বহু আলোচনা-পর্যালোচনার পর দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে আজ শনিবার থেকে কোভিড ১৯-এর বিনামূল্যে গণটিকাকরণ কর্মসূচি শুরু করছে ভারত। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় দেশটির ৩০০৬টি কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে এ কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। প্রথম দিন প্রতিটি কেন্দ্রে ১০০ জনকে দেওয়া হবে টিকা। সব টিকাদান কেন্দ্রই যুক্ত থাকবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া টুডে, এনডিটিভিসহ ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম জানায়, কর্মসূচির প্রথম ধাপে কোভিড বিপর্যয়ে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করা ৩ লাখ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন রাজ্যে বিমানযোগে নির্ধারিত টিকা পৌঁছেও গেছে। ভারত সরকার দেশের মানুষের জন্য দুটি টিকাকে অনুমোদন দিয়েছে। একটি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা কোভিশিল্ড এবং ভারত বায়োটেকের তৈরি কো-ভ্যাকসিন। যার মধ্যে কোভিশিল্ড উৎপাদন করছে ভারতেরই কোম্পানি সেরাম ইনস্টিটিউট।
ভারতের টিকাসংক্রান্ত টাস্কফোর্সের প্রধান ভিকে পল বলেছেন, এখন আমরা কোভিশিল্ড এবং কো-ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলেও আরও দুটি টিকা মার্কিন কোম্পানি ফাইজার ও রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি জরুরিভাবে প্রয়োগের জন্য অনুমতি চেয়েছি সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশনের কাছে। কিন্তু এখনো সে অনুমোদন পাওয়া যায়নি।কারণ ফাইজারের টিকা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু ভারতের সেই পরিকাঠামো নেই।
টিকাকরণ শুরু করার আগে এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি নির্দেশিকাও প্রকাশ করেছে ভারত সরকার। আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, টিকা গ্রহণকালে কী কী করা যাবে, আর কী নয়। যেমন- টিকাগ্রহীতাকে অবশ্যই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এর দুটি ডোজ গ্রহণ করতে হবে। শুরুতেই এ টিকা দেওয়া হবে ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের। তবে অন্তঃসত্ত্বা বা যারা গর্ভধারণ নিয়ে খুব একটা নিশ্চিত নন এবং যেসব মা শিশুদের বুকের দুধ পান করান- তারা টিকা নিতে পারবেন না। আবার একজন ব্যক্তিকে শুধু নির্ধারিত একটি কোম্পানিরই টিকা গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি টিকার প্রথম ডোজ যে সংস্থার নেবেন, দ্বিতীয় ডোজটিও ওই সংস্থারই নিতে হবে। যদি কেউ অন্য রোগের জন্য এর মধ্যে টিকা নিয়ে থাকেন, তা হলে সেটির সঙ্গে কোভিড-১৯ টিকা নেওয়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান ১৪ দিন হতে হবে। এ ছাড়া করোনা পজিটিভ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, এমন ব্যক্তিরা সুস্থ হওয়ার ৪-৮ সপ্তাহ পর কোভিড ১৯-এর টিকা নিতে পারবেন। অসুস্থ অবস্থায় যাদের প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয়েছে, তারা টিকা নিতে পারবেন সুস্থ হওয়ার ৪-৮ সপ্তাহ পর। পাশাপাশি যারা কোনো রোগে আক্রান্ত বা হাসপাতালে ভর্তি, তারা সুস্থ হওয়ার ৪-৮ সপ্তাহ বাদে টিকা নিতে পারবেন। যারা হৃদরোগ, স্নায়ু, বা ফুসফুসজনিত রোগ বা এইআইভিতে আক্রান্ত, তারা নিতে পারবেন এই টিকা।
বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেও এদিন টিকাকরণ শুরু হচ্ছে। আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, এ রাজ্যে টিকাকরণের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, কোভিশিল্ড টিকার প্রতিটি ভায়ালে ১০টি করে ডোজ আছে। প্রত্যেক গ্রহীতাকে ইঞ্জেকশন মারফত ০.৫ মিলিলিটারের দুটি ডোজ দেওয়ার কথা। সবকিছু ঠিকঠাক চললে ৪-৬ সপ্তাহের ফারাকে প্রত্যেক গ্রহীতা দ্বিতীয় ডোজ পাবেন। সে কারণে পশ্চিমবঙ্গে আপাতত ৩৫ হাজার টিকা এসে পৌঁছেছে।
এদিকে আজ টিকাকরণ শুরু হলেও এ কার্যক্রম কতটুকু সুষ্ঠুভাবে এগোনো যাবে, তা নিয়েও ভারতে সংশয় দেখা দিয়েছে। বলা হচ্ছে, ১৩০ কোটি মানুষের দেশটি টিকাকরণ কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পদে পদে সমস্যায় পড়তে পারে। কারণ টিকা নিয়ে এখনো মানুষের মধ্যে রয়েছে বিভ্রান্তি, ভয় ও কুসংস্কার। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণায় বলছে, টিকা দেওয়ার জন্য প্রথম ধাপে নির্ধারিত চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের মোবাইল ফোনে এসএমএস যাবে। সেই নামের তালিকা ধরে দেওয়া হবে টিকা। তবে এসএমএস পাওয়া সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী-চিকিৎসকরা কি টিকা নিতে হাজির হবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারা। খোদ স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্র বলছে, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের একটি অংশে টিকা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অনেকেই প্রথম দফায় টিকা নিতে রাজি হচ্ছেন না। কেউ কেউ নানা অজুহাতে তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আরেকটি অংশ অবশ্য এ বিষয়ে উৎসাহী। দপ্তরের তরফে অবশ্য সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে তাতে কতটুকু কাজ হবে তা নিয়ে সন্দিহান তারা।
Leave a Reply