1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫২ পূর্বাহ্ন

সাকলায়েনের চাকরি হয় জেলা কোটা প্রতারণায়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২১

হলমার্ক কেলেঙ্কারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বন্দি তুষার আহমদের ‘নারীসঙ্গ’ কাণ্ডে গতকাল রবিবার সর্বশেষ প্রত্যাহার করা হয়েছে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের-১ সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায় এবং জেলার নূর মোহাম্মদকে। এ কাণ্ডে এরও আগে প্রত্যাহার করা হয় ডেপুটি জেল সুপার মোহাম্মদ গোলাম সাকলায়েন, সার্জেন্ট আব্দুল বারী ও সহকারী প্রধান কারারক্ষী খলিলুর রহমানকে। তাদের প্রত্যাহারের খবর নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক। প্রত্যাহার পাঁচজনকে কারা সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক।

জানা গেছে, প্রত্যাহারকৃত ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলায়েনের জন্ম পাবনার সাঁথিয়ায়। তাদের পরিবারের সদস্যরাও যথারীতি সেখানেই থাকেন। কিন্তু চাকরি নেওয়ার সময় স্থায়ী ঠিকানা বদলে ঢাকা জেলা উল্লেখ করে কোটার ভিত্তিতে কারা অধিদপ্তরের চাকরি পান তিনি। ২০১২ সালে এভাবেই প্রতারণার মাধ্যমে তিনি প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি গ্রহণ করেন। এর পরের বছর ধরাও পড়েন। শাস্তিস্বরূপ তাকে বদলি করা হয় ভোলা জেলা কারাগারে। তবে শাস্তিমূলক এ বদলির পর সাকলায়েন ফের কারা বিভাগের লোভনীয় পোস্টিং হিসেবে খ্যাত গাজীপুরের কাশিমপুর-১ কারাগারের গুরুত্বপূর্ণ পদ পান।

কারা সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কারা কর্তৃপক্ষসহ একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুকূলে নিয়ে কোটা প্রতারণার মাধ্যমে চাকরি, নামমাত্র শাস্তিপ্রাপ্তির পর ফের গুরুত্বপূর্ণ কারাগারের গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি- ইত্যাদি অপকর্ম করে পার পেয়ে যাওয়ায় আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন গোলাম সাকলায়েন। তাই বিপুল অর্থের ব্যাংক কেলেঙ্কারির জন্য দায়ী ও নিন্দিত প্রতিষ্ঠান হলমার্কের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমদের সঙ্গে নারীদের বিশেষ সঙ্গের ব্যবস্থা করে দিয়ে অবৈধভাবে মোটা টাকা রোজগারে নামেন তিনি।

গতকাল রত্না রায় ও নূর মোহাম্মদকে প্রত্যাহারের আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে তার মন্ত্রণালয়ে দেখা করেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন। এ সময় প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসা কাশিমপুর কারাগার-১ এর অনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেন তিনি। এর পর সুরক্ষা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামানের সঙ্গেও সাক্ষাত করেন কারা মহাপরিদর্শক।

নারীসঙ্গ কেলেঙ্কারির জেরে প্রত্যাহারকৃত জেলার নূর মোহাম্মদকে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এ কা-ে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা। চার মাস আগে এ কারাগারে পোস্টিং হওয়া নূর মোহাম্মদ জিজ্ঞাসাবাদকালে জানিয়েছেন, ওই কারাগারে অনৈতিক যা কিছু হয়েছে তার সবই সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায়ের নির্দেশে। তিনিই তুষার আহমদের সঙ্গে ওই দেখা করার অনুমতি দেন। এতে সায় ছিল গোলাম সাকলায়েনের। আর কারাগারে কর্মকর্তার কক্ষে একান্ত সময় কাটানো ওই নারী তুষার আহমদের দ্বিতীয় স্ত্রী।

তবে গত ১৪ জানুয়ারি কারা মহাপরিদর্শকের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠান জ্যেষ্ঠ জেল সুপার রত্না রায়। এতে ওই দিনের ঘটনার জন্য জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধাকে দায়ী করেছেন তিনি। প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধার অনুমতি নিয়ে পুরো ঘটনার সঙ্গে কাশিমপুর কারাগারের ডেপুটি জেলার সাকলায়েন জড়িত ছিলেন।

রত্না রায়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনাটি সম্পূর্ণভাবে তার অগোচরে ও গোপনে হয়েছে। কারাগারের গেটে জেলারই ওই নারীকে কারাগারে প্রবেশের অনুমতি দেন এবং ডেপুটি জেলার সাকলায়েন তাদের রিসিভ করেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাজতি বন্দি তুষার একজন সাধারণ বন্দি শ্রেণিপ্রাপ্ত নন। ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলায়েন ও গেট ওয়ার্ডের সহকারী প্রধান কারারক্ষী খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, তারা জেলার নূর মোহাম্মদকে জানিয়ে হলমার্কের তুষারকে কারা ফটকের ভেতরে নিজেদের কার্যালয়ে নিয়েছিলেন।

কারাগারের এক কর্মকর্তা বলেন, তুষার আহমদের সঙ্গে সময় কাটানোর বিনিময়ে কাশিমপুর কারাগার-১ এর জেলার নূর মোহাম্মদকে ১ লাখ, ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলায়েনকে ২৫ হাজার এবং সার্জেন্ট আব্দুল বারী, গেট সহকারী প্রধান কারারক্ষী খলিলুর রহমানকে ৫ হাজার টাকা করে ঘুষ প্রদান করেন। এভাবে একাধিকবার দ্বিতীয় স্ত্রী পরিচয় দেয়া নারীর সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী একান্ত সময় কাটানোর সুযোগ পান তুষার আহমদ। বিনিময়ে প্রতিবারেই এভাবে টাকা দিতে হয়েছে। আর এসবের নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছেন রত্না রায়।

কাশিমপুর কারাগারের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, কারাগারে প্রবেশের মুখেই কর্মকর্তাদের অফিস এলাকায় গত ৬ জানুয়ারি কালো রঙের পোশাক পরে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করছিলেন বন্দি তুষার আহমেদ। এর কিছু সময় পরই বাইরে থেকে বেগুনি রঙের সালোয়ার-কামিজ পরা এক নারী সেখানে প্রবেশ করেন। আর এতে কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায় ও ডেপুটি জেলার সাকলায়েন সহযোগিতা করেন, যা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে।

কারাগারে স্থাপিত সিসি ক্যামেরায় গত ৬ জানুয়ারির এক ভিডিওতে দেখা যায়, দুই যুবকের সঙ্গে বেগুনি রঙের সালোয়ার কামিজ পরা ওই নারী কারাগারের কর্মকর্তাদের কক্ষ এলাকায় প্রবেশ করেন। সময় তখন দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিট। তাকে সেখানে রিসিভ করেন ডেপুটি জেলার সাকলায়েন। ওই নারীকে অফিসকক্ষে বসিয়ে রেখে সেখান থেকে বেরিয়ে যান ডেপুটি জেলার। এর আনুমানিক ১০ মিনিট পর বন্দি তুষার আহমদকে ওই কক্ষে প্রবেশ করতে দেখা যায়।

ঘটনাটি প্রকাশ পেতেই নড়েচড়ে বসে কারা অধিদপ্তর। অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক আবরার হোসেনকে প্রধান করে গত বৃহস্পতিবার একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। এতে সদস্য করা হয় উপসচিব (সুরক্ষা বিভাগ) আবু সাঈদ মোল্লা ও ডিআইজি (ময়মনসিংহ বিভাগ) জাহাঙ্গীর কবিরকে। এরই মধ্যে তারা কাশিমপুর কারাগার পরিদর্শন করেছেন। সেই সঙ্গে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসেবে গত শুক্রবারই ডেপুটি জেলার মোহাম্মদ সাকলায়েন, সার্জেন্ট আবদুল বারী ও সহকারী প্রধান কারারক্ষী খলিলুর রহমানকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

ঘটনা তদন্তে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১২ জানুয়ারি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কালামকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবিবা ফারজানা ও ওয়াসিউজ্জামান চৌধুরীকে করা হয়েছে সদস্য। জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, আমাদের তদন্ত প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ থাকবে, অনুসন্ধান থাকবে, সেই আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করব।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com