাজিরায় প্রচারিত এবং বহুল আলোচিত সংবাদ আড়ালের ‘কৌশলী চেষ্টা’ হিসেবেই জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ ইস্যু সামনে আনা হয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি। দলটি মনে করছে, আলজাজিরার ওই তদন্ত প্রতিবেদন সরকারকে যথেষ্ট নাড়া দিয়েছে। জনমনেও তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। আর সেই দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতেই জিয়ার বীর উত্তম ইস্যু বাতিলের মতো ‘স্পর্শকাতর’ বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে। তবে ঘটনা যেটিই হোক দলের প্রতিষ্ঠাতার ‘বীর উত্তম’ পদবি বাতিল ইস্যুতে সিরিজ প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পূর্ব ঘোষিত সকল কর্মসূচি বাতিল করে আজ শনিবার সারাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জামুকা (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) কর্তৃক জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিএনপির শীর্ষ নেতারা গত কয়েক দিনে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। দলের স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধারাও এই ইস্যুতে একত্র হয়েছেন। ২০ দলীয় জোট নেতাদের সাথেও বিএনপি কথা বলেছে। তাদেরকেও পৃথকভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে বলা হয়েছে।
সূত্রমতে, জিয়ার বীর উত্তম খেতাব বাতিলের চিন্তাভাবনা থেকে সরকারের সরে না আসা পর্যন্ত বিএনপি প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। কারণ দলটি ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ ও মুক্তিযুদ্ধে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভূমিকাকে বিএনপি রাজনীতির মূল ভিত্তি হিসেবে মনে করে। তাই এই ইস্যুতে জনগণের কাছে সরকারের এই ‘অন্যায়’ সিদ্ধান্তের কঠিন বার্তা দিতে চায় তারা। এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি সফলে এরিই মধ্যে নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আজ ও আগামীকাল রোববার দুই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ হলে নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এর বাইরে মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে একের পর এক কর্মসূচি দেয়া হবে। বিশেষ করে অঙ্গ সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা দল এই ইস্যুতে কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা নেতারা খেতাব বহাল রাখার পক্ষে যৌক্তিক বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে যাবেন।
সিটি-পৌর নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে ভোট কারচুপির প্রতিবাদে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত ৬ বিভাগীয় মহানগরে সমাবেশের প্রথম কর্মসূচি ছিল আজ চট্টগ্রামে। এর স্থলে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের চেষ্টার প্রতিবাদে আজ ঢাকাসহ সকল মহানগরে এবং আগামীকাল সকল জেলা সদরে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রসঙ্গে টেলিফোনে সিঙ্গাপুর থেকে বলেন, এই খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল গ্রহণ করে তা সরকারকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একে আমি মনে করি গণতন্ত্র, এই সরকারের অপকর্ম এবং যে সমস্ত দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে আসছে বিভিন্নভাবে তা থেকে জনগণের দৃষ্টি দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্যই এটা করা হয়েছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় বলেছেন, আলজাজিরার ঘটনা নিয়ে সরকারে পেট খারাপ হয়ে গেছে।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার আলজাজিরা ভাইরাসে আক্রান্ত। এই আলজাজিরা ভাইরাসকে কাউন্টার করার জন্য নতুন নাটক জিয়াউর রহমানের খেতাব কেড়ে নেয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজা দেয়া।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, বীর উত্তম খেতাব বাতিলের ইস্যুতে আন্দোলন চলবে। তবে এর মানে এই নয় যে, অন্য ইস্যুতে বিএনপি আন্দোলন বন্ধ করে দেবে। জনদৃষ্টি অন্য দিকে ফেরানোর সরকারি কৌশল এবার বিএনপি সফল হতে দেবে না। খালেদা জিয়ার মুক্তি, আলজাজিরার তথ্যচিত্র, রোহিঙ্গা, ব্যাংক লুট, স্বাস্থ্য খাতের জালিয়াতি এবং সুষ্ঠু নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে সরকারের বিপক্ষে জনমত গঠনের পাশাপাশি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি।
Leave a Reply