সরকারের চাল আমদানির সিদ্ধান্তের পর লাগাম পড়েছে চালের দামে। নতুন করে দাম আর বাড়েনি। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে এক থেকে দুই টাকা কমেছে। তবে লাগামহীন তেলের দামে এখনো হোঁচট খাচ্ছেন ভোক্তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও দাম বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। অন্যদিকে খোলা ও পাম তেলের দামও বেড়েছে আরেক দফা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজধানীর বাজারগুলোয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেলের প্রতিলিটারে খরচ পড়ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত। পাঁচ লিটারের এক বোতল তেল বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে ৫৭০ থেকে ৫৯০ পর্যন্ত। অনেক দোকানে ৬০০ থেকে ৬১৫ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ানবাজারের কিচেন মার্কেটের বিউটি স্টোরের ব্যবসায়ী মো. জাকির হোসাইন বলেন, তেলের দাম কমছেই না। দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় বেশি দামের কোম্পানির তেল ক্রেতারা কিনছেন না। দাম শুনলে ক্রেতারা উল্টো রেগে যাচ্ছেন। তাই তুলনামূলক কম দামের তেল রাখছি দোকানে। সেগুলোর বিক্রিও কমে গেছে।
খোলা তেলের দোকানে একজন মো. আবু বকর খান বলেন, বোতল তেলের দাম যে পর্যায়ে উঠেছে তা আমাদের মতো অল্প আয়ের পরিবারের কপালে নেই। ঠেকায় পড়ে খোলা তেল ব্যবহার করছি এখন। বাজার শান্তি নেই। আজ তেল, কাল পেঁয়াজ, পরশু চাল এভাবেই চলছে। আমাদের কষ্ট যেন দেখার কেউ নেই।
বড় বাজারগুলোয় বোতলের গায়ে লেখা দামের তুলনায় কিছুটা কম দামে বিক্রি হলেও এলাকাভেদে এবং অনেক মুদি দোকানে ৫ লিটার বোতল বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর মাতুয়াইল সাদ্দাম মার্কেট বাজারের সুমাইয়া ট্রেডার্সের তেল বিক্রেতা মো. হাফিজ হোসেইন বলেন, ৫ লিটারের বোতলের গায়ে কোম্পানির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) ৬০০ টাকার বেশি লেখা থাকলেও বড় বাজারে ব্যবসায়ীরা ছাড় দিয়ে তা বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু এলাকার বাজারে বা মুদি দোকানে আমরা এ ছাড় দিতে পারি না। ৫ লিটারের বোতল ৬২০ টাকা দরেও বিক্রি হয় কোথাও কোথাও।
কারওয়ানবাজারের কিচেন মার্কেটের খুচরা তেলের দোকান ইহান ট্রেডার্সের ব্যবসায়ী মো. ওসমান বলেন, গত দুই সপ্তাহে খোলা তেলের দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে। প্রতিকেজি খোলা সয়াবিন বিক্রি করছি ১২০ থেকে ১২৫ টাকা এবং পাম তেল বিক্রি করছি ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। অতিরিক্ত দাম রাখার প্রশ্নই ওঠে না। প্রতিড্রাম (১৮৬ কেজি) তেল কিনতে আমাদেরই বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে, এর সঙ্গে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা লাভ রেখে বিক্রি করছি আমরা।
এদিকে সরকার চলতি মাসে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়ার খবরে চালের বাজারে কিছুটা অস্থিরতা কমেছে। দাম ততটা না কমলেও নতুন করে আর বাড়েনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সপ্তাহের ব্যবধানে চালের বস্তায় (৫০ কেজি) দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমেছে। কেজিতে কমেছে এক থেকে দুই টাকা পর্যন্ত। তবে কারওয়ানবাজারের চাল বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে এখনো আমদানিকৃত চাল ওঠেনি। অপরদিকে বিভিন্ন জেলায় মিলগেটে দাম না বাড়লেও এখনো চড়া রয়েছে। গত সপ্তাহে পাইকারে দাম সামান্য কমেছে।
বাজারে সরু মিনিকেট চাল এখন ৬২ থেকে ৬৫ টাকা, নাজিরশাইল ৬০ থেকে ৬২ টাকা, মাঝারি চাল ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা এবং মোটা চাল মানভেদে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ানবাজারের চাটখিল রাইস এজেন্সির ব্যবসায়ী মো. বেলাল হোসেন বলেন, চালের আমদানি শুল্ক কমানোর খবরে চালের বাজারে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় দাম আর বাড়েনি। পাইকারিতে ও খুচরা দাম কিছুটা কমেছে। আমদানিকৃত চাল বাজারে ঢুকলে দাম আরও কমবে।
বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সবজি। এ ছাড়া নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। এদিকে ভারত ১ জানুয়ারি থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ এখনো খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজই বিক্রি করছেন। খুচরায় এ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত।
Leave a Reply