সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প পদ্মা রেল সংযোগ। জিটুজি ভিত্তিতে রেলপথটি নির্মাণ করছে চীনের প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড। কিন্তু পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাবে ঠিকাদারের বিল দিতে না পারায় জরিমানা গুনতে হচ্ছে রেলওয়েকে। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন এ. চৌধুরী।
জানা যায়, করোনার কারণে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের তেমন কাজ না হওয়ায় গেল অর্থবছর বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত দেওয়া হয়। ভাইরাসটি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আসায় এবার কাজের গতি বেড়েছে। কিন্তু ফাস্টট্রাকভুক্ত প্রকল্পটিতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়নি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)। ফলে কাজ করিয়েও ঠিকাদারকে কাক্সিক্ষত বিল দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি বিবেচনায় অতিরিক্ত ১ হাজার ৮০১ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে পরিকল্পনা কমিশনে চিঠি দেয় রেল মন্ত্রণালয়। সেই বরাদ্দও মেলেনি এখনো। এদিকে নির্ধারিত সময়ে পাওনা পরিশোধ করতে না পারলে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের দায়ে গুনতে হবে জরিমানা। শুধু তাই নয়, প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ও জমি অধিগ্রহণও বিঘিœত হচ্ছে অর্থের অভাবে। বিষয়টি জানিয়ে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পক্ষ থেকে সর্বশেষ গত ৩১ জানুয়ারি তাগিদপত্র দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের কাজের বিপরীতে ৯০৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য বিল জমা দেয়। নির্মাণ চুক্তির শর্তানুসারে জিওবি (সরকারি) অর্থ পরিশোধের জন্য চীনের এক্সিম ব্যাংকের নোটিশ অব ড্র-ডাউন পাঠাতে হয়। ইআরডির মাধ্যমে চীনা দূতাবাসে পাঠাতে হবে ৫৬ দিনের মধ্যে। নতুবা ঠিকাদারকে দিতে হবে দ-সুদ।
চিঠিতে উল্লেখিত সময় অনুযায়ী, জিওবি অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধপূর্বক প্রামাণ্য দলিলসহ নোটিশ পৌঁছানোর সর্বশেষ সময় ছিল ১২ জানুয়ারি, যা এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে। ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল চীনা এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ঋণচুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি বিলের ১৫ শতাংশ অর্থায়ন জিওবি এবং ৮৫ শতাংশ এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। তা ছাড়া আইটেম নম্বর এ১-১০১০ থেকে ১০৪৮-এর শতভাগ অর্থ এবং পরিশোধিত বিলের ওপর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে আইটি ও একই হারে ভ্যাট এবং সিডি ভ্যাট ও অন্যান্য চার্জের অর্থ বহন করতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে।
পদ্মা রেলপথ সংযোগ প্রকল্পে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে গত ৮ ডিসেম্বর চিঠি দিয়েছিল রেলওয়ে। এতে বলা হয়, করোনা মহামারী ও বন্যার কারণে গত অর্থবছর প্রকল্পটির অগ্রগতি ব্যাহত হয়। এমনকি মাওয়া-ভাঙ্গা সেকশনের জন্য ২০২০ সালের জুনের মধ্যে চীন থেকে রেল, ফিটিংস, পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং, ব্রিজ গার্ডার ইত্যাদি এসে পৌঁছানোর কথা থাকলেও শিপিং বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। এতে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী হয়নি নির্মাণকাজ। এ ছাড়া সাপ্লিমেন্টারি চুক্তি-০২ অনুমোদনের আগে চীনের এক্সিম ব্যাংক বিল পরিশোধে সম্মত না থাকায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিলও (আইপি) দাখিল করেনি।
সূত্র মতে, প্রকল্পটিতে চলতি অর্থবছর বরাদ্দ আছে ৩ হাজার ২৫৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। অথচ কাজ সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিতে টাকা লাগবে কমপক্ষে ৫ হাজার ৪৮৬ কোটি চার লাখ। সেই হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছরে অতিরিক্ত ১ হাজার ৮০১ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন। যদিও করোনার কারণে চলতি অর্থবছর বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থের পুরোটাই ছাড় করতে রাজি নয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে এডিপি বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ ছাড় করতে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে করে জটিলতা বাড়ছে অতিগুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে।
এদিকে পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ কর্মপরিকল্পনার তুলনায় দ্রুত হওয়ায় ইতোমধ্যে বরাদ্দকৃত ২০০ কোটি টাকার ১৭২ কোটিই ব্যয় হয়ে গেছে। অল্প সময়ের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দিতে না পারলে নির্মাণকাজের অগ্রগতিও ব্যাহত হবে। তাই এ প্রকল্পে জরুরি বরাদ্দের জন্য গত ১৫ ডিসেম্বর রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয় পরিকল্পনা কমিশনে। এর আগে গত ২৫ নভেম্বর চিঠি দিয়েছিল প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
Leave a Reply